Gangrape

Gangrape: আতঙ্কে ভুগছে নির্যাতিতার গ্রাম

সাত বছরের ব্যবধানে ফের গণধর্ষণের ঘটনা গ্রামীণ হাওড়ায়। ফের অভিযুক্ত শাসক দলের নেতা-কর্মীরা।

Advertisement

নুরুল আবসারত ও সুব্রত জানা

বাগনান শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২১ ০৮:৫০
Share:

গণধর্ষণ কাণ্ডে ধৃত দু’জনকে উলুবেড়িয়া আদালতে তোলা হচ্ছে। ছবি: সুব্রত জানা।

সাত বছরের ব্যবধানে ফের গণধর্ষণের ঘটনা গ্রামীণ হাওড়ায়। আমতার মুক্তিরচকের পরে এ বার বাগনানের একটি গ্রামে। ফের অভিযুক্ত শাসক দলের নেতা-কর্মীরা। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন হলেও সাধারণ মানুষের আতঙ্ক বাড়ছে।

Advertisement

২০১৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি আমতার মুক্তিরচক গ্রামে এক মহিলা ও তাঁর জেঠশাশুড়িকে ধর্ষণের ঘটনায় নাম জড়িয়েছিল স্থানীয় ১০ জন তৃণমূল নেতা-কর্মীর। প্রত্যেককেই গ্রেফতার করে পুলিশ। আমতা আদালতে সেই মামলার শুনানি এখন শেষ পর্যায়ে। শনিবার গভীর রাতে বাগনানের গ্রামে বাক্শক্তিহীন অসুস্থ মহিলাকে ধর্ষণের ঘটনায় নাম জড়িয়েছে তৃণমূলের পাঁচ নেতা-কর্মীর। তবে, এ বার অন্যতম মূল অভিযুক্ত দেবাশিস রানা অনেক বেশি ওজনদার। তিনি আমতা কেন্দ্রের যুব তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক। আমতার তৃণমূল বিধায়ক সুকান্ত পালের ঘনিষ্ঠ বলেও পরিচিত।

মুক্তিরচকের মামলার সাজা ঘোষণা কবে হবে, কেউ জানেন না। নতুন মামলাটিও কতদিন ধরে চলবে তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে এলাকায়। পুলিশ আশ্বাস দিয়েছে, ঘটনায় যারা জড়িত, কাউকে ছাড়া হবে না। দু’জনকে ইতিমধ্যে গ্রেফতারও করা হয়েছে।

Advertisement

মুক্তিরচকের নির্যাতিতাদের পরিবারটি তখন ছিল সিপিএম সমর্থক। এখন তাঁরা গেরুয়া-শিবিরে। বাগনানের ক্ষেত্রেও নির্যাতিতার স্বামী বিজেপি কর্মী। বিধানসভা ভোটের ফল বেরনোর পর থেকেই তৃণমূল নানা ভাবে হুমকি দিচ্ছিল এবং শাসাচ্ছিল বলে তাঁর অভিযোগ। তাঁর বিজেপি করার ‘অপরাধে’ই স্ত্রীর উপরে এই অত্যাচার বলে মনে করছেন তিনি। তৃণমূল অভিযোগ মানেনি।

বাগনানের ওই অঞ্চলে আতঙ্ক রয়েছে যথেষ্ট। নির্যাতিতাদের বাড়ির পাশেই থাকেন তাঁর জা। তিনি বলেন, ‘‘শনিবার রাতে গোলমালের বিশেষ আওয়াজ পাইনি। হয়তো ও (নির্যাতিতা) গোঙাচ্ছিল। কিছু বোঝা যায়নি। ছেলেমেয়েদের নিয়ে থাকি। ভয় লাগছে। রাতবিরেতে এ ভাবে কেউ বাড়িতে চড়াও হতে পারে, ভাবতে পারছি না।’’ ওই এলাকার আর এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘দুষ্কৃতীরা অসুস্থ মহিলাদেরও ছাড়ছে না। ভোট তো অনেক দিন আগেই মিটে গিয়েছে। এখনও এত হিংসা কেন?’’

অভিযুক্তদের সবাইকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে বৃহত্তর আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছে বিজেপি। বিরোধী কংগ্রেস এবং সিপিএমও ঘটনার নিন্দায় সোচ্চার। বিজেপির মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রী তথা বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল বলেন, ‘‘আমরা ওই মহিলার ডিএনএ পরীক্ষার আর্জি নিয়ে আদালতে যাব।’’ আমতার প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মিত্র বলেন, ‘‘নিন্দা জানানোর ভাষা নেই।’’ তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি দাবি করেন তিনি। সিপিএমের জেলা সম্পাদক বিপ্লব মজুমদার বলেন, ‘‘নির্বাচনের ফল প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই রাজ্য জুড়ে এই ধরনের ঘটনা ঘটে চলেছে। বিশেষ করে মহিলাদের উপরে দাঁত-নখ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে শাসক দল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা।’’ এই ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনায় রাস্তায় নেমে বিরোধীরা প্রতিবাদ করবেন, সেই পথও শাসক দল বন্ধ করে রেখেছে বলে বিপ্লববাবুর অভিযোগ। তিনি বলেন, ‘‘বিরোধীরা রাস্তায় নামলেও তাদের বিরুদ্ধে বিপর্যয় মোকাবিলা আইন প্রয়োগ করে আটকে দেওয়া হবে। সাধারণ মানুষই বুঝুন, তাঁরা কাদের ক্ষমতায় এনেছেন।’’

তৃণমূল অবশ্য জানিয়েছে, আইন নিজের পথেই চলবে। জেলা (গ্রামীণ) তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি মন্ত্রী পুলক রায় বলেন, ‘‘দোষীদের কঠোর শাস্তি দাবি করছি। আমরা নির্যাতিতার পরিবারের পাশে আছি। দুষ্কৃতীদের কোনও রং হয় না। বিজেপি এই ঘটনাকে অনর্থক রাজনীতির মোড়ক দিতে চাইছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement