বাল্যবিবাহ রোধে অভিনয় করছেন শিক্ষক। —নিজস্ব চিত্র।
এ বার চন্দননগরে চলে এসেছেন ‘গোলাপ সুন্দরী’। চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোয় অষ্টমীর বিশেষ আকর্ষণ এ বার তিনিই।
আরামবাগের হেলানের বাসিন্দা খানাকুলের মাজপুর প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবাশিস মুখোপাধ্যায়। গত কয়েক বছর ধরে তিনি নিরলস প্রচার করে চলেছেন বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে। মেয়েদের পোশাক পরে পায়ে ঘুঙুর বেঁধে নেচে নেচে ছড়া কেটে মানুষকে সচেতন করেন এই শিক্ষক। এই ‘অভিনয়’-এর সময় নিজেই একটা চরিত্র হয়ে ওঠেন তিনি। সেই চরিত্রের নাম দিয়েছেন ‘গোলাপ সুন্দরী’।
কয়েক দিন আগে তারাপীঠে তাঁকে দেখা গিয়েছে পথে ঘুরে ঘুরে হাতে ব্যানার নিয়ে প্রচার করতে। নিজের স্কুল কিংবা জেলা ছাড়িয়ে ভিন্রাজ্যেও বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে প্রচার করতে চান এই শিক্ষক।
বেশ কিছু জায়গায় ‘অভিনয়’ করেছেন। কিন্তু চন্দননগরে কোনও দিন আসা হয়নি দেবাশিসের। চন্দননগরের জগদ্ধাত্রীপুজো দেখতে দূর-দুরান্ত থেকে ভিড় করেন মানুষ। এই ভিড়ের মধ্যে গণসচেতনতামূলক প্রচারটা সেরে ফেলতে চান তিনি।
বাল্যবিবাহ এই সমাজের বহু পুরনো ব্যাধি। আইন থেকে রাজ্য সরকারের ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্প, এত সব থাকা সত্ত্বেও নাবালিকাদের পড়াশোনা বন্ধ করিয়ে দিয়ে ঘরসংসার করতে পাঠানো এখনও একেবারে বন্ধ করা যায়নি। দেবাশিসের কথায়, ‘‘মেয়েদের বয়স আঠারো এবং ছেলেদের বয়স একুশ বছর না হলে বিয়ে দেওয়া উচিত না। সেটা সবার জানা। কিন্তু মানেন না অনেকেই। আর সেই না মানার ফল অপুষ্টিতে জন্মানো শিশু এবং সমাজে অশিক্ষার বাড়বাড়ন্ত। চাইল্ড লাইন প্রশাসনের তৎপরতা থাকলেও নাবালিকাদের বিয়ে রুখতে চাই সচেতনতা। সেটাই করে চলেছেন ‘গোলাপ সুন্দরী’ দেবাশিস।
চন্দননগর তালডাঙায় জগদ্ধাত্রীর আরতি চলছে, সেখানেই হাজির ‘গোলাপ সুন্দরী’। দর্শনার্থীরা ঠাকুর দেখার পর মজেছেন ‘গোলাপ সুন্দরী’র অভিনয়ে। নিজস্বীও তুলছেন কেউ কেউ। তালডাঙা থেকে বড় দিঘির ধার, পঞ্চাননতলা থেকে কালীতলা, সরিষাপাড়া গঞ্জের বাজার— চন্দননগরের বিভিন্ন জায়গায় বাল্য বিবাহের বিরুদ্ধে প্রচার চালাচ্ছেন ‘গোলাপ সুন্দরী’ শিক্ষক।