আরামবাগে শুভেন্দু অধিকারী। —নিজস্ব চিত্র।
বামেদের ‘শংসাপত্র’ দিয়ে তৃণমূলকে বিঁধলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বললেন, বাম আমলেও ত্রাণ নিয়ে রাজনীতি হয়নি। গত শনিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আরামবাগ সফরের তিন দিন পর, মঙ্গলবার হুগলির প্লাবন বিধ্বস্ত আরামবাগে দাঁড়িয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ত্রাণ নিয়ে রাজনীতি করার অভিযোগ তুলেছেন শুভেন্দু। বিজেপি নেতার এই অভিযোগের পাল্টা জবাব দিয়েছে তৃণমূলও।
মঙ্গলবার বিকেলে আরামবাগে ত্রাণ দিতে যান শুভেন্দু। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘আরামবাগের চার বিধানসভার বহু মানুষ ত্রাণ থেকে বঞ্চিত। বিশেষ করে বিজেপি সমর্থকদের ত্রাণ দেওয়া থেকে নির্লজ্জ ভাবে বঞ্চিত করা হচ্ছে। তাঁদের জন্য এই ত্রাণ আমাদের নেতৃত্বের হাতে তুলে দেব। এতে ৬-৭ হাজার মানুষ উপকৃত হবেন।’’ এর পর বাম আমলের সঙ্গে তুলনা টেনে তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘‘বন্যা পরবর্তী পর্যায়ে মানুষের ত্রাণসামগ্রী প্রয়োজন হয়। কিন্তু ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে তৃণমূলের লোকজন সংকীর্ণ দলবাজি করছে। বামফ্রন্টের আমলে ত্রাণ বিলিতে এমন সংকীর্ণ রাজনীতি দেখিনি। আমি বামেদের আমলেও কাউন্সিলর ছিলাম, বিধায়ক ছিলাম, সাংসদ ছিলাম। তখনও বন্যা হয়েছে। তখন কিন্তু বাম সরকার ত্রাণ নিয়ে কোনও দলবাজি করেনি। সেই সময় নন্দীগ্রাম-সহ বিভিন্ন এলাকায় লড়াই করেছি। এখন তৃণমূল সরকার যে দলবাজি করছে তা বিগত দিনে কোনও সরকার করেনি।’’ তৃণমূলের ঘাটাল মাস্টার প্রকল্পে আরামবাগের নাম নেই বলেও অভিযোগ করেছেন শুভেন্দু।
গত শনিবার আরামবাগে প্লাবন পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে যান মুখ্যমন্ত্রী। হাওড়ার ডুমুরজলা স্টেডিয়াম থেকে কপ্টারে চড়ে আরামবাগ পৌঁছন তিনি। সেখান থেকে সড়কপথে মমতা যান কালীপুরে, জলমগ্ন পরিস্থিতি পরিদর্শনে। তার ৭২ ঘণ্টা বাদে সেই আরামবাগের মাটিতে পা রেখে মুখ্যমন্ত্রীর সফর নিয়ে কটাক্ষ করেছেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী শুকনো ডাঙায় দাঁড়িয়েছিলেন। হঠাৎ করে জলে নেমে জুতো ভেজান। ছবি তোলেন এবং চলে যান।’’ শুভেন্দুর অভিযোগ, ‘‘বর্ষার আগে কোনও প্রস্তুতি বৈঠক করেনি সেচ দফতর। ৯ মে পর্যন্ত উনিই সেচ দফতরের দায়িত্বে ছিলেন। উনি ডিভিসি-কে দোষ দিচ্ছেন। কিন্তু ডিভিসি ৭২ ঘণ্টা আগে জল ছাড়ার কথা জেলাশাসকদের জানিয়েছিল। কিন্তু সরকার জনগণকে সতর্ক করেনি। মানুষকে নিচু এলাকা থেকে সরায়নি। এমনকি বাঁধ শক্ত করার কাজও করেনি অপদার্থ রাজ্য সরকার। বাঁধ ভাঙবে কেন? সরকার এক ঝুড়ি মাটি ফেলেনি।’’
শুভেন্দুর বক্তব্য নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে তৃণমূল। হুগলির জোড়াফুল শিবিরের নেতা স্নেহাশিস চক্রবর্তীর পাল্টা তোপ, ‘‘বিরোধী দলনেতার ইতিবাচক সমালোচনা করা উচিত। তার বদলে উনি কুৎসা করছেন। আজ উনি সিপিএমের ভক্ত সেজেছেন। আজ কিন্তু তৃণমূলের সরকার দেখিয়ে দিয়েছে কী ভাবে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে সকলের কাছে পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া যায়। কোনও বিজেপিশাসিত রাজ্যে এমন পরিষেবা আছে? উনি বিরোধী দলনেতা হয়ে ৫ পয়সাও তো আনতে পারেননি। বরং আজগুবি কথা বলছেন।’’