জমির হালে ক্ষুব্ধ জমি আন্দোলনের আর এক ‘যোদ্ধা’
Rabindranath Bhattacharjee

মুখ্যমন্ত্রীর দাবি ওড়ালেন রবীন্দ্রনাথ

সিঙ্গুরের প্রাক্তন বিধায়ক অবশ্য এখনও মনে করেন, ‘অনিচ্ছুক’ চাষিদের জমি ফেরতের দাবিতে আন্দোলন যথাযথ ছিল।

Advertisement

প্রকাশ পাল

সিঙ্গুর শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২২ ০৯:২৬
Share:

নিজের বাড়িতে রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য।

সিঙ্গুর থেকে টাটা-বিদায়ের পিছনে সিপিএমকে দায়ী করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই দাবিকে বৃহস্পতিবার নস্যাৎ করলেন জমি-আন্দোলনে মমতার ‘সহযোদ্ধা’ রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘‘একমাত্র সিপিএমের জন্যই টাটারা চলে গিয়েছে, এটা সম্পূর্ণ সঠিক নয়। রাস্তার ধারে ধর্নামঞ্চ করে দিনের পর দিন বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে। মূলত সেই কারণেই চলে গিয়েছে টাটা।’’ একইসঙ্গে তিনি মেনে নেন, ‘‘কারখানা না-হওয়ায় সিঙ্গুর তথা পশ্চিমবঙ্গের অনেক ক্ষতি হয়েছে, অস্বীকার করে লাভ নেই।’’

Advertisement

আন্দোলন-পর্বে তো বটেই, তারপরেও রবীন্দ্রনাথ যতদিন সিঙ্গুরের তৃণমূল বিধায়ক ছিলেন, ততদিন এমন কথা তাঁকে বলতে শোনা যায়নি। গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন।

সিঙ্গুরের প্রাক্তন বিধায়ক অবশ্য এখনও মনে করেন, ‘অনিচ্ছুক’ চাষিদের জমি ফেরতের দাবিতে আন্দোলন যথাযথ ছিল। তিনি জানান, তৎকালীন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গাঁধীর মধ্যস্থতায় ‘সমঝোতা বৈঠক’ হয় রাজভবনে। সেখানে রাজ্য সরকারের তরফে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেন ছিলেন। অন্য দিকে মমতা, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁরাও (রবীন্দ্রনাথ) ছিলেন। চুক্তি হয়, স্বেচ্ছায় যতটা জমি দিয়েছেন গ্রামবাসী, তার উপরেই কারখানা হোক। ‘অনিচ্ছুক’ কৃষকদের জমি ফেরত দেওয়া হোক। সেই চুক্তি কার্যকর হয়নি। এ জন্য দু’পক্ষই দায়ী বলে রবীন্দ্রনাথ মনে করেন।

Advertisement

রবীন্দ্রনাথের কথায়, ‘‘সেই বৈঠকের সূত্রেই সম্ভবত টাটা বিদায়ের জন্য সিপিএমকে দায়ী করছেন মমতা। টাটার কাছে আন্দোলনের প্রত্যক্ষ ঘটনাই বিচার্য ছিল। সম্ভবত রতন টাটা তাঁর সংস্থা এবং কর্মচারীদের নিরাপত্তার কারণে কারখানা সরিয়ে নেন।’’

রবীন্দ্রনাথের বক্তব্য নিয়ে মন্ত্রী তথা সিঙ্গুরের বিধায়ক ও জমি-আন্দোলনের অন্যতম নেতা বেচারাম মান্নার কটাক্ষ, ‘‘যখন আমাদের সঙ্গে আন্দোলন করতেন, তখন মস্তিষ্ক ঠিক ছিল। এখন কোন পরিস্থিতিতে আছেন, নিজেই জানেন না।’’ গত বিধানসভা নির্বাচনে বেচারামের কাছে হেরে যান রবীন্দ্রনাথ।

এ দিকে, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী রাজ্য সরকার এখনও সব জমি চাষযোগ্য করে চাষিদের দিতে না-পারায় ‘হতাশ’ জমি-আন্দোলনের প্রথম সারির আর এক নেতা মহাদেব দাস। তিনি জানান, প্রকল্প এলাকায় খাসেরভেড়ি মৌজায় তাঁদের পরিবারের বিঘে দশেক জমি ছিল। আন্দোলনের প্রতি ‘পূর্ণ সমর্থন’ জানিয়েও মহাদেবের আক্ষেপ, ‘‘আজকের দিনে দাঁড়িয়ে, পাইনি কিছুই। হারিয়েছি অনেক কিছু। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় হারিয়েছি। জমি চাষযোগ্য হল না, এটা চাষিদের বিরাট ক্ষতি। আমাদের এক বিঘেরও কম জমিতে চাষ হচ্ছে। তা-ও উপযোগী নয়। বলা হয়েছিল, যত দিন জমি চাষযোগ্য না হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতর মাঠে থাকবে। কোথায়?’’

বেচারামের দাবি, ৯০ শতাংশ জমি চাষযোগ্য করা হয়ে গিয়েছে। মহাদেবের পাল্টা দাবি, ‘‘মিথ্যে কথা। কতটা জমি চাষযোগ্য হয়েছে, দেখলেই বোঝা যাবে। ৯০ শতাংশ হয়ে থাকলে, এসে দেখিয়ে দিন। ৭০ শতাংশই অনাবাদী।’’

রবীন্দ্রনাথ এবং মহাদেবের নাম অষ্টম শ্রেণির ইতিহাস বইতে রয়েছে জমিরক্ষার আন্দোলনকারী হিসেবে। হুগলি জেলা ও সিঙ্গুর ব্লক তৃণমূলের বিভিন্ন দায়িত্ব সামলেছেন মহাদেব। ব্লক সভাপতিও হন। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘জমি ফেরত হয়েছে খাতায়-কলমে। জমি জরিপ হয়নি। আল নেই। কোনটা কার জমি, চিহ্নিতই হয়নি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement