রাজীবকে নিেয় সুর নরম দিলীপের! —ফাইল চিত্র।
বাইরে থেকে আসা নেতাদের আগে বিজেপি হতে হবে। তবেই দল তাদের সর্বতো ভাবে গ্রহণ করবে। ভোট মিটে যাওয়ার পর দলে নবীন-প্রবীণ দ্বন্দ্বের মাঝে এমনই মন্তব্য করেছিলেন তিনি। কিন্তু ভোটের আগে তৃণমূল থেকে আসা নেতারা ভোট মিটতেই যে ভাবে একে একে ‘ঘরমুখো’ হচ্ছেন, সেই পরিস্থিতিতে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে সুর নরম করলেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। রাজীবের সঙ্গে কথা চলছে, তাঁকে বোঝানো হচ্ছে বলে জানালেন তিনি।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে রবিবার উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জে জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে বিশেষ বৈঠক করেন তিনি। সেখানেই সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে অধুনা দলত্যাগী এবং আগামী দিনে দল ছাড়তে উৎসুক নেতাদের নিয়ে মুখ খোলেন দিলীপ। তিনি বলেন, ‘‘আমরা পরিশ্রম করে হিংসার বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলাম, তখন অনেকেই এসেছিলেন। সেইসময় তাঁরাও হয়ত গণতন্ত্রের হত্যা, হিংসা চাইছিলেন না। তাঁরাও হয়ত বিজেপি-র হাত ধরে বাংলায় পরিবর্তন আনতে চেয়েছিলেন। ভেবেছিলেন, মানুষের অধিকার ফিরবে, গণতন্ত্র ফিরবে বাংলায়। কিন্তু আমরা সরকার গড়তে পারিনি। বিরোধী হিসেবে রয়েছি। আগের চেয়ে আরও বেশি হিংসা হচ্ছে। তাতেই অনেকে মানিয়ে নিতে পারছেন না। তাই দল ছেড়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।’’
বিধানসভা নির্বাচনের আগে মূলত তৃণমূলের ‘হেভিওয়েট’ নেতাদের ভাঙিয়ে দলভারী করার অভিযোগ উঠেছিল বিজেপি-র বিরুদ্ধে। কিন্তু ভোট মিটতেই তার উলটপুরাণ শুরু হওয়ায় গেরুয়া নেতৃত্বের দূরদর্শিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে দলের অন্দরেই। পুরনো কর্মীদের বদলে ভোটের সময় যাঁদের বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল, তাঁরা একে একে নিজের রাস্তা দেখে নেওয়ায়, পুরনো কর্মীরাও নেতৃত্বের উপর চটে রয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। পুরনো কর্মীদের মনোবল ভেঙে যাওয়ায়, আখেরে দলেরই ক্ষতি হচ্ছে বলে মনে করছেন বিজেপির-ই একাংশ।
এ নিয়ে প্রশ্ন করলে দিলীপ বলেন, ‘‘দল ছেড়ে চলে যাওয়ার এই প্রবণতা সাময়িক। ভোটের আগে হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ মানুষ দলে এসেছিলেন। পরিস্থিতির কারণে কয়েক জন ছেড়ে যাচ্ছেন। আগামী দিনে হয়ত আরও দু’চার জন যাবেন। আমরা চেষ্টা করছি। সবাই তো সমান ভাবে লড়াই করতে পারেন না! বিজেপি লড়াই করেছে বলেই মানুষ ভোট দিয়ে বিরোধী আসেন বসিয়েছেন।’’
কিন্তু রাজীব, বর্ধমান পূর্বের সাংসদ সুনীল মণ্ডলের মতো আরও অনেকে, যাঁরা দলে থেকেই দলের সমালোচনায় সরব হয়েছেন, তাঁদের নিয়ে কী ভাবছে বিজেপি? দিলীপের বক্তব্য, ‘‘দলের কিছু নিয়ম-নীতি রয়েছে। অনেককেই সতর্ক করা হয়েছে। শোকজ করা হয়েছে অনেককে। অনেকে সাসপেন্ডও হয়েছেন। অসফলতার কারণে হতাশা থেকে এ সব করছেন ওঁরা। আমরা কথা বলছি সকলের সঙ্গে। বোঝানোর চেষ্টা করছি। রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে শোকজ করা হয়নি। ওঁর সঙ্গে কথাবার্তা চলছে। এই ধরনের বিষম পরিস্থিতিতে যাঁরা লড়াই করেননি, তাঁদের একটু কষ্ট হচ্ছে। চেষ্টা করছি মনের জোর বাড়ানোর।’’
উল্লেখ্য, নির্বাচন মেটার পর থেকেই কার্যত ‘বেসুরো’ রাজীব। ভোটপরবর্তী হিংসার অভিযোগ নিয়ে এবং রাষ্ট্রপতি শাসনের জারির দাবি নিয়ে বিজেপি নেতৃত্ব যখন সরব, সেইসময় জনগণের দ্বারা নির্বাচিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারেরই পক্ষ নেন তিনি। ১১ জুন সপুত্র মুকুল তৃণমূলে যাওয়ার পর দফায় দফায় কুণাল ঘোষ, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখাও করেছেন তিনি। এমনকি গোপনে মুকুলের সঙ্গেও তাঁর সাক্ষাৎ হয়েছে বলে খবর। তার মধ্যেই রাজীবকে নিয়ে দিলীপের এই মন্তব্য।