বন্ধ হয়ে পড়ে আছে শরৎস্মৃতি উদ্যান প্রকল্পের কাজ। —নিজস্ব চিত্র।
বাগনানের সামতাবেড় গ্রামে কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বাসভবনের কাছে যে শরৎস্মৃতি উদ্যান তৈরির কাজ চলছিল, টাকার অভাবে তা থমকে গিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে গ্রামে চর্চা শুরু হয়েছে। তবে স্থানীয় বিধায় অরুণাভ সেনের আশ্বাস, ‘‘টাকার জোগানে সমস্যা হবে না।’’
শরৎচন্দ্রের বাড়ির সামনে রূপনারায়ণের ধারে সরকারি জমিতে গড়ে তোলা হচ্ছে এই উদ্যান। ২০২০ সালের ২০ জুলাই শিলান্যাস হয়। প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রস্তাবিত প্রকল্পে অতিথিশালা, শরৎচন্দ্রের লেখালেখি নিয়ে গবেষণাগার তৈরির কথা। তাঁর গল্প-উপন্যাসের চরিত্র নিয়ে গড়ে তোলা হবে মডেল। সেগুলি দিয়ে সাজানো হবে উদ্যান। উদ্যান তৈরিতে খরচ হওয়ার কথা ৫ কোটি টাকা। তার মধ্যে ৬০ লক্ষ টাকায় কিছুটা জমি ভরাট করে পাঁচিল দেওয়া হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে একটি ঘর। বছরখানেক আগে এই কাজ হয়ে গিয়েছে। তারপর থেকে বন্ধ রয়েছে কাজ।
এই প্রকল্প রূপায়ণ করছে বাগনান-২ ব্লক প্রশাসন। টাকা দেওয়ার কথা জেলা পরিষদের। তারা প্রথম পর্যায়ে ৬০ লক্ষ টাকা দিয়েছে। ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, এর পরে আর টাকা আসেনি। জেলা পরিষদকে টাকার জন্য বলা হয়েছে। জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি অজয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমরা সব টাকা দেব, কখনওই বলিনি। সবে জেলা পরিষদের নতুন বোর্ড গঠিত হয়েছে। স্থায়ী সমিতির বৈঠকে টাকার ব্যপারটি অনুমোদন করতে হবে। কত দূর কী করা যায়, দেখা যাক।’’
প্রকল্পটির জন্য উদ্যোগী হয়েছিলেন বিধায়ক অরুণাভ সেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘শুধু বাগনান নয় শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্য গোটা হাওড়া জেলা গর্বিত। তাঁর স্মৃতিবিজড়িত স্থানে শরৎস্মৃতি উদ্যান নামে পর্যটন করতে টাকার অভাব হবে না। জেলা পরিষদের কাছে যেমন টাকা চাওয়া হয়েছে, তেমনই রাজ্য পর্যটন দফতরের কাছেও টাকার জন্য
তদ্বির করব।’’
সামতাবেড়ের পাশের গ্রাম গোবিন্দপুরে ছিল কথাশিল্পীর দিদি অনিলাদেবীর বাড়ি। দিদির বাড়িতে ঘুরতে আসার সূত্রে তিনি সামতাবেড়ে জমি কিনে বাড়ি তৈরির করেন। ১৯২৬ থেকে ১৮৩৮ সালে মৃত্যুর কয়েক দিন আগে পর্যন্ত তিনি সামতাবেড়ে থেকেছেন। এই এলাকার মানুষজনের কাছে পরমাত্মীয় হয়ে উঠেছিলেন। গরিব মানুষকে বিনা পয়সায় চিকিৎসা দেওয়ার জন্য হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা আয়ত্ব করেছিলেন বই পড়ে। রূপনারায়ণের বন্যা থেকে এলাকাকে বাঁচানোর জন্য প্রশাসনের কাছে বাসিন্দাদের নিয়ে দরবার করেছিলেন শরৎচন্দ্র।
তাঁর বাড়িতে ছিল অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের নিয়মিত আনাগোনা। এখানে থাকাকালীন তিনি লেখেন ‘পথের দাবি’, ‘বিপ্রদাস’, ‘শ্রীকান্ত’-এর চতুর্থ পর্ব, প্রবন্ধ সংকলন ‘নারীর মূল্য’। কথাশিল্পীর নামে এখানে আছে সরকারি গ্রন্থাগার, এলাকার পঞ্চায়েতও তাঁর নামে। সম্প্রতি উলুবেড়িয়া মেডিক্যাল কলেজের নামকরণ করা হয়েছে শরৎচন্দ্রের নামে।
তাঁর বাড়িটি পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। বছরভর পর্যটক আসেন। শীতকালে ভিড় ভেঙে পড়ে। রাজ্য হেরিটেজ কমিশন কথাশিল্পীর বাড়িকে ‘হেরিটেজ’ তকমা দিয়েছে। প্রতি বছর জানুয়ারি মাসে পাশের গ্রাম পানিত্রাসে হয় শরৎ মেলা। প্রস্তাবিত শরৎস্মৃতি উদ্যান এই পর্যটন কেন্দ্রকে নতুন মাত্রা দেবে বলে জেলা প্রশাসনের বক্তব্য।
পরিকল্পনা বাস্তবায়নে চিন্তা এখন টাকাই। যদিও বিধায়ক বলছেন, ‘‘টাকার সংস্থান হয়ে যাবে। কাজ ফের শুরু হবে শীঘ্রই।’’