প্রতীকী ছবি।
প্রায় বছর তিনেক ধরে চিঠি চালাচালির পর অবশেষে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের নির্দেশ অনুযায়ী ১০০ দিন কাজ প্রকল্পে গরমিল হওয়া টাকা পুনরুদ্ধারের আদেশ জারি করল হুগলি জেলা প্রশাসন। ২০১৯ সালে কেন্দ্রীয় পরিদর্শনে গরমিল ধরা পড়া জেলার তিনটি ব্লকের মধ্যে পোলবা-দাদপুর এবং ধনেখালির বিডিওদের সেই সংক্রান্ত চিঠি পাঠিয়ে আজ, বুধবারের মধ্যে নির্দিষ্ট ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দিতে বলা হয়েছে। বাকি বলাগড় ব্লকে এখনও ওই সংক্রান্ত নির্দেশিকা যায়নি।
জেলা গ্রামোন্নয়ন দফতর সূ্ত্রে খবর, জেলার তিনটি ব্লক এলাকায় মোট সাতটি পঞ্চায়েত পরিদর্শনে প্রায় ৩ কোটি টাকার গরমিল ধরা পড়ে। সেগুলির মধ্যে আপাতত পোলবা-দাদপুর ব্লকের সাটিথান পঞ্চায়েতের একটি শ্মশানভূমি উন্নয়ন প্রকল্প খাতের ব্যয় ৭ লক্ষ ২ হাজার টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছে। একইভাবে ধনেখালি ব্লকের বেলমুড়ি পঞ্চায়েতের খেলার মাঠ সংলগ্ন নিকাশি খাল তৈরির নামে ব্যয় হওয়া ১০ লক্ষ ৫৯ হাজার টাকাও ফেরতের নির্দেশ
জারি হয়েছে।
‘প্রশাসনিক অভ্যন্তরীণ বিষয়’ হিসেবে উল্লেখ করে এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) নকুলচন্দ্র মাহাতো। একইভাবে নির্দেশিকা প্রাপ্তির কথা স্বীকার করলেও এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি ধনেখালির বিডিও সৌভিক ঘোষ।
২০১৯ সালের ২২ থেকে ২৪ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের পাঠানো পরিদর্শক দল হুগলি এবং পূর্ব বর্ধমানের মোট ৬টি ব্লকের ১৩টি পঞ্চায়েত এলাকায় ৬৩টি কাজ দেখে। হুগলির তিনটি ব্লক এলাকা থেকে প্রায় ৩ কোটি ৮ লক্ষর টাকার নয়ছয় ধরা পড়ে। ধনেখালির বেলমুড়িতে খেলার মাঠ সংলগ্ন নিকাশি নালা পরিদর্শনের পর কেন্দ্রীয় দলের রিপোর্ট ছিল, কাজের কোনও চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তাঁদের সুপারিশ ছিল, প্রকল্পের পুরো ১০ লক্ষ ৫৯ হাজার টাকাই পুনরুদ্ধার করা উচিত।
একই ভাবে পোলবা-দাদপুর শ্মশানের জন্য ভূমি উন্নয়ন সংক্রান্ত কাজ দেখার পর তাঁদের রিপোর্ট ছিল, জায়গায় শ্মশানের অস্তিত্বই ছিল না। সুপারিশ ছিল, প্রকল্পের পুরো ৭ লক্ষ ২ হাজার টাকাই পুনরুদ্ধার করা উচিত। দুটি ক্ষেত্রেই দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও
বলা হয়েছিল।
এরপরই কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক থেকে সংশ্লিষ্ট দুটি জেলার এই গরমিলের বিষয়ে জানিয়ে টাকা পুনরুদ্ধার, দোষী আধিকারিক বা কর্মীদের বিরুদ্ধে এফআইআর এবং বিভাগীয় পদক্ষেপের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল দফায় দফায়। অবশেষে জেলা প্রশাসন থেকে টাকা পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া শুরু করল।
এ দিকে শ্রমিকের অ্যাকাউন্টে ঢুকে যাওয়া টাকা পুনরুদ্ধার হবে কোন রাস্তায়, তা নিয়ে দিশেহারা প্রকল্পের ব্লক এবং পঞ্চায়েত আধিকারিকরা। পঞ্চায়েত স্তরে যাঁরা কাজটা করান সেই নির্মাণ সহায়কদের সংগঠন পঞ্চায়েত ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শুভ মণ্ডল বলেন, “পঞ্চায়েত থেকে উঠে আসা শ্রম বাজেট অনুসরণ না করে অনৈতিক ভাবে চাপ দিয়ে কাজ সৃষ্টি করানো হচ্ছে। টাকা শ্রমিকদের অ্যাকাউন্টে ঢুকে গেছে। আমরা বলে দিয়েছি, কর্মীদের কাউকে দায়ী করা যাবে না।’’