—প্রতীকী ছবি।
রাজ্যের মুখ্যসচিব পরিস্থিতির বাস্তবিক তথ্য সংগ্রহে ‘সম্পূর্ণ ব্যর্থ’। এমনকি, তাঁর অধীনস্থ সংস্থা নিজেদের দাবি মতো কাজ করেছে কি না, সে সম্পর্কেও তিনি ওয়াকিবহাল নন। সাঁতরাগাছি ঝিলের দূষণ সংক্রান্ত মামলায় রাজ্যের মুখ্যসচিবকে এমনই কড়া ভাষায় ভর্ৎসনা করল জাতীয় পরিবেশ আদালত। তবে শুধু রাজ্য নয়, সাঁতরাগাছি ঝিলের দূষণ মামলায় আদালতের ক্ষোভ থেকে রেহাই পায়নি রেলও।
এমন নয় যে, পরিবেশ সংক্রান্ত মামলায় এর আগে পরিবেশ আদালতের তোপের মুখে পড়েনি রাজ্য। কিন্তু মামলা সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে রাজ্যের মুখ্যসচিব ‘সম্পূর্ণ ব্যর্থ’— এমন কড়া ভাষার ব্যবহার কবে পরিবেশ আদালত করেছে, তা মনে করতে পারছেন না অনেকেই। রেলের আইনজীবী সম্পর্কেও আদালত মন্তব্য করেছে, ‘‘এটা দুঃখজনক ঘটনা যে, মামলা সম্পর্কিত ফাইল না পড়েই সংশ্লিষ্ট আইনজীবী আদালতে হাজির হয়েছেন!’’
ফলে সাঁতরাগাছি ঝিলের দূষণ কমানো নিয়ে গত সাত বছর ধরে রাজ্য ও রেলের মধ্যে যে ‘টানাপড়েন’ চলছে, তারই গোড়ায় পরিবেশ আদালত কুঠারাঘাত করেছে বলে মনে করছেন অনেকে। প্রসঙ্গত, ওই ঝিলের দূষণ কমাতে একযোগে কাজ করার জন্য গত অক্টোবরে রাজ্যের মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে এবং রেলের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল পরিবেশ আদালত। সেই কমিটির নভেম্বরে হওয়া প্রথম বৈঠকে একাধিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কিন্তু সে সব সিদ্ধান্তের বাস্তবায়িত হওয়া সম্পর্কে সংশয়ী আদালতের মন্তব্য—‘‘রাজ্যের মুখ্যসচিবের চেয়ারম্যানশিপের অধীনে একটি কমিটি গঠন করা হলেও এটা লক্ষণীয় যে, ঝিলের দূষণ কমানোর সঙ্গে যুক্ত সমস্ত পক্ষ পরস্পরবিরোধী মন্তব্য করছে এবং কাজের দায়িত্ব এক দফতর অন্য দফতরের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’’ যে মন্তব্যকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকে।
এক পরিবেশবিজ্ঞানীর কথায়, ‘‘রাজ্য-কেন্দ্র উভয় পক্ষই পরিবেশের স্বার্থ রক্ষার ব্যাপারে ব্যর্থ হওয়ায় এর আগে একাধিক বার জাতীয় পরিবেশ আদালতের ক্ষোভের মুখে পড়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের পরিপ্রেক্ষিতে শেষ কবে পরিবেশ আদালত রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাকে এ ভাবে ভর্ৎসনা করেছে, সেটা চট করে মনে করা যাচ্ছে না।’’ মামলার আবেদনকারী সুভাষ দত্ত বলছেন, ‘‘সাঁতরাগাছি ঝিলের মামলা গত সাত বছর ধরে চলছে। কিন্তু এখনও ঝিলের দূষণ নিয়ন্ত্রণে রাজ্য ও রেলের তরফে কোনও সদর্থক পদক্ষেপ করতে দেখা যায়নি। পরিবেশ আদালতের এই কড়া মন্তব্যের পরে দু’পক্ষের বোধোদয় হয় কি না, সেটাই এখন দেখার।’’
প্রসঙ্গত, নভেম্বরে মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে হওয়া কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, ঝিলে সরাসরি মেশা তরল বর্জ্যের দূষণ কমাতে প্রস্তাবিত নিকাশি পরিশোধন প্লান্ট (সুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট বা এসটিপি) তৈরির জন্য জমি দেবে রেল। প্লান্ট তৈরির প্রয়োজনীয় জমির জন্য নভেম্বরেই কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ) রেলের অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে আবেদন করেছে বলে ৩ ফেব্রুয়ারি হলফনামা দিয়ে আদালতকে জানায় রাজ্য। কিন্তু সেই আবেদনের পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ কী, তা কেন হলফনামায় উল্লেখ নেই, তাতেই উষ্মা প্রকাশ করে আদালত। আবার এ ক্ষেত্রে রেলের যা-যা দায়িত্ব ছিল, তা তারা পালন করেছে কি না, তারও কোনও উল্লেখ নেই বলে মন্তব্য করে আদালত। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের পর্যবেক্ষণ, মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হলেও তাঁর অধীনস্থ রাজ্য প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দফতর তো বটেই, এমনকি রেলের থেকেও এ ব্যাপারে তথ্য জোগাড়ে মুখ্যসচিব পুরোপুরি ব্যর্থ।
তাই আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে বর্তমান অবস্থান জানিয়ে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। পাশাপাশি, দক্ষিণ-পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে, এসটিপি-র জমির আবেদন নিয়ে তাদের সিদ্ধান্ত জানাতে।
এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে আগামী ১৮ মার্চ।