খানাকুলের পলাশপাইতে বালি তোলা চলছে। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ
এতদিন শুধু মদতের অভিযোগ শোনা যাচ্ছিল। মঙ্গলবার খানাকুলের পলাশপাই গ্রাম সংলগ্ন মুণ্ডেশ্বরী নদী থেকে কয়েকজন তৃণমূল নেতাকে সরাসরি বালি ‘চুরি করে পাচারে’ তদারক করতে দেখে গ্রামবাসীরা পঞ্চায়েতকে জানিয়েছিলেন। পঞ্চায়েত কর্তারা এসে সেই ‘চুরি’ ভিডিয়ো করে প্রশাসনের নানা মহলে ফুটেজ জমা দেন। তারপরে ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও বুধবার বিকেল পর্যন্ত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা হল না।
খানাকুলের দু’টি ব্লকের কোনও নদী থেকেই বালি তোলার অনুমতি দেয়নি প্রশাসন। তা সত্ত্বেও, বেশ কিছু এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বেআইনি ভাবে বালি তোলা হচ্ছে বলে অভিযোগ। সেই কারবারে স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের একাংশ জড়িত, এমন অভিযোগও শোনা যায়।
পলাশপাই গ্রামটি খানাকুল-২ ব্লকের তৃণমূল পরিচালিত পলাশপাই-১ পঞ্চায়েত এলাকায় পড়ে। সেখানকার তৃণমূল নেতা মৃত্যুঞ্জয় পাছাল-সহ চার জনের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার বালি চুরির অভিযোগ তুলে গ্রামবাসীরা পঞ্চায়েতের দ্বারস্থ হয়। গ্রামবাসীদের মধ্যে শঙ্কর দোলুই এবং ইয়াকুব আলি বলেন, ‘‘মৃত্যুঞ্জয়বাবুরা দাঁড়িয়ে থেকে বালি চুরির মোচ্ছব চালাচ্ছেন। প্রতিবাদ করলে তাঁদের বালি তোলার অনুমতি আছে জানিয়ে চোখ রাঙাচ্ছেন। হাতের কাছে পঞ্চায়েতকে পেয়ে তাই পঞ্চায়েতকেই বলেছি।”
পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামবাসীদের অভিযোগ পেয়ে ওই দিনই উপপ্রধান, পঞ্চায়েতের সঞ্চালক, সদস্য এবং কয়েকজন তৃণমূল নেতা ঘটনাস্থলে গিয়ে ‘চুরি’র দৃশ্য ভিডিয়ো করে ব্লক প্রশাসন, পুলিশ, এবং ভূমি দফতরে পাঠিয়ে বিহিতের দাবি করেন। উপপ্রধান সৌমেন পাড়ুইয়ের অভিযোগ, ‘‘বালি চুরিতে গ্রামস্তরের দলীয় নেতাদের দেখা গিয়েছে। ভিডিয়ো করার সময় কয়েকজন সরে গিয়েছিলেন। এতে দলের আরও উপরের মাথা আছে বলে আমরা জেনেছি। বিষয়টা প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে জানিয়েছি।”
ওই পরিদর্শন দলে থাকা পঞ্চায়েতের সদস্য প্রতাপ বাগের অভিযোগ, “এখানে সবচেয়ে বেশি বালি তুলছেন দলেরই মৃত্যুঞ্জয় পাছাল। বাকিরা তাকে দেখেই উদ্বুদ্ধ হয়েছে।” পঞ্চায়েতের সঞ্চালক জাকির হোসেন চৌধুরী বলেন, “মৃত্যুঞ্জয়ের ভাই গৌর দলের অঞ্চল সভাপতি। গৌরের আপত্তি সত্ত্বেও মৃত্যুঞ্জয় বালি চুরি বন্ধ করেনি। আর ওই বিষয়টাই অন্যদের বালি চুরিতে উৎসাহ জুগিয়েছে।” দলের অঞ্চল নেতা দিব্যেন্দু সরখেলের দাবি, “গৌর প্রতিবাদই করতে পারছেন না। বালি চুরির সঙ্গে আমাদের দলের উপর স্তর, পুলিশ, প্রশাসন সবাই যুক্ত। এবং যুক্ত বলেই আমরা সরেজমিনে বালি চুরির ভিডিয়ো পাঠানোর পর ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও পুলিশ, ব্লক প্রশাসন এবং ব্লক ভূমি দফতর থেকে কেউ আসেনি।”
দাদা-সহ দলীয় নেতাদের বালি চুরি নিয়ে দলের অঞ্চল সভাপতি গৌর পাছালের বক্তব্য, “বালি চুরির আমি ঘোর বিরোধী। বিষয়টা নিয়ে পঞ্চায়েত তদারকি করছে। চোরের দলে যারাই থাকুক, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”
নিজের বিরুদ্ধে ওঠা বালি চুরির অভিযোগ নিয়ে মৃত্যুঞ্জয় আকাশ থেকে পড়েছেন! তাঁর কথায়, ‘‘কোথায়! কিসের বালি! ও সব আমি করিনি। আমাকে ভিডিয়োতে পেয়েছে কী?”
যাঁদের ছবি ভিডিয়োতে ধরা পড়েছে বলে পঞ্চায়েতের দাবি, তাঁদের মধ্যে তৃণমূল নেতা বিকাশ মৌরীর দাবি, “আমি ওখানে বালি তোলা দেখতে গিয়েছিলাম।’’ একই দাবি উৎপল দাস নামে অভিযুক্ত আর এক তৃণমূল নেতারও।
বেআইনি ভাবে বালি তোলার অভিযোগ নিয়ে যুগ্ম বিডিও অনীত নন্দী বলেন, “বিষয়টা ভূমি দফতর দেখছে।” পুলিশ জানায়, তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে কিছু দেখতে পায়নি। তবে, এতে কোনও রকম ভাবে যুক্ত থাকার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন পুলিশকর্তারা।