আরজি কর-কাণ্ডে দোষীদের শাস্তির দাবিতে তৃণমূলের পদযাত্রায় রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার প্রেক্ষিতে তাঁর একটি ভিডিয়ো নিয়ে কটাক্ষ করেছেন বিরোধীরা। হুগলির তারকা সাংসদ রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চোখে জল নিয়ে খোঁচা দেন বাম নেত্রী দীপ্সিতা ধর থেকে প্রাক্তন সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। শনিবার আরজি করের ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবিতে পদযাত্রায় নেমে তা নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিলেন রচনা। পাশাপাশি, শাঁখ বাজানো নিয়ে অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের কটাক্ষ হওয়া নিয়েও প্রতিবাদ করলেন ‘দিদি নম্বর ওয়ান’। রচনার দাবি, তিনি অভিনেত্রী। তাই বেশিই অনুভূতিশীল। আরজি করের ঘটনা তাঁর চোখে জল এনে দিয়েছে। তার জন্য গ্লিসারিন লাগেনি।
আরজি করের ঘটনার ছ’দিন পর হুগলির সাংসদ রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে দেন। যুবতী চিকিৎসকের মৃত্যুর প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে তাঁর চোখে জল চলে আসে। যা নিয়ে দীপ্সিতার খোঁচা, ‘‘সাংসদ হওয়ার আগে শুধু ধোঁয়া দেখতেন উনি। এখন গ্লিসারিন দিয়ে চোখে জল আনছেন।’’ শনিবার তার জবাবে রচনা বলেন, ‘‘দুর্ভাগ্যজনক একটা ঘটনা ঘটেছে। নিন্দনীয় ঘটনা। সেটায় রাজনীতির রং লাগানো হচ্ছে। সবথেকে অন্যায় করছে বিজেপি এবং সিপিএম। তারা উঠেপড়ে লেগেছে। কে কী করছে, সে দিকে নজর দিচ্ছে।’’ তৃণমূল সাংসদের সংযোজন, ‘‘সেটা না করে আমরা যদি সুবিচারের কথা বলি, মেয়েটির মা-বাবার পাশে গিয়ে দাঁড়াই, তা হলে ভাল হবে। তা না করে রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় চোখের জল ফেলল কি না, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত শঙ্খ বাজাল কি না, এগুলো নিয়ে সমালোচনা করবেন না। এগুলো আপনাদের শোভা পায় না। আপনারা যাঁরা রাজনীতি করেন, মঞ্চে দাঁড়িয়ে বড় বড় বক্তৃতা করেন, আমাদের মতো শিল্পীদের সমালোচনা করেন, কারণ আপনাদের চোখের জল পড়ছে না। আপনারা শুধু গলাবাজি করছেন। কিন্তু, গলাবাজি করে সুবিচার পাওয়া যায় না। সুবিচার পেতে গেলে অন্যায়ের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হয়। কোন শিল্পী কী করছে, সেটা দেখা আপনাদের কাজ নয়। দয়া করে এটা করবেন না।’’
হুগলির গুড়াপে একটি স্কুলের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যান হুগলি সাংসদ। তার পর চুঁচুড়ায় তৃণমূলের প্রতিবাদ মিছিলে যোগ দেন। সেখান থেকে বলেন, ‘‘আমি তৃণমূলের সঙ্গে যাত্রা শুরু করার পর থেকেই ট্রোল্ড হচ্ছি। ওতে আমার কিছু যায়-আসে না। আর আমি যেটা বলেছি, যে ভিডিয়ো পোস্ট করেছিলাম, সেটা মন থেকে ফিল (অনুভব) করেছিলাম বলে পোস্ট করেছিলাম। আমি একজন শিল্পী। মানুষ অনেক রকম ভাবেন। ট্রোল করেন। চোখের জলকে ভাবেন গ্লিসারিন দিয়ে কান্না।’’ পাশাপাশি, চিকিৎসকদের কর্মবিরতি প্রসঙ্গে মন্তব্য করেন রচনা। তিনি জানান, প্রচুর ফোন পাচ্ছেন। ডাক্তার দেখাতে পারছেন না বলে সবাই সাহায্য চাইছেন। তৃণমূল সাংসদ বলেন, ‘‘আমি ঠাকুরকে প্রণাম করি। তার পরেই ডাক্তারদের। কারণ, আমরা মনে করি, ডাক্তারদের হাতে মানুষের জীবন। তাই করজোড়ে ডাক্তারদের কাছে আবেদন করছি, হাজার হাজার রোগী রয়েছেন, তাদের পরিষেবা দিন। পাশে দাঁড়ান।’’
অন্য দিকে, আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে পথে নেমে দোষীদের ফাঁসি চাইলেন শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। শ্রীরামপুর নগার মোড় থেকে মাহেশ স্নানপিরির মাঠ পর্যন্ত তৃণমূলের প্রতিবাদ মিছিলে পা মেলান কল্যাণ, শ্রীরামপুরের বিধায়ক সুদীপ্ত রায়, হুগলি তৃণমূলের সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অরিন্দম গুঁইরা। সেখানে কল্যাণের মন্তব্য, ‘‘রাম-বামের এলিট মহিলারা লক্ষ্মীর ভান্ডার বন্ধ করতে চাইছেন। আইএমএ (চিকিৎসকদের সংগঠন) বিজেপি দ্বারা পরিচালিত। সিবিআই সিপিএম, বিজেপির দালালি করবে। বিচার বিলম্বিত হবে। কারণ, ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে শুনানি হবে না। সিবিআই কোর্টে হবে।’’