অব্যবস্থা: উপযুক্ত সময়ে পরিষ্কার করা হয়নি সাঁতরাগাছি ঝিল। এখনও আবর্জনা ফেলা হচ্ছে সেখানে। পড়ছে নিকাশির বর্জ্য-জল। ফলে কমেছে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
ডিসেম্বরের শেষ প্রায়। কিন্তু সাঁতরাগাছি ঝিলে আগের মতো পরিযায়ী পাখি কোথায়? পরিবেশকর্মী ও পক্ষীপ্রেমীদের অভিযোগ, এ বছর সময় মতো ঝিল পরিষ্কার করা হয়নি। এমনকি, পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মেনে দূষণ নিয়ন্ত্রণে ঝিলের চারপাশে নর্দমাও তৈরি হয়নি। এই সব কারণেই অন্যান্য বছর সাঁতরাগাছি ঝিলে এই সময়ে পরিযায়ী পাখির কলরব শোনা গেলেও এ বছরে তাদের সংখ্যা হাতে গোনা বলেই দাবি।
হাওড়ায় দক্ষিণ-পূর্ব রেলের সাঁতরাগাছি স্টেশনের ঠিক পাশেই এই ঝিল। এটি শুধু বড় জলাশয়ই নয়, বছরের পর বছর ধরে পরিযায়ী পাখিদের অন্যতম আস্তানাও। আলিপুর চিড়িয়াখানা এবং বটানিক্যাল গার্ডেন থেকে পরিযায়ী পাখিরা আজকাল মুখ ফিরিয়ে নিলেও প্রতি শীতেই এই ঝিলে তাদের সমাগম হয়। তবে গত কয়েক বছর ধরে সেই সংখ্যাটা কমতে কমতে প্রায় তলানিতে পৌঁছেছে। সাঁতরাগাছি ঝিলের বাস্তুতন্ত্রের পরিবর্তন তার প্রধান কারণ বলে ব্যাখ্যা করছেন পক্ষীপ্রেমীরা। সেই সঙ্গে পরিবেশ দূষণের কথাও জানান পরিবেশকর্মীরা। বাস্তুতন্ত্রের পরিবর্তনের ফলে পরিযায়ী পাখিদের খাওয়ার উপযুক্ত জলজ প্রাণী এবং উদ্ভিদের অভাব দেখা দিচ্ছে। খাবারের খোঁজে দূর থেকে আসা পরিযায়ী পাখির সংখ্যা তাই এত কমে যাচ্ছে বলে মনে করছেন পাখি গবেষকেরা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, প্রতি বছর পুজোর পরেই ঝিল পরিষ্কারের কাজ করত হাওড়া পুরসভা। এ বছর সেই সময়ে ওই কাজ হয়নি। যে মাসে পরিযায়ী পাখিতে ঝিল ভরে যায়, অর্থাৎ ডিসেম্বরেই পরিষ্কারের কাজ আরম্ভ হয়েছে। তা ছাড়া, ঝিলের জলে নিকাশি বর্জ্য ফেলা আজও বন্ধ হয়নি। বন্ধ হয়নি ঝিলের আশপাশে আবর্জনা ফেলাও। চার দিকে ঘুরলেই দেখা যাবে, যত্রতত্র পড়ে আবর্জনা। ঝিলের কিছুটা পরিষ্কার করে কচুরিপানা দিয়ে ছোট দ্বীপের মতো করে দিলেও এক-তৃতীয়াংশ এখনও ঢাকা কচুরিপানায়।
পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘৫০ বছর আগে আকাশপথ থেকে ঝিলের জল নীল রঙের দেখা যেত। এখন কালো দেখায়। তীব্র দূষণে ঝিলের বাস্তুতন্ত্র নষ্ট হয়েছে। মানুষের সচেতনতা এবং সরকার বা প্রশাসনের সক্রিয়তা, এই দুয়ের মেলবন্ধন না ঘটলে সাঁতরাগাছি ঝিলকে বাঁচানো যাবে না এবং পাখিও আসবে না।’’ স্থানীয় বাসিন্দা চৈতালি বসাক বলেন, ‘‘আগে দেখতাম ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি বাড়ির সামনের এই ঝিলে আসত। খুব ভাল লাগত। এ বার হয়তো দেরিতে পরিষ্কার করার জন্যই পাখি আসেনি।’’
এলাকার অন্য এক বাসিন্দা ও পক্ষীপ্রেমী গৌতম পাত্র বলছেন, ‘‘২০১৬ সালের পর ঝিলটির বাস্তুতন্ত্র একেবারে বদলে গিয়েছে। ওই বছরই সুলতানপুর ঝিল বন্ধ হয়ে প্রোমোটিং হয়েছে। তাই এই ঝিলের নিকাশি ব্যবস্থা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আশপাশের বহুতলের নিকাশি বর্জ্য এখানে ফেলা হচ্ছে। ফলে পরিযায়ী পাখি আসাও কমছে।’’
দেরিতে সাফাইয়ের ব্যাখ্যা দিতে হাওড়া পুরসভার এক পদস্থ কর্তা বলছেন, ‘‘এ বছর বর্ষা দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে। বর্ষা থামার পরে একটি বেসরকারি সংস্থা কাজ শুরু করেছে। সাঁতরাগাছি ঝিলের দূষণ নিয়ন্ত্রণে পাশের ছোট ঝিলকে ঘিরে প্রাকৃতিক বর্জ্য নিষ্কাশন স্টেশন তৈরির কাজ শুরু করছে কেএমডিএ। ইতিমধ্যেই সংস্থা ওই কাজের বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট জমা দিয়েছে।’’