(বাঁ দিক থেকে) অনিতা মণ্ডল, ছেলে সোমনাথ মণ্ডল এবং শিক্ষিকা শুভ্রা ভট্টাচার্য। — নিজস্ব চিত্র।
পথভোলা প্রৌঢ়াকে বাড়ি ফেরালেন স্কুল শিক্ষিকা। পুলিশ সূত্রে খবর, ১৩ দিন আগে নদিয়ায় নিজের বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন ৫৫ বছরের অনিতা মণ্ডল। সোমবার ভোরে তাঁকে হুগলির চুঁচুড়া মাঠের কাছে পড়ে থাকতে দেখে উদ্ধার করেন হুগলি বয়েজ ব্রাঞ্চ স্কুলের শিক্ষিকা শুভ্রা ভট্টাচার্য। তার পর তিনিই উদ্যোগ নিয়ে মহিলার বাড়ি খুঁজে বার করে যোগাযোগ করেন। পরে মহিলার পরিবারের লোকেরা এসে থানা থেকে তাঁকে বাড়ি নিয়ে যান।
সকালে চুঁচুড়া মাঠের ধারে এক প্রৌঢ়াকে নগ্ন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে স্কুল শিক্ষিকা শুভ্রা তাঁকে উদ্ধার করেন। মহিলাকে নতুন কাপড় কিনে পরিয়ে দেন। তার পর মহিলার কোথায় বাড়ি, কী নাম, ছেলে, মেয়ে, স্বামী আছেন কি না, তা জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকেন। মানসিক ভারসাম্যহীন প্রৌঢ়া জবাবে অসংলগ্ন কথাই বলছিলেন। তবে কথা শুনে শুভ্রারা জানতে পারেন, প্রৌঢ়ার বাড়ি নদিয়ার নবদ্বীপ থানার কালীনগর গ্রামে। নাম, অনিতা মণ্ডল।
প্রৌঢ়ার বাড়ির লোকেদের খোঁজ পেতে হ্যাম রেডিয়োর সাহায্য নেন শুভ্রা। হ্যাম রেডিয়ো সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস প্রৌঢ়ার বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন বাড়ির ঠিকানা এবং পরিবারে কে কে আছেন। শুভ্রারই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা এর পর চুঁচুড়া মহিলা থানায় নিয়ে যান প্রৌঢ়াকে। হ্যাম রেডিয়োর মাধ্যমে প্রৌঢ়ার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের চুঁচুড়ায় ডেকে পাঠানো হয়। মহিলার স্বামী কার্তিক মণ্ডল এবং ছেলে সোমনাথ সন্ধ্যার পর চুঁচুড়া মহিলা থানায় আসেন। তাঁরা জানান, ১৩ দিন আগে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন প্রৌঢ়া। নিখোঁজের খবর পাওয়ার পর প্রৌঢ়ার মায়েরও মৃত্যু হয়েছে। এর পর স্বামী, সন্তানের সঙ্গে বাড়ি ফিরে যান প্রৌঢ়া। পুজোর আগে হারিয়ে যাওয়া মাকে ফিরে পেয়ে খুশি ছেলে। স্ত্রীকে ফিরে পেয়ে খুশি স্বামীও।
জানা গিয়েছে, মানসিক ভারসাম্যহীন অনিতার দেখভাল করতেন তাঁর মা। ১৩ দিন আগে বাড়ি থেকে অনিতা উধাও হয়ে যাওয়ার শোকে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। অনিতার ছেলে সোমনাথ বলেন, ‘’১৩ দিন ধরে মাকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। এখান থেকে ফোন করে জানাল, মা এখানেই আছেন। আগেও এক বার মা এ ভাবেই আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিল। ওষুধের উপরেই থাকতে হয় মাকে। কয়েক দিন হল ওষুধও খাননি। তাই হয়তো বাড়াবাড়ি হয়েছে। মাকে ফিরে পেয়ে খুব ভাল লাগছে।’’ মহিলাকে ঘরে ফেরাতে পেরে খুশি শিক্ষিকা শুভ্রা। তিনি বলেন, ‘‘চুঁচুড়া মাঠের কাছে মহিলা পড়ে রয়েছেন খবর পেয়ে আমি সেখানে যাই। হ্যাম রেডিয়ো আমাদের খুবই সাহায্য করেছে। কিছু ক্ষণের মধ্যেই মহিলার বাড়ির খোঁজ তাঁরা এনে দেন। তত ক্ষণে মহিলাকে নিয়ে আমরা থানায় চলে এসেছি। সন্ধ্যায় পরিবারের লোকেরা এসে মহিলাকে নিয়ে গিয়েছেন। মানসিক ভারসাম্যহীন প্রৌঢ়াকে বাড়ি ফেরাতে পেরে আমি খুব খুশি।’’