আর সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে বসে থাকলেন না দুই জেলার বাস-মালিকেরা। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির দামের সঙ্গে পাল্লা দিতে নিজেরাই বাড়তি ভাড়া ঠিক করে বাস চালাচ্ছেন তাঁরা। এতে যাত্রী-বিক্ষোভও সে ভাবে সামনে আসেনি। বাড়তি ভাড়া গুনেই বাসে চড়ছেন সকলে।
বাসযাত্রীদের অনেকেই মানছেন, করোনার বিধিনিষেধের কড়াকড়ির সময় বাস না-চলার ফলে অটো বা ছোট গাড়িতে যাতায়াতে তাঁদের যে খরচ হচ্ছিল, বাসের বর্ধিত ভাড়া তার তুলনায় অনেক কম। জ্বালানির দাম যে ভাবে বেড়েছে, তাতে ভাড়া বাড়ানো ছাড়া মালিকদের উপায় ছিল না।
সরকার যে ভাবে প্রতিটি স্তরের ভিত্তিতে ভাড়া বাড়ায়, সেই একই নিয়মে মালিকেরা ভাড়া বাড়িয়েছেন। হাওড়ায় ভাড়া বেড়েছে ন্যূনতম দু’টাকা। তারপরে প্রতি স্তরে
২-৩ টাকা করে ভাড়া বেড়ে দাঁড়িয়েছে সর্বোচ্চ ৫ টাকায়। বর্ধিত ভাড়ার ভিত্তিতে টিকিট ছাপানো হয়েছে। কিছু বাসে বিজ্ঞপ্তিও সাঁটানো হয়েছে। তাতে লেখা, ‘জ্বালানি সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে বাস চালানোর জন্য যাত্রীদের সহযোগিতা কাম্য’।
হুগলির বেসরকারি বাস সংগঠন সূত্রের খবর, আপাতত ন্যূনতম দশ টাকা করে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। তার পরে বাসযাত্রীদের সঙ্গে সহমতের ভিত্তিতে বিভিন্ন স্তরে দু’-তিন টাকা করে বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। শ্রীরামপুর বাস-মালিক সংগঠনের সম্পাদক রঞ্জন প্রামাণিক বলেন, ‘‘আমরা চাইছিলাম, সরকার পরিস্থিতি বিবেচনা করে দ্রুত বাসভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিক। কিন্তু সিদ্ধান্তে দেরি হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বাসযাত্রীদের সমস্যার বিষয়টি মাথায় রেখে তাঁদের সঙ্গে সহমতের ভিত্তিতেই এখন বাস চলছে। এরপর সরকার যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবে।’’
ভাড়াবৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত নিয়ে হাওড়ার বাস-মালিকেরা প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে রাজি হননি। জেলা (গ্রামীণ) বাস-মালিক সংগঠনের সভাপতি অসিত পণ্ডিতও বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘ভাড়া বাড়ানো হয়েছে কিনা খোঁজ নিয়ে বলব।’’
জেলা প্রশাসনের এক পদস্থ আধিকারিক জানান, ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি কোনও তরফ থেকেই প্রশাসনকে জানানো হয়নি। যাত্রীদের কাছ থেকেও কোনও অভিযোগ আসেনি।
করোনা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল করে রাজ্য সরকার গত ১ জুলাই থেকে বাস চালানোর ছাড়পত্র দেয়। কিন্তু দুই জেলাতেই সে দিন থেকে সে ভাবে বাস চালাননি মালিকেরা। তাঁরা ভাড়াবৃদ্ধির দাবি তোলেন। তারপরেও কয়েকদিন সে ভাবে বাসের দেখা মেলেনি দুই জেলার রাস্তায়। ভাড়াবৃদ্ধির দাবি পূরণ না হওয়ায় কিছুদিন ধরে দেখা যাচ্ছে, দুই জেলার মালিকেরা নিজেদের মতো করে নতুন ভাড়া ধার্য করে বাস চালাচ্ছেন। তাতে রাস্তায় বেশি বাসের দেখাও মিলছে।
হুগলির বাস-মালিকেরা জানিয়েছেন, নতুন ব্যবস্থায় জেলায় ইতিমধ্যে ৬০-৭০% বাস রাস্তায় নেমেছে। আগামী সোমবার থেকে সব বাসই রাস্তায় নামানো যাবে বলে তাঁরা মনে করছেন। চুঁচুড়ায় বাস মালিক সংগঠনের সম্পাদক অজিত খান বলেন, ‘‘আমরা বাসকর্মীদের বলেছি, কোনও তর্ক-বিতর্কে না নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে সহমতের ভিত্তিতে ভাড়া নিয়ে বাস চালাতে।’’