dunlop

চর্চায় ফের ডানলপ, শ্রমিকেরা নিরুত্তাপ

পাঁচিলের গা বেয়ে লতাপাতা উঠেছে। তবে দেওয়ালের লেখাটা দিব্যি পড়া যায়— ‘ডানলপ— দ্য ফার্স্ট টায়ার ফ্যাক্টরি ইন ইন্ডিয়া’। দেশের প্রথম টায়ার কারখানা।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রকাশ পাল

সাহাগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:৫৭
Share:

বিজেপি নেতৃত্বের সভাস্থল পরিদর্শন (বাঁ দিকে)। মুখ্যমন্ত্রীর সভাস্থল খতিয়ে দেখতে পুলিশকর্তাদের সঙ্গে তৃণমূল নেতারা। ছবি: তাপস ঘোষ।

উঁচু পাঁচিলে দৃষ্টি আটকে যায়। গেট আছে। তবে, ঢোকার উপায় নেই। পরিত্যক্ত জানলায় চোখ রেখে যেটুকু দেখা যায়, ঝোপজঙ্গল আর নির্মাণের ধ্বংসাবশেষ। যেন ভুতুড়ে বাড়ি!

Advertisement

পাঁচিলের গা বেয়ে লতাপাতা উঠেছে। তবে দেওয়ালের লেখাটা দিব্যি পড়া যায়— ‘ডানলপ— দ্য ফার্স্ট টায়ার ফ্যাক্টরি ইন ইন্ডিয়া’। দেশের প্রথম টায়ার কারখানা।

হুগলির সাহাগঞ্জের এই কারখানার চাকা ঘোরেনি অনেক বছর। মাঝেমধ্যে প্রতিশ্রুতি শোনা গেলেও কাজের কাজ হয়নি। বেকার হয়েছেন শ্রমিক। অবসরের পরে পাওনাগণ্ডা মেলেনি অনেকের। একটা সময় পর্যন্ত ভোট এলে ডানলপ খোলার প্রতিশ্রুতি শোনা যেত বিভিন্ন দলের মুখে। এখন তা-ও যায় না। ফলে, শ্রমিকের অভিমান আর দীর্ঘশ্বাস দীর্ঘতর হয়েছে।

Advertisement

এই আবহে আগামী সোমবার ডানলপের মাঠে সভা করতে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ৪৮ ঘণ্টা পরে ওই মাঠেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও সভা হবে। এর মধ্যেই আবার বন্ধ কারখানাটির যন্ত্রপাতি-সহ অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাচ্ছে।

এ সব দেখে শুনে ক্লান্ত ডানলপের শ্রমিক মহল্লায় বিশেষ হেলদোল নেই। গত কয়েক বছরে তাঁরা কারখানা থেকে বহু যন্ত্রপাতি চুরি হয়ে যেতে দেখেছেন। ফলে, মোদী-মমতা কারখানা নতুন করে খোলার ঘোষণা করলেও তা আদৌ চালু করা সম্ভব কিনা, সে প্রশ্নও রয়েছে তাঁদের। অনেকে শুধু পাওনাগণ্ডাটুকু বুঝে নিতে চান। তা হলেই তাঁরা খুশি।

যেমন, দীপা সোয়াইন। তাঁর স্বামী ছিলেন ডানলপের শ্রমিক। দু’বছর আগে মারা গিয়েছেন। মহিলার আক্ষেপ, স্বামীর অবসরকালীন পাওনাগণ্ডা জোটেনি। দুই ছেলেকে নিয়ে অভাবের সংসার। লকডাউনের সময় ঘরের সামনে চায়ের দোকান খুলেছেন মহিলা। বিক্রিবাটা বিশেষ নেই। সভার প্রশ্নে বলেন, ‘‘আমাদের আর কী! এ ভাবেই চলবে। কারখানা খুললে তো ভালই। কিন্তু ওঁরা কী ভাবছেন, ওঁরাই জানেন।’’

রমেশ প্রসাদের দাদা এই কারখানার শ্রমিক। কারখানা বন্ধের পরে ভিন্ রাজ্যে বাড়িতে থাকেন। তাঁর দুই ছেলে, রমেশের পরিবার এখানে। রমেশ অন্য কারখানায় কাজ করেন। তাঁর কথায়, ‘‘এখানে সভা হচ্ছে যখন, ঘোষণা কিছু হতেও পারে। কিন্তু এত বছর ধরে তো কিছুই হল না। কতটা সম্ভব, জানি না।’’ আশপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা যুবকেরাও মনে করেন, ডানলপের চিমনি দিয়ে ধোঁয়া ওড়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তবে, তাঁরা চান এই চত্বরে শিল্প গড়ে উঠুক।

আগাছায় ঢাকা ডানলপ কারখানা। — নিজস্ব চিত্র।

কারখানার সিটু সংগঠনের সম্পাদক সার্বিক ঘোষ এখানকার শ্রমিক ছিলেন। তাঁর বক্তব্য, বাম আমলে ২০০১ থেকে টানা পাঁচ বছর ডানলপ বন্ধ ছিল। তার পরে সফল উৎপাদন হয়। অর্থাৎ যন্ত্রপাতি ঠিকই ছিল। কিন্তু তৃণমূলের জমানায় ১১ সালে কারখানা বন্ধের তিন বছর পরে যখন ফের খোলা হল, তখন দেখা গিয়েছে উৎপাদনের পরিস্থিতি নেই। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ছ’বছর আগে কেন্দ্রের সংসদীয় প্রতিনিধি দল উৎপাদন চালুর জন্য এখানে পরিদর্শনে এসেছিল। তাতেও কিছুই হয়নি। ডানলপ নিয়ে আলাদা কোনও আশ্বাস বিজেপি নেতৃত্বের মুখেও শোনা যায়নি।

মন্ত্রী তথা স্থানীয় বিধায়ক তপন দাশগুপ্তের দাবি, আদালতে মামলা চলায় কারখানা চালু করা যায়নি। তবে রাজ্য সরকার শ্রমিকদের ভাতা দিচ্ছে।

অনেকেই অবশ্য বলছেন, ভাতা নয়, খেটে রোজগার করতে চান। তা হলে এলাকার পঙ্গু আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি ফের উঠে দাঁড়াবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement