অসমাপ্ত: স্তম্ভগুলো তৈরি হয়ে এখনও এ ভাবেই পড়ে আছে। ছবি: সুব্রত জানা।
প্রকল্প বাতিল হয়নি। অথচ, কেন্দ্রীয় বাজেটে একটি টাকাও বরাদ্দ হচ্ছে না বছরের পর বছর!
বাগনান-আমতা রেল প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। ১০ বছর আগে শিলান্যাস হয়েছিল। তারপর বাগনান স্টেশনে রেলের নিজের জমিতে কিছুটা মোরাম ফেলার কাজ হয়। বাগনানেই দামোদরে একটি সেতু তৈরির জন্য আটটি স্তম্ভও গড়া হয়। তারপর সব থমকে রয়েছে সেই ২০১২ সাল থেকে। এ বছরেও কেন্দ্রীয় বাজেটে ওই প্রকল্পের জন্য কোনও টাকা বরাদ্দ হয়নি। বিপাকে পড়েছেন প্রস্তাবিত রেলপথ লাগোয়া বাসিন্দারা। তাঁরা মনে করছেন, প্রকল্প স্তব্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁদের চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তার উপর কাগজপত্র সব ভূমি দফতরে চলে যাওয়ায় তাঁরা তাঁদের জমি কেনাবেচাও করতে পারছেন না। সেতুর জন্য দামোদরের পাড়ে স্তম্ভ তৈরি হওয়ায় অনেকের চাষাবাদও বন্ধ।
দক্ষিণ-পূর্ব রেল সূত্রের খবর, জমি-জটেই প্রকল্পটির কাজ থমকে গিয়েছে। জট না-মেটায় বাজেটে টাকা বরাদ্দ হচ্ছে না। তবে, রেলকর্তারা মানছেন, মাত্র ১৬ কিলোমিটারের ওই প্রস্তাবিত রেলপথের গুরুত্ব রয়েছে জরুরি প্রয়োজনে। তাঁদের একাংশের বক্তব্য, হাওড়া- খড়্গপুর বিভাগের আন্দুল থেকে কুলগাছিয়ার মধ্যে যদি কোনও কারণে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়, তা হলে বাগনান-আমতা রেলপথটিকে করিডর হিসাবে ব্যবহার করে খড়্গপুর পর্যন্ত জরুরি ভিত্তিতে ট্রেন চালানো যাবে।
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার জমির ব্যবস্থা করে দিলেই প্রকল্পের কাজে টাকা চলে আসবে। জমি না-পাওয়া পর্যন্ত কাজ শুরু করা যাবে না।’’ হাওড়া জেলা ভূমি দফতরের এক কর্তা জানান,
জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব নবান্নে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে কোনও নির্দেশ আসেনি।
’৮০-র দশকের গোড়ায় রেল বোর্ডে বাগনান-আমতা রেল প্রকল্প চালু করার প্রস্তাব জমা দেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী গনিখান চৌধুরী। বহু বছর সেই প্রস্তাব ঠান্ডা ঘরে পড়ে থাকার পরে ফের সেটিকে বাস্তবায়িত করতে উদ্যোগী হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রেলমন্ত্রী থাকাকালীন ২০১০ সালের ১০ জানুয়ারি আমতায় তিনি প্রকল্পটির শিলান্যাস করেন। রেল বোর্ড ১৯৪ কোটি টাকা অনুমোদন করে। সেই টাকাতেই কিছুটা কাজ হয়।
জমি নিয়ে অবশ্য প্রথম থেকেই প্রশ্ন উঠছিল। কারণ, প্রকল্পটির শিলান্যাস হয় জমি অধিগ্রহণ ছাড়াই। এই প্রকল্পে মোট দু’টি হল্ট স্টেশন হওয়ার কথা। জমির প্রয়োজন ১৬৮ একর। কিন্তু এক ছটাক জমিও অধিগ্রহণ করা যায়নি। প্রথমে ঠিক ছিল, রেল নিজে জমি অধিগ্রহণ করবে। রেলমন্ত্রী হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জমিদাতাদের চাকরির আশ্বাস দেন। জমিদাতাদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। দেখা যায়, ১৬৮ একর জমির জন্য মালিকানার কাগজপত্র নিয়ে দাবিদার প্রায় সাড়ে ৮০০ জন। শিলান্যাসের কয়েক মাসের মধ্যেই মমতা রেলমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেন। তারপর থেকেই প্রকল্পে জট পাকাতে শুরু করে। জমির মালিকদের দাবি-দাওয়া নিয়ে জেরবার হয়ে যান রেলের আধিকারিকেরা। চাকরির প্রতিশ্রুতিটি অমীমাংসিত রেখেই জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া থেকে সরে যায় রেল। সব কাগজপত্র তারা জমা করে জেলা ভূমি দফতরে। তখন থেকেই রেল দাবি করছে, জমি অধিগ্রহণ করে তাদের হাতে তুলে দিতে হবে রাজ্য সরকারকেই।