লেলিহান: ভয়াবহ আগুনে পুড়ছে মোটরবাইক। আগুন লেগে গিয়েছে পাশে একটি বহুতলের ফ্ল্যাটেও। মঙ্গলবার। হাওড়ার নন্দীবাগান এলাকায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
ঘন বসতিপূর্ণ এলাকার একটি বহুতল আবাসনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত হয়ে গেল দু’টি ফ্ল্যাট ও ছ’টি মোটরবাইক। মঙ্গলবার ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়ার নন্দীবাগান এলাকার ভৈরব দত্ত লেনে। দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন দুপুর ২টো নাগাদ ছ’তলা ওই আবাসনের একতলার মিটার বক্সে আগুন লাগে। গোটা আবাসন জুড়ে বিদ্যুতের খোলা তার মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে থাকায় মুহূর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে দোতলার দু’টি ফ্ল্যাটে। এই ঘটনায় নন্দীবাগান এলাকায় তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে দমকলের পাঁচটি ইঞ্জিন আগুন নেভাতে ছুটে আসে। বিশাল পুলিশবাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন হাওড়া সিটি পুলিশের উপ-নগরপাল (উত্তর) বিশপ সরকার, সহকারী নগরপাল (উত্তর-১) আবদুল গফ্ফর-সহ পদস্থ পুলিশকর্তারা। দমকল পৌঁছতেই দেরিতে আসার অভিযোগ তুলে মারমুখী হয়ে ওঠেন এলাকার বাসিন্দারা। পুলিশ তাঁদের বুঝিয়ে শান্ত করে। প্রায় দু’ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে, এই ঘটনায় হতাহতের কোনও খবর নেই।
পুলিশ ও দমকল সূত্রের খবর, এ দিন সালকিয়ার কাছে জিটি রোডের নন্দীবাগান এলাকায় সঙ্কীর্ণ গলির মধ্যে একটি বহুতলের মিটার বক্সে আগুন লেগে যায়। ওই মিটার বক্স থেকে ঝুলে থাকা অজস্র খোলা তারের মাধ্যমে আগুন ছড়িয়ে পড়লে তা দ্রুত বিধ্বংসী আকার নেয়। আবাসনের নীচে থাকা কয়েকটি মোটরবাইকেও আগুন লেগে যায়। পুড়তে থাকে ছ’টি মোটরবাইক। এর মধ্যেই আগুনের শিখা লাফিয়ে দোতলার দু’টি ফ্ল্যাটে পৌঁছে যায়। আতঙ্কিত বাসিন্দারা কোনও মতে সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে প্রথমে ছুটে আসে দমকলের দু’টি ইঞ্জিন। পরে আরও তিনটি ইঞ্জিন এসে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। আসে হাওড়া সিটি পুলিশের পদস্থ কর্তা-সহ বিশাল পুলিশবাহিনী। তত ক্ষণে ওই আবাসনের সামনে কয়েকশো মানুষের ভিড় জমে গিয়েছে। দমকলের অভিযোগ, দেরিতে আসার অভিযোগ তুলে উপস্থিত জনতা মারমুখী হয়ে ওঠে। পুলিশ সকলের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখা যায়, ঘিঞ্জি এলাকার সঙ্কীর্ণ গলির মধ্যে মুখোমুখি তৈরি হয়েছে দু’টি বহুতল। দু’টি আবাসনেরই বাইরে ঝুলছে অজস্র খোলা বিদ্যুৎবাহী তার। দমকল জানিয়েছে, ছ’তলা আবাসনে ফ্ল্যাটের মোট সংখ্যা ৮৫। সেই সমস্ত ফ্ল্যাটেরই বিদ্যুতের লাইন গিয়েছে ওই ভাবে। দু’টি বহুতলের মধ্যে রয়েছে ২০ ফুটের একটি কমন প্যাসেজ। সেই প্যাসেজের শেষ প্রান্তে থাকা মিটার বক্স থেকেই আগুন ছড়িয়েছে বলে দমকল জানায়। পুড়ে ছাই হয়ে যায় প্যাসেজের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা ছ’টি মোটরবাইক। একই সঙ্গে পুড়ে যায় দোতলার দু’টি ফ্ল্যাট এবং ফ্ল্যাটের ভিতরে রাখা সমস্ত জিনিসপত্র।
একটি ফ্ল্যাটের বাসিন্দা পায়েল হানসি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘দমকল একটু আগে এলে আমাদের ফ্ল্যাটের কিছু জিনিসপত্র বাঁচানো যেত। সমস্ত পুড়ে শেষ হয়ে গিয়েছে।’’ হাওড়া দমকল কেন্দ্রের ওসি সোমনাথ প্রামাণিক বলেন, ‘‘আমরা খবর পেয়েই দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছই। দেরি করিনি একটুও। এত বড় আবাসন হলেও সেখানে আগুন নেভানোর কোনও রকম ব্যবস্থাই ছিল না। জলের রিজ়ার্ভারও নেই। ঠিক সময়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে ভয়াবহ কাণ্ড ঘটে যেতে পারত। তবে, এই ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।’’