শ্রেণিকক্ষের জন্য ভবন তৈরির কাজ চলছে। নিজস্ব চিত্র
সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে তাঁরা বসে থাকতে রাজি নন। ছাত্রীদের জন্য বাড়তি শ্রেণিকক্ষ তৈরি করতে নিজেরাই হাল ধরলেন পাঁচলার গঙ্গাধরপুর বালিকা বিদ্যামন্দিরের শিক্ষিকারা। নিজেরাই চাঁদা তুলে শুরু করে দিয়েছেন ভবন নির্মাণের কাজ।
স্কুল সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। ভবনটি হবে চারতলা। নীচের তলায় থাকছে প্রেক্ষাগৃহ। বাকি তলগুলিতে শ্রেণিকক্ষ।
স্কুলটি তৈরি হয় ১৯৬৯ সালে। বর্তমানে ছাত্রীর সংখ্যা ৭০০-র বেশি। দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। পাঁচলা ব্লকের মধ্যে এটিই একমাত্র মেয়েদের স্কুল, যেখানে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান পড়ানো হয়। এ ছাড়াও, সার্বিক ভাবে বৃত্তিমূলক-সহ নানা বিষয় পড়ানো হয়। তূলনায় শ্রেণিকক্ষ কম। বিজ্ঞান বিভাগের ল্যাবরেটরিতে আরও যন্ত্রপাতি বসানোর দরকার। স্থানাভাবে তা-ও হয়নি।
অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষের জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। টাকা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে। কিন্তু তার আগেই শিক্ষিকারা মাঠে নেমে পড়েছেন। স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা তথা শিক্ষাবিদ সন্তোষকুমার দাস উদ্যোগে গত বছরের মাঝামাঝি শিক্ষিকাদের নিয়ে বৈঠক করেন। ঠিক হয়, সন্তোষবাবু নিজে বেশিরভাগ টাকা চাঁদা দেবেন। বাকি টাকা শিক্ষিকারা যেমন পারেন দেবেন।
গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর অবসর নেন স্কুলের তৎকালীন প্রধান শিক্ষিকা মমতা গুহঠাকুরতা। অবসরের পরেই তিনি তাঁর প্রভিডেন্ট ফান্ড টাকা থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা চাঁদা দেন। স্কুলের মোট শিক্ষিকা ২০ জন। সবাই সাধ্যমতো চাঁদা দেন। তার সঙ্গে যোগ হয় সন্তোষবাবুর এবং শিক্ষাকর্মীদের চাঁদাও। চলতি বছরের ২৮ মার্চ ভিতপুজো হয়। একতলার অনেকটা অংশ হয়ে গিয়েছে। মহালয়ার দিনে একতলার ছাদ ঢালাই করা হবে বলে জানান ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা শিপ্রা দাস।
সন্তোষবাবু বলেন, ‘‘এই স্কুল যখন প্রথম তৈরি হয়, তখনও আমি চাঁদা দিয়েছিলাম। শিক্ষিকারা এবং গ্রামবাসীরাও দিয়েছিলেন। পরে আমরা সরকারি সাহায্য পাই। এ বারেও আমাদের কাছে ছাত্রীদের প্রয়োজনটাই বড়। তাই সরকারি সাহায্য কবে আসবে তার পরোয়া করিনি। নিজেরাই মাঠে নেমে পড়েছি।’’ তিনি আরও জানান, প্রয়োজনমতো তাঁরা আবার চাঁদা দেবেন। গ্রামবাসীদের কাছেও আবেদন করবেন।
ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা বলেন, ‘‘সরকারি সহায়তা হয়তো আসবে। এলে উপকারই হবে। তবে আমরা থামব না।’’ নতুন ভবনের পরিকল্পনা যাঁর আমলে করা, সেই প্রাক্তন প্রধান শিক্ষিকা মমতাদেবী বলেন, ‘‘যা পরিকল্পনা করা আছে তাতে পুরো ভবন করার জন্য দরকার প্রায় এক কোটি টাকা। চাঁদা তুলেই সেটা করা হবে বলে ঠিক হয়েছে।’’