—প্রতীকী চিত্র।
ফের দলের তরফে ‘পুরস্কার’ মিলল!
ফের একবার নবীন গঙ্গোপাধ্যায়কেই দলের বলাগড় ব্লক সভাপতি হিসেবে বহাল রাখল তৃণমূল। কয়েক মাস আগে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। ‘কঠোর’ ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তা হয়নি। পঞ্চায়েতে ভোটে দলের টিকিট পান নবীন। শ্রীপুর-বলাগড় পঞ্চায়েতের প্রধানও হন। এ বার ব্লক সভাপতি হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
বিরোধীদের অভিযোগ, দুর্নীতিই তৃণমূলের পদে থাকার ‘মাপকাঠি’। বিজেপি নেতা স্বপন পাল বলেন, ‘‘যাঁর নামে দলের লোকেদেরই অভিযোগ, তাঁকে পদে রাখার অর্থ একটাই, ভাগ-বাঁটোয়ারার বিষয়।’’
দলের হুগলি-শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল সভাপতি অরিন্দম গুঁইনের প্রতিক্রিয়া, ‘‘দল যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার, নিয়েছে।’’ নবীনের বক্তব্য, ‘‘দল বিবেচনা করে পদ দিয়েছে। একসঙ্গে চলার জন্য বৈঠক ডাকা হয়েছে।’’ বিরোধীদের অভিযোগ তিনি আমল দেননি।
বলাগড়ে তৃণমূল গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জর্জরিত। নবীনের পরিচালনা নিয়ে প্রশ্নও রয়েছে। তবে, তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা মন্তব্য করেননি।
পান্ডুয়ায় তৃণমূলের ব্লক সভাপতি পদে ফিরিয়ে আনা হয়েছে দলের বর্ষীয়ান নেতা আনিসুল ইসলাম মোল্লাকে। তিনি তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে দু’দশক এই পদে ছিলেন। গত লোকসভা ভোটের পরে তাঁকে সরিয়ে অসিত চট্টোপাধ্যায়কে ব্লক সভাপতি করা হয়। তার পরে সঞ্জয়। এ বার আনিসুল ফিরলেন। পঞ্চায়েত ভোটের সময় টিকিট বণ্টন থেকে ‘এক তরফা’ নানা সিদ্ধান্ত নিয়ে সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে দলের একাংশের ক্ষোভ সামনে এসেছিল। ভোটে পঞ্চায়েত সমিতির আসনে তিনি হেরে যান।
চণ্ডীতলা-১ ব্লকে জেলা পরিষদের সদস্য ভোলানাথ চট্টোপাধ্যায়ের জায়গায় ব্লক সভাপতি হয়েছেন প্রবীণ নেতা সনৎ সানকি। সিঙ্গুরে নতুন ব্লক সভাপতি হয়েছেন আনন্দমোহন ঘোষ। সরানো হয়েছে গোবিন্দ ধারাকে।
আরামবাগ সাংগঠনিক জেলায় গোঘাটের দু’টি এবং খানাকুলের দু’টি ব্লকে তৃণমূলের সভাপতি বদল নিয়ে দলে ক্ষোভের আঁচ। অনেকেই এলাকায় নতুন সভাপতিদের ‘গ্রহণযোগ্যতা’ নেই বলে দলের রাজ্য এবং জেলা নেতৃত্বকে জানিয়েছেন।
গোঘাট-১ ব্লকে বিজয় রায়কে সরিয়ে ব্লক সভাপতি করা হয়েছে অঞ্চল স্তরের ‘আনকোরা’ সঞ্জিত পাকিরাকে। গোঘাট-২ ব্লক সভাপতি ছিলেন স্কুলশিক্ষক অরুণকুমার কেওড়া। তিনি জেলা পরিষদেরও সদস্য। ব্লক সভাপতি পদে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হলেন বদনগঞ্জ ফলুই ২ অঞ্চল সভাপতি সৌমেন দিগার। খানাকুল ১ ব্লকের সভাপতি ছিলেন প্রবীণ নেতা ইলিয়াস চৌধুরী। তাঁকে সরিয়ে যুবনেতা দীপেন মাইতিকে দায়িত্ব দেওয়া হল। খানাকুল ২ ব্লকে অনুপ মাইতির পরিবর্তে সভাপতি হলেন রমেন প্রামাণিক।
আরামবাগের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের একাংশের আশঙ্কা, দলের এই সিদ্ধান্তের প্রভাব লোকসভা ভোটে পড়বে। নতুন সভাপতিরা গুছিয়ে ওঠার সময় পাবেন না। বিজেপি অনেকটা এগিয়ে যাবে। বিষয়টি নিয়ে অনেকেই দলের জেলা সভাপতি রামেন্দু সিংহরায়কে দায়ী করেছেন। রামেন্দু বলেন, ‘‘দলের প্রদেশ স্তর থেকেই ব্লক সভাপতি নির্বাচন করা হয়েছে।’’ আরামবাগের চারটি বিধানসভাই বিজেপির দখলে।
নতুন সভাপতিদের বক্তব্য, জনমত এবং নেতা-কর্মীদের মত নিয়েই দল তাঁদের বেছেছে। ‘জোটবদ্ধ’ হয়েই কাজ করা হবে। বিদায়ী সভাপতিরা জানান, দলের সিদ্ধান্তের উপরে কিছু বলার নেই।