পুড়ে ছাই ঝুপড়ি। প্রতীকী চিত্র।
ইদ উপলক্ষে মুম্বই রোডের পাশে হাওড়ার উলুবেড়িয়ার নিমদিঘি ফুটবল মাঠে মেলা বসেছে। শনিবার বিকেলে সেই মেলা প্রাঙ্গণের কাছেই আগুনে পুড়ে গেল অন্তত ৩৫টি ঝুপড়ি এবং মজুত করা প্রচর হোগলা। বিপাকে পড়লেন অন্তত ৪০০ ঝুপড়িবাসী। প্রশাসনের উদ্যোগে তাঁদের স্থানীয় একটি ক্লাব ও মাদ্রাসায় সরিয়ে আনা হয়। আতঙ্ক ছড়ায় মেলায় আসা লোকজনের মধ্যে।
ঘটনাস্থল থেকে উলুবেড়িয়া দমকলকেন্দ্র ঢিল ছোড়া দূরত্বে। তবে, দমকল আসতে দেড় ঘণ্টা সময় লাগে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, দমকল দেরিতে আসার জন্য আগুন বেশি ছড়ায়। দমকলের সাতটি ইঞ্জিন ঘণ্টা দুয়েকের চেষ্টায় আগুননিয়ন্ত্রণে আনে।
হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘এ দিন গ্রামীণ হাওড়ায় দুপুর থেকে তিন জায়গায় আগুন লাগে। সেই সব জায়গায় দমকলের ইঞ্জিন চলে গিয়েছিল। তাই আলমপুর ও হাওড়া থেকে দমকলের ইঞ্জিন আনতে হয় নিমদিঘিতে। সেই জন্য কিছুটা দেরি হয়।’’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই এলাকায় অন্তত ৭০টি ঝুপড়ি রয়েছে। ঝুপড়িবাসীদের অনেকে হোগলার কারবার করেন। বিকেল ৩টে ৪০ মিনিট নাগাদ প্রথমে মজুত করে রাখা সেই হোগলাতে কোনও ভাবে আগুন লাগে। খবর দেওয়া হয় দমকল ও পুলিশকে। হোগলার আগুন দ্রুত গ্রাস করে ঝুপড়িগুলিকে।
ঘটনাস্থলে যান হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশের বড়কর্তারা, উলুবেড়িয়ার মহকুমাশাসক শমীককুমার ঘোষ, বিডিও (উলুবেড়িয়া-১ ব্লক) নীলাদ্রিশেখর রায় ও উলুবেড়িয়া পুরসভার ভাইস-চেয়ারম্যান ইমানুর রহমান। তাঁদের সামনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির মহিলারা কান্নাকাটি করতে থাকেন।
গ্রামীণ হাওড়ায় এই নিয়ে ছ’মাসের মধ্যে বেশ কয়েকটি বড় অগ্নিকাণ্ড হল। সব ক্ষেত্রেই দমকলের দেরিতে পৌঁছনোর অভিযোগ শোনা গিয়েছে। চার দিন আগেই চেঙ্গাইল ল্যাডলো বাজারে আগুনে ভস্মীভূত হয় ১৫০টি দোকান। কোনওক্ষেত্রেই অবশ্য দেরিতে পৌঁছনোর অভিযোগ মানেননি দমকলকর্তারা।
হাওড়া গ্রামীণ জেলা সিপিএম নেতা সাবিরউদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘‘বাম আমলে উলুবেড়িয়া দমকলকেন্দ্র তৈরি করা হয়। সেই সময় যা পরিকাঠামো ছিল, তার চেয়ে কমতে শুরু করেছে। এই সরকারের আমলে পরিকাঠামোর কোনও উন্নতি হয়নি। তাই কোথাও আগুন লাগলে বেশি ভুগতে হচ্ছে।’’
এ কথা মানেননি উলুবেড়িয়া পুরসভার ভাইস-চেয়ারম্যান তৃণমূলের ইমানুর রহমান। তাঁর দাবি, ‘‘এ দিন আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গেই দমকলকে ফোন করা হয়েছিল। দুঃখের বিষয়, একসঙ্গে তিন জায়গায় আগুন লাগার জন্য দমকলের আসতে দেরি হয়। গৃহহীনদের আপাতত অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সমস্ত বিষয়টি সরকারের তরফ থেকে দেখভাল করা হচ্ছে। তাঁদের জন্য ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। গৃহহীনরা যাতে ফের নিজেদেরর জায়গায় ফিরতে পারেন, সেই চেষ্টা করা হচ্ছে।’’