পান্ডুয়া মুজিবর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ধমকাচ্ছেন পান্ডুয়া ব্লক তৃণমূল সভাপতি সঞ্জয় ঘোষ। নিজস্ব চিত্র
পড়ুয়াদের সামনেই শিক্ষকদের ধমকাচ্ছেন এক তৃণমূল নেতা! শিক্ষকেরা চুপ।
এখানেই শেষ নয়, শনিবার সকালে জাঙ্গিপাড়া রাজবলহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষককে টেনে নিয়ে গিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠল ওই নেতার বিরুদ্ধে। ওই শিক্ষকদের ‘অপরাধ’, তাঁরা ধর্মঘটে শামিল হয়েছিলেন।
হুগলির পান্ডুয়া মুজিবর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের ছবিটাও অনেকটা একই। শুক্রবার কেন শিক্ষকরা আসেননি, সেই প্রশ্ন তুলে এখানে শিক্ষকদের ধমক দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। সঞ্জয় ঘোষ নামে ওই নেতা আবার পান্ডুয়া ব্লক তৃণমূলের সভাপতি।
শুক্রবার ধর্মঘটের সমর্থনে হুগলি বহু বিদ্যালয়ে গরহাজির ছিলেন শিক্ষকরা। তাঁদের মধ্যে কয়েক জনকে শনিবার এ ভাবেই অপদস্থ হতে হল শাসক দলের নেতাদের হাতে।
শনিবার সাড়ে এগারোটা নাগাদ ৪০-৫০ জন তৃণমূল কর্মী-সমর্থক রাজবলহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে চড়াও হয়। ধর্মঘটের দিন যে ২৪ জন শিক্ষক গরহাজির ছিলেন, তাঁদের ধমক দিতে শুরু করে তারা। এক শিক্ষকের কথায়, ‘‘প্রথমে শিক্ষকদের ঘরেই শাসানি চলছিল। এরপরই পাঁচ জন শিক্ষককে, শিক্ষিকাদের ঘরে নিয়ে গিয়ে মারধর করা হয়। ওই ঘরে সিসি ক্যামেরা নেই। ফলে মারধরের ফুটেজও নেই।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, শাসানির ফুটেজ ওই তৃণমূল কর্মীরা মুছে দেয়।
গুরুতর জখম অবস্থায় এক শিক্ষককে জাঙ্গিপাড়া গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে অবশ্য তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। রতন সাঁতরা নামে জখম এক শিক্ষকের কথায়, ‘‘এমন অপদস্থ কখনও হইনি। কী সম্মান নিয়ে পড়ুয়াদের সামনে দাঁড়াব!’’ তাঁরা পুলিশের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলেছেন। তৃণমূলের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
এ দিন ঘটনাস্থলে ছিল রাজবলহাটের তৃণমূল নেতা জয়দেব শীল। সে অভিযোগ মানেনি। তার দাবি, কথায়, ‘‘অভিভাবকদের একাংশ বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।’’ তাহলে এ দিন ওখানে কী করছিলেন? উত্তর মেলেনি। শুধু তাই নয়, তৃণমূলের অনেক কর্মীকেই তো এ দিন ঘটনাস্থলে দেখা গিয়েছে। সেখানে তারাই বা গেল কেন? প্রসঙ্গে এড়িয়ে জাঙ্গিপাড়া তৃণমূল ব্লক সভাপতি সাধন ঘোষের সাফাই, ‘‘ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই। কী হয়েছে, খোঁজ নেব।’’
শুক্রবার ধর্মঘটের সমর্থনে পান্ডুয়া মুজিবর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক-সহ ১৬ জন আসেননি। শনিবার বিদ্যালয়ে এসে ওই অনুপস্থিত শিক্ষকদের ধমক দেয় পান্ডুয়া ব্লক তৃণমূলের সভাপতি সঞ্জয় ঘোষ। তাছাড়া ওই শিক্ষকদের বিদ্যালয়ে ঢুকতেও সে বাধা দেয়। প্রধান শিক্ষক অয়ন বসু বলেন, ‘‘দেড় ঘণ্টা বিদ্যালয়ের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। একজন শিক্ষকের সম্মান কোন পর্যায়ে নেমেছে? পুলিশে বিষয়টা জানিয়েছি।’’ অভিযোগ উড়িয়ে সঞ্জয়ের দাবি, ‘‘জিজ্ঞাসা করেছি, কেন শিক্ষকরা আসেননি। পড়াশোনায় কত ক্ষতি হয়ে গেল!’’ কিন্তু শিক্ষকদের থেকে কৈফিয়ৎ তিনি কেন চেয়েছেন? উত্তর মেলেনি। পুলিশ জানিয়েছে, লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শুক্রবার অনুপস্থিতির কারণ জানতে চেয়ে বলাগড়ের মিলনগড় জিএসএফপি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠল অভিভাবকদের বিরুদ্ধে। বলাগড়ের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের আশ্বাসে তাঁদের বিদ্যালয়ে ঢুকতে দেওয়া হয়। পরিদর্শক গৌরব চক্রবর্তী বলেন, ‘‘গ্রামবাসীরা বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।’’
বিক্ষিপ্ত কয়েকটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অশান্তি থাকলেও শনিবার প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্তরের সমস্ত বিদ্যালয় যথাযথ চলেছে বলে হুগলি জেলা শিক্ষা দফতরের দাবি। স্থানীয় স্তরে বা শিক্ষকদের তরফেও তা স্বীকার করা হয়েছে। এ দিন জেলার সব বিদ্যালয়েই দুপুর দেড়টা নাগাদ ছুটি হয়ে যায়। কোথাও অতিরিক্ত পঠনপাঠন হয়নি। তবে জেলার প্রধান শিক্ষকদের সংগঠন ‘অ্যাডভান্স সোসাইটি ফর হেড মাস্টার্স এন্ড হেড মিস্ট্রেস’-এর অভিযোগ, শুক্রবারের ধর্মঘটে যে শিক্ষক-শিক্ষিকারা অনুপস্থিত ছিলেন, তাঁদের তথ্য চেয়ে পাঠানো হয়েছে শিক্ষা দফতর থেকে। সংগঠনের এক কর্মকর্তা বলেন, “ওই তথ্য এখনই আমরা দেব না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”