ত্রিবেণী কুম্ভমেলায় আসা সাধুসন্তেরা। —ফাইল চিত্র।
মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিকের জন্য প্রশাসন অনুমতি দেয়নি। তা সত্ত্বেও বছর ঘুরে সোমবার দুপুর থেকে ফের ত্রিবেণীতে কুম্ভমেলার আয়োজন হয়েছে। আজ, মঙ্গলবার সপ্তঋষি ঘাটে হবে ‘শাহি স্নান’। কিন্তু এ বারও শৌচাগার নিয়ে মেলায় অব্যবস্থার অভিযোগ তুলছেন সাধু-সন্ন্যাসীরা। দু'দিন আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সাধু-সন্ন্যাসীরা আসতে শুরু করেন। শৌচাগার না পেয়ে গঙ্গা পারেই শৌচকর্ম করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন। গত বছরও অব্যবস্থার একই অভিযোগ তুলেছিলেন তাঁরা।
কামাক্ষ্যা থেকে আসা সাধু চেতন গিরি নাগাবাবা এ দিন বলেন, ‘‘সকালে শৌচাগার খুঁজে পাইনি। তাই গঙ্গাপারে প্রাতঃকৃত্য সেরেছি।’’ বনগাঁ থেকে আসা সাধু রাজীব গিরির অভিযোগ, সাধুদের দিকেই নজর নেই কর্তৃপক্ষের। তিনি বলেন, ‘‘কোথায় কী আছে, কিছুই জানি না। সকালে প্রয়োজনীয় কর্মের জন্য তাই গঙ্গাপারে গিয়েছি।" আর এক সন্ন্যাসীর বক্তব্য, ‘পারের দিকে লোক ছিল। তাই জলে নেমেই শৌচকর্ম সেরেছি।’’
‘ত্রিবেণী কুম্ভ পরিচালনা সমিতি’ অবশ্য শৌচাগার না থাকার অভিযোগ মানেনি। সমিতির মুখ্য সংগঠক সাধন মুখোপাধ্যায়ের দাবি, মেলা চত্বরে অনেকগুলি জৈব শৌচাগারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কয়েকটি স্থায়ী শৌচাগারও রয়েছে। সব মিলিয়ে ৪০টি হবেই। এতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তা হলে, গঙ্গাপার কেন?
সাধনের জবাব, ‘‘হতে পারে সাধু-সন্ন্যাসীরা খুঁজে পাননি। তবে, স্বেচ্ছাসেবকদের বললেই দেখিয়ে দিতেন।’’ সমিতির সাথে সাধুদের সমন্বয়ের অভাব কিছুটা রয়েছে বলে মানছেন তিনি। প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘এ সব বিষয় পুরসভার দেখার কথা। এ ক্ষেত্রে কি হয়েছে, খোঁজ নেওয়া হবে।’’
বাঁশবেড়িয়ার উপ-পুরপ্রধান শিল্পী চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, পুরসভার কাছে জৈব শৌচাগার নেই, তা মেলা কমিটিকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কমিটিই তার ব্যবস্থা করবে বলে জানিয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘গঙ্গাপারে শৌচকর্ম মেনে নেওয়া যায় না। খোঁজখবর নেওয়া হবে।’’
এই পরিস্থিতিতে গঙ্গাদূষণ নিয়ে রীতিমতো ক্ষুব্ধ পরিবেশকর্মীরা। পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘দুর্ভাগ্যজনক। মেলায় আসার নিয়মাবলি সাধুদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া উচিত ছিল। এখানে মেলার নামে প্রকাশ্যে গঙ্গাদূষণ করা হচ্ছে। এটা প্রশাসনিক ব্যর্থতা। এক দিকে, ঘাটে ঘাটে গঙ্গাপুজো চলছে। অন্য দিকে, সেই পুজো-পার্বণের নামেই চলছে গঙ্গাদূষণ।’’ তাঁর সংযোজন, "সাধুরাই গঙ্গার শুদ্ধতা বজায়ে আরতি করেন। আর এখানে তাঁরাই গঙ্গাদূষণ করছেন। এটা সাধুদের দ্বিচারিতা। না হলে, শৌচাগারের কথা ওঁরাও (সাধু) কাউকে জিজ্ঞাসা করতে পারতেন।’’
মেলাকে ঘিরে এখন সাজো সাজো রব। প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। গত দু'বারের মতো এ বার ত্রিবেণী ফুটবল মাঠে সাধুদের বসার জায়গা করা হয়নি। হয়েছে গঙ্গাপারে পরিত্যক্ত উদ্বাস্তু শিবির প্রাঙ্গণে। সেখানে আগাছা ছেঁটে পরিষ্কার করা হয়েছে। মেলায় মেডিক্যাল ক্যাম্প করেছে পুরসভা ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
কথিত আছে, সাত শতক আগে এখানে কুম্ভমেলা হত। পরে বন্ধ হয়ে যায়। মাঘ মাসের শেষ দিন গঙ্গাস্নানকে উপলক্ষ্য করে ২০২২ সাল থেকে ফের এই মেলা হচ্ছে। এই মেলার কথা গত বছর ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর মুখেও শোনা গিয়েছিল।