জলপথে যাতায়াত স্কুল ছাত্রছাত্রী থেকে সাধারন মানুষ। —নিজস্ব চিত্র।
জেটি খুলে নিয়ে গিয়েছেন বালি ব্যবসায়ী। অন্য জায়গা থেকে একটি জেটির ব্যবস্থা হয়েছে। অন্য পারে, জেটির জায়গায় বসানো হয়েছে একটি ভেসেল। এই অবস্থায় একটিমাত্র ভেসেলে পারাপার চলছে হুগলির তামলিপাড়া ও উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটির বৈষ্ণবঘাটের মধ্যে। ভোগান্তিতে পড়ছেন যাত্রীরা। প্রায় ন’মাস ধরে এমনই চলছে। অবিলম্বে আর একটি ভেসেলের দাবি তুলেছেন তাঁরা।
তিন বছর অন্তর ওই ফেরি পরিষেবার দায়িত্ব হাতবদল করে দুই জেলার সংশ্লিষ্ট দুই পুরসভা। ২০২২ সালের অগস্ট মাসে হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভার তরফে তিন বছরের জন্য ইজারা পান উত্তরপাড়ার বাসিন্দা সুদীপ্ত দে। ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’র মাধ্যমে সুদীপ্তের থেকে সেই দায়িত্ব পান চুঁচুড়ার বাসিন্দা বিজয় কাহার। মাসিক আড়াই লক্ষ টাকার বিনিময়ে তিনি ঘাট চালাচ্ছেন। বিজয়ের অভিযোগ, জেটি যে পুরসভার নয়, তা গোপন করেই ইজারা দেওয়া হয়। এখন সমস্যা সমাধানের জন্য বারবার জানানো হলেও পুর-কর্তৃপক্ষ কর্ণপাত করছেন না।
অভিযোগ উড়িয়ে পুরপ্রধান অমিত রায়ের দাবি, ‘‘সব কিছু জানিয়েই ইজারা দেওয়া হয়েছিল। তবে সাধারণ মানুষের কথা ভেবে সমস্যা সমাধানের জন্য পরিবহণ দফতরকে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে।’’
গত বছরের মার্চ মাসে বিজয় অভিযোগ তুলেছিলেন, পুরসভাকে ইজারার টাকা দেওয়ার পরেও জেটির জন্য আলাদা ভাড়া দিতে হচ্ছিল উত্তর ২৪ পরগনার এক বালি ব্যবসায়ীকে। এ বিষয়ে তিনি পুরপ্রধানের কাছে অভিযোগও জানিয়েছিলেন। তাতে কাজ হয়নি। পরে ভাড়া বাবদ মাসিক ৬০ হাজার টাকা দিতে অস্বীকার করায় গত বছরের এপ্রিল মাসে সেই বালি ব্যবসায়ী দু’দিকের জেটিই খুলে নিয়ে যান বলে বিজয়ের দাবি। তার জেরে কয়েক দিন পরিষেবা বন্ধ থাকার পরে অন্য এক জনের থেকে মাসিক ২০ হাজার টাকায় একটি জেটি ভাড়ায় আনেন বিজয়। সেটি তামলিপাড়া ঘাটে বসানো হয়। বৈষ্ণ ঘাটে জেটি হিসাবে একটি ভেসেল ভিড়িয়ে রাখা হয়। ফলে দু’টি ভেসেলের মধ্যে পারাপারের জন্য বরাদ্দ একটিই।
এই পরিস্থিতিতে একটি ঘাট থেকে ভেসেল ছেড়ে গেলে, ফিরে আসতে অনেক বেশি সময় লাগছে। সময় যাচ্ছে যাত্রীদের। বিশেষত সকাল-সন্ধ্যার ব্যস্ত সময়ে দুর্ভোগ বাড়ছে। গ্যাঁটের কড়ি দিয়ে টিকিট কিনেও উপযুক্ত পরিষেবা কেন মিলবে না, এই প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা।
এই ঘাট দিয়ে প্রতিদিন বহু মানুষ যাতায়াত করেন। বেশ কয়েকটি স্কুলের পড়ুয়াদেরও যাতায়াত করতে হয়। একটিমাত্র ভেসেল চলায় ভিড় হচ্ছে বেশি। বসার জায়গা পাচ্ছেন না সবাই। মালবিকা দে নামে এক অভিভাবকের খেদ, ‘‘ভেসেল ছাড়ার সময়ের কোনও বালাই নেই। একটা ভেসেলে তা থাকবেই বা কী করে! ভেসেল ছেড়ে গেলে আধ ঘণ্টা-চল্লিশ মিনিট দাঁড়াতে হচ্ছে তার ফেরার অপেক্ষায়। ভিড়ও হচ্ছে বেশি। মাঝেমধ্যেই স্কুল কামাই হয়ে যাচ্ছে।’’