হাসপাতালে লাবণী গোস্বামী ও তাঁর মেয়ে। নিজস্ব চিত্র।
বেঁচে আছি! বিশ্বাসই হচ্ছে না। মঙ্গলবার রাত তখন ক’টা হবে? সাড়ে ১২টা-১টা। বাসে আমরা সবাই ঘুমোচ্ছিলাম। হঠাৎ একটি বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। কী হল? কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাসটি উল্টে গেল। বাসের মধ্যে আমাদের তখন ওলটপালট অবস্থা। পাশে আমার আট বছরের মেয়ে বসেছিল। ওকে বুকে জড়িয়ে চিৎকার করতে লাগলাম। মেয়ে হাতের যন্ত্রণায় ছটফট করছে। তখনও বুঝতে পারিনি আমারও শরীরে চোট লেগেছে।
তখন একটাই ভাবনা। কে বাঁচাবে আমাদের? চারদিকে অন্ধকার। কিছু দেখতে পাচ্ছি না। কে কোথায় আছি, বুঝতে পারছি না। স্বামীর সাড়াশব্দ নেই। চারদিকে গোঙানির শব্দ। মৃত্যু যেন হাতছানি দিচ্ছে!
বেশ কিছুক্ষণ বাদে পুলিশ এসে আমাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। পরে জানতে পারি, আমাদের বাসের ৬ জন মারা গিয়েছেন। কিন্তু কারা যে মারা গেলেন, সেটা জানি না। মেয়ের হাত ভেঙে গিয়েছে।
আমরা উদয়নারায়ণপুরের সুলতানপুরের বাসিন্দা। বেড়াতে যাওয়ার জন্য সারা বছর টাকা জমাতাম। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় দু’বছর পরে গ্রামের ৭২ জন একসঙ্গে বেরোলাম। আগেও কত বেড়িয়েছি। আনন্দ-হইহই করেছি। এ বার এ রকম দুর্ঘটনা ঘটবে ভাবতে পারিনি।
মঙ্গলবার বাস যখন ওড়িশার দারিংবাড়িতে থামল, তখনও অনেক আনন্দ হয়েছে। সবাই মিলে প্রচুর ছবি তুলেছি। সে দিন রাত আটটা নাগাদ বাস দারিংবাড়ি ছাড়ে। রাত ১০টা নাগাদ রাস্তায় কিছুক্ষণ বাসটি দাঁড়িয়েছিল। অনেকেই নেমেছি। তারপর সবাই উঠে পড়ি। কিছুক্ষণ পরে ঘুম। তারপর...।
ওই গোঙানি, ওই পরিস্থিতির কথা মনে পড়লেই আর স্থির থাকতে পারছি না। মেয়েকে বুকে জড়িয়ে কত যে কেঁদেছি! মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এলাম, এটা ভেবেই চোখের জল ধরে রাখতে পারছি না। হাসপাতালেই স্বামীর সঙ্গে দেখা হয়। আহতদের মধ্যে স্বামীও রয়েছে।
এখন ভাবছি, কতক্ষণে স্বামী-মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফিরব। ওড়িশা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের ফেরার জন্য একটি বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাড়ি ফিরে পরিজনদের সঙ্গে দেখা করলে তবেই শান্তি।
লেখক লাবণী গোস্বামী
(ওড়িশায় বাস দুর্ঘটনায় জখম পর্যটক)