উলুবেড়িয়ার মাছ বাজারে ‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্পের কাজ চলছে। নিজস্ব চিত্র।
‘দুয়ারে সরকার’ শিবির চলছে। নাভিশ্বাস উঠছে হাওড়া জেলার বিভিন্ন ব্লক প্রশাসনের কর্তাদের। বাড়ছে চিন্তাও। শিবির আয়োজনের টাকা আসবে কবে? অন্যান্য প্রকল্পের কাজ প্রায় লাটে ওঠার জোগাড়! জনপ্রতিনিধিদের শিবিরে দাপানোই বা ঠেকানো যাচ্ছে কই!
এই এক প্রকল্পের জন্য সরকারি অন্য প্রকল্প এবং প্রাত্যহিক অনেক কাজ যে ঘেঁটে যাচ্ছে তা স্বীকার করছেন জেলার বেশিরভাগ ব্লক প্রশাসনের কর্তারাই। তাঁদের মূল চিন্তা, শিবির আয়োজনের টাকা নিয়ে। এ বাবদ নবান্ন থেকে এখনও একটি পয়সাও আসছে না বলে তাঁরা জানিয়েছেন। একাধিক বিডিও এ জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে বারবার আবেদন করছেন। জেলা প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তা টাকার সমস্যার কথা স্বীকার করে জানান, বিষয়টি নবান্নে জানানো হয়েছে। কিন্তু টাকা কবে আসবে, তিনিও সদুত্তর দিতে পারছেন না।
‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্পে এক-একটি পঞ্চায়েতে তিনটি করে মূল শিবির হচ্ছে। তার সঙ্গে প্রতিদিন হচ্ছে মিনি শিবির। এইসব শিবিরের জন্য প্যান্ডেল করা, কর্মীদের খাওয়া খরচ, বিদুতের বিল, ইন্টারনেটের বিল— সব মিলিয়ে বিপুল টাকা খরচ হচ্ছে।
টাকা আসছে কোথা থেকে?
বিভিন্ন ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, শিবিরের আয়োজন করতে বিডিও-রা শরণাপন্ন হচ্ছেন পঞ্চায়েত প্রধানদের। তাতে অনেক ক্ষেত্রে বিপত্তিও ঘটছে। শিবিরগুলিতে কোনও নেতা বা জনপ্রতিনিধিদের অনুপ্রবেশ ঘটবে না বলে নবান্ন থেকে জানিয়ে দেওয়া হলেও সেই নিষেধাজ্ঞা মানা যাচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিডিও বলেন, ‘‘নবান্নের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও শিবির আয়োজনের সুযোগ নিয়ে পঞ্চায়েত প্রধানেরা সেখানে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। আবার তাঁদের সূত্র ধরে শিবিরে হাজির হচ্ছেন শাসক দলের বিধায়ক-সহ বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধিরাও। আমরা বারণও করতে পারছি না। নিজেদের হাতে টাকা থাকলে এটা হতো না।’’ একই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন আরও কয়েকজন বিডিও।
প্রতিটি শিবিরে যেতে হচ্ছে ব্লকের সব প্রশাসনিক মাথাদের। ফলে, ব্লক অফিসগুলি কার্যত ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। এক বিডিও বলেন, ‘‘প্রতিটি অফিসের কিছু দৈনন্দিন স্থায়ী কাজ থাকে। সেগুলি আর হচ্ছে না।’’ আরও এক বিডিও বলেন, ‘‘দুয়ারে সরকারের শিবিরে জাতিগত শংসাপত্রের জন্য আবেদন জমা নেওয়া হচ্ছে। সেই আবেদন যাচাই করে শংসাপত্র দেওয়ার প্রক্রিয়াটি জটিল এবং সময়সাপেক্ষ। কিন্তু আধিকারিকদের সবাই যদি শিবিরে বসে থাকেন, তা হলে আর শংসাপত্র দেওয়ার প্রক্রিয়াটি দ্রুত সম্পন্ন হবে কী ভাবে?’’
ব্লক প্রশাসনের কর্তারা মানছেন, ‘দুয়ারে সরকার’-এর জন্য জেলায় সবচেয়ে বেশি মার খাচ্ছে ১০০ দিনের কাজ। এই কাজের ‘স্কিম’ তৈরি, তা অনুমোদন করা প্রভৃতির জন্য বেশ সময় লাগে। এইসব কাজ যাঁরা করবেন, তাঁরা দুয়ারে সরকারের শিবিরে বসে আছেন। ফলে, এই প্রকল্পের অনুমোদিত অনেক কাজ চালু করা যাচ্ছে না। চলতি আর্থিক বছরে প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রা আদৌ অর্জন করা যাবে কি না, তা নিয়েও সংশয় থাকছে।
জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, এখনই ১০০ দিনের প্রকল্পে বেশি কাজ করিয়ে নেওয়ার মরসুম। জবকার্ডধারীদের মজুরির টাকাও দ্রুত চলে আসছে। কিন্তু তা হচ্ছে না। তাঁর খেদ, ‘‘এই অনুকূল পরিস্থিতিতেও ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ প্রায় করাই যাচ্ছে না।’’ একাধিক বিডিও অবশ্য জানিয়েছেন, ‘দুয়ারে সরকার’ ধারণা হিসেবে ভাল। কিন্তু সফল করতে হলে যে পরিকাঠামো দরকার, তা পর্যাপ্ত নয়। শিবির আয়োজন করতে যে টাকা দরকার সেটা না পাওয়া একটা সমস্যা। বাঁকা পথে শিবির করতে গিয়ে সরকারি কাজে শাসক দলের জনপ্রতিনিধিদের অবাধ প্রবেশ এবং হস্তক্ষেপ আটকানো যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রেও সরকারের উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে।