ভোট মিটতে প্রথম কুণালের সঙ্গেই দেখা করেন রাজীব। —ফাইল চিত্র।
মুকুল রায় ‘ঘরে’ ফিরতেই যেন আগল খুলে গিয়েছে। ভোটের আগে দলে দলে যাঁরা তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে গিয়েছিলেন, সকলেই এখন ঘাসফুলে জায়গা পেতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু ফিরতে চাইলেই যে ফেরা যায় না, সে কথা এ বার স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তিনি সাফ জানিয়েছেন, যাঁরা ফিরতে চাইছেন, তাঁদের ছাড়াই ভোটে জিতেছে দল। এখন তাঁদের ফেরত নিলে, ভোটে যাঁরা পরিশ্রম করলেন, তাঁদের সঙ্গে বঞ্চনা করা হয়। তাই তাঁদের সম্মান ক্ষুণ্ণ হয়, এমন কোনও পদক্ষেপই করবেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল নেত্রীও সম্প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, যাঁরা ফিরতে চাইছেন, তাঁদের সবাইকেই ফেরাবে না দল।
গত ১১ জুন সপুত্র মুকুল দলে ফেরার পরই বাড়িতে গিয়ে কুণালের সঙ্গে দেখা করেন ডোমজুড়ের প্রাক্তন বিধায়ক তথা অধুনা বিজেপি রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগে নেটমাধ্যমে মমতার নির্বাচিত সরকারের পক্ষে সওয়ালও করতে দেখা যায় তাঁকে। তাতেই তৃণমূলে রাজীবের প্রত্যাবর্তন নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। কুণালের ‘পৌরহিত্যেই’ গোটা বিষয়টি ঘটছে বলে জল্পনা শুরু হয়। কিন্তু রবিবার কোন্নগরের নবগ্রামে দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিতে গিয়ে সেই জল্পনা নস্যাৎ করে দেন কুণাল। তিনি বলেন, ‘‘অনেকেই ফিরতে চাইছেন। বলছেন, বিজেপি বাংলার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তাই বিজেপি-তে থাকতে চান না। কিন্তু তাঁদের ফেরা, না ফেরা, পুরোটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর নির্ভর করছে। কিন্তু দলনেত্রীর উপর আস্থা রেখে যাঁরা লড়াই করেছেন, তাঁদের ভাবাবেগে আঘাত লাগে, এমন কোনও কাজই করবে না তৃণমূল।’’
ভোটের ঠিক আগে আগে দলকে বিপদে ফেলে যাঁরা চলে গিয়েছিলেন, সুসময়ে তাঁদের প্রয়োজন নেই বলেও বুঝিয়ে দেন কুণাল। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিজেপি ক্ষমতায় আসছে ভেবে হুজুগে মেতেছিলেন অনেকে। দলে দলে বিজেপি-তে গিয়ে তৃণমূলের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করেন। দলের বিরুদ্ধে প্রচার করেন, প্রার্থীও হন। কিন্তু তাঁদের বাদ দিয়েই তৃণমূল জিতেছে। কে কাকে হোয়াটসঅ্যাপ করছেন, কে কাকে চিঠি দিচ্ছেন, কে কার সঙ্গে সৌজন্য বৈঠক করছেন, ফিরতে চেয়ে বিবৃতি দিচ্ছেন, সবের উপর নজর রয়েছে দলের। কিন্তু এ বার ভোটের লড়াইয়ে যাঁরা জান লড়িয়ে দিলেন, তাঁরা আহত হন, এমন কোনও পদক্ষেপ দল করবে না। সবাই জানেন, কারা দল ছেড়ে গিয়েছিলেন। কাদের বাদ দিতে দল জিতেছে। সকলকে বলব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর আস্থা রাখুন।’’
কুণালের সঙ্গে রাজীবের বৈঠক নিয়ে এর আগে প্রকাশ্যে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। সাফ জানিয়েছিলেন, এর দোরে, ওর দোরে গিয়ে লাভ নেই, যাঁরা চলে গিয়েছেন, তাঁদের আর দলে ফেরত নেওয়া হবে না। কুণাল যদিও সরাসরি কারও নাম নেননি। তবে চার্টার্ড বিমানে চেপে দিল্লিতে অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করে বিজেপি-তে যোগ দেওয়া রাজীবই তাঁর নিশানায় বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কারণ কটাক্ষের সুরে কুণাল বলেন, ‘‘ভোটের আগে যাঁরা বিজেপি-তে গিয়েছিলেন, কেউ আমাদের জিজ্ঞাসা করে যাননি। এখন বিজেপি-তে থাকতে চাইছেন না। তখন চার্টার্ড বিমানে গিয়েছিলেন। এখন টোটোয় চেপে ফিরতে চাইছেন।’’
উল্লেখ্য, কুণাল যখন রাজীবকে নিশানা করছেন বলে জল্পনা, সেই সময়ই বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানিয়েছেন, রাজীবের সঙ্গে কথা বলছেন তাঁরা। তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা চলছে। তবে শেষ পর্যন্ত রাজীব বিজেপি-তেই থেকে যান, নাকি তৃণমূলে ফেরার রাস্তা তৈরি করে ফেলেন, তা অবশ্য সময়ই বলবে।