উলুবেড়িয়া ২ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি শেখ ইলিয়াস। মাঝে বর্তমান সভাপতি, বৌমা মালেকা খাতুন। পাশে সহ-সভাপতি চন্দনা মণ্ডল।
বৌমা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি। কার্যালয়ে তাঁর পাশে বসে শ্বশুর। সহ-সভাপতিও মহিলা। তাঁর পাশে স্বামী। শুক্রবারের এই ছবি দেখা গেল হাওড়ার উলুবেড়িয়া-২ পঞ্চায়েত সমিতির।
মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষিত হলেও পুরুষতন্ত্রের আড়াল থেকে নারীর বেরোনো কতটা কঠিন, তা নিয়ে চর্চা চলছে বিভিন্ন মহলে। পঞ্চায়েতে নিচুতলায় মহিলা জনপ্রতিনিধিদের ক্ষেত্রে তাঁদের নিকটাত্মীয়দের প্রভাব দেখলে মহিলা আসন সংরক্ষণ বিল কার্যকর হলেও রাজনীতিতে মহিলাদের ক্ষমতায়ন কতটা হবে, তা নিয়ে সংশয় ওঠে।
গোঘাট-২ ব্লকের কুমারগঞ্জ পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান আলপনা রায়কে ‘পুতুল করে রেখে’ দলের অঞ্চল সভাপতি সাদরুদ্দোজা ওরফে রাহুলের বিরুদ্ধে খবরদারির অভিযোগ তুলে শুক্রবার দুপুরেই বিক্ষোভ দেখান তৃণমূলের একাংশ। আলপনার বক্তব্য, ‘‘সবে পঞ্চায়েতে বসেছি। দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করতে হয়। কাজ শিখে গেলে নিশ্চিত ভাবেই ভাল-মন্দ বুঝতে পারব, নিজে সিদ্ধান্ত নিতে পারব।’’ রাহুলের দাবি, ‘‘পঞ্চায়েতের কাজের সঙ্গে আমার সম্পর্ক নেই। সরকারি সুযোগ-সুবিধা যাতে সঠিক উপভোক্তা পান, তা নিয়ে দলীয় স্তরে বার্তা দেওয়া হয়েছে।’’
খানাকুল-২ ব্লকের শাবলসিংপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান ঝর্না কোটালের সংশয়, ‘‘স্বাধীন ভাবে কতটা কাজ করতে পারব, জানি না। মহিলাদের প্রকৃত ক্ষমতায়ন কই? সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা না থাকলে সংরক্ষণের সুফল মেলা দুষ্কর।’’ তবে বিজেপি পরিচালিত খানাকুল-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রুম্পা মণ্ডলের অভিমত, ‘‘কাজের ইচ্ছা থাকলে স্বাধীনতা নিজেকেই অর্জন করে করে নিতে হবে। আমার কাজে যেমন আমার স্বামী হস্তক্ষেপ করেন না।’’
পঞ্চায়েত স্তরের আধিকারিকদের অনেকের অভিজ্ঞতা, আভ্যন্তরীন বৈঠকেও প্রধানের স্বামী, দলের নেতা ঢুকে মতামত চাপিয়ে দেন। অনেকেরই কাজের প্রতি আগ্রহ, দল-মত নির্বিশেষে পরিষেবা দেওয়ার প্রবণতা থাকলেও স্বামী বা দলীয় নেতার খবরদারির জন্য তা পারেন না।
বিরোধীদের অভিযোগ, বিগত বোর্ডে বলাগড় ব্লকের চরকৃষ্ণবাটি পঞ্চায়েতের মহিলা প্রধানের কাজকর্ম তাঁর স্বামীই দেখতেন। শ্রীপুর-বলাগড় পঞ্চায়েতের প্রধান ছিলেন শিক্ষা কেলেঙ্কারিতে ধৃত শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিকটাত্মীয়া। তাঁর স্বামী ওই পঞ্চায়েতেরই অস্থায়ী কর্মী। অভিযোগ, পঞ্চায়েতের ‘ব্যাটন’ থাকত তাঁর হাতেই। একই ছবি বিগত জিরাট পঞ্চায়েতে। তৃণমূল অভিযোগ মানেনি। শোনা যায়, আরামবাগের তৃণমূল সাংসদ অপরূপা পোদ্দারের স্বামী সাকির আলিও সাংসদের কাজে মাথা গলান। যদিও সাকিরের বক্তব্য, ‘‘সাংসদ পদ সাংবিধানিক। আমার নাক গলানোর অধিকারই নেই। কাজের ক্ষেত্রে আমরা মত বিনিয়ম করি মাত্র।’’
উলুবেড়িয়া-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মালেকা খাতুনের শ্বশুর বিগত বোর্ডে ওই পদে ছিলেন। এ বার ভোটে দাঁড়াননি। তিনি বৌমার পাশে বসে কাজের তদারকি করছেন দেখা গেল। বিডিওর ঘরেও আনাগোনা। ইলিয়াসের বক্তব্য, ‘‘বৌমা নতুন সভাপতি হয়েছেন। তাই ওঁকে কাজ বুঝিয়ে দিতেই প্রতি দিন আসতে হচ্ছে।’’ একই বক্তব্য সহ-সভাপতি চন্দনা মণ্ডলের স্বামী গৌর মণ্ডলের।
স্থানীয় বিজেপি নেতা চিরন বেরা, কংগ্রেস নেতা মানস বারিকের অভিযোগ, ‘‘যেখানে পঞ্চায়েতের প্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মহিলা, তাঁদের স্বামী বা পুরুষ আত্মীয় কোনও কারণে ভোটে লড়তে পারেনি, স্ত্রী বা আত্মীয়ার মাধ্যমে তাঁরাই কাজ সামলাচ্ছেন। লুটেপুটে খাওয়ার সুবিধার জন্যই এই বন্দোবস্ত।’’