দগ্ধ: আগুন নেভানোর পরে কারখানার অবস্থা। বৃহস্পতিবার, হাওড়ার শালিমারে। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
হাওড়ার শালিমারের বার্জার পেন্টসের কারখানা আগামী বছরেই পা দেবে শতবর্ষে। ঠিক তার মুখে, বুধবার দুপুরে সেখানে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এখনও যেন কেউ মেনে নিতে পারছেন না। সকলেরই প্রশ্ন, কী ভাবে ঘটল এত বড় দুর্ঘটনা, যেখানে একসঙ্গে এত জন কর্মী মারাত্মক ভাবে অগ্নিদগ্ধ হলেন? তা হলে কি যে ঘরে প্রথমে আগুন লাগে, সেখানে কয়েক বছর আগে লাগানো সাড়ে তিন টনের এসি-র প্যানেল বোর্ডে কোনও ত্রুটি ছিল? উল্লেখ্য, এই ঘটনায় দমকলের অনুমান, শর্ট সার্কিট থেকে প্রথমে আগুন লাগে এসি-র কম্প্রেসারে। তাতেই প্রথম বিস্ফোরণটি ঘটে আগুন ছড়িয়ে পড়ে ওই ঘরে রাখা ড্রাম ভর্তি রাসায়নিকে। কিন্তু কর্মীদের একাংশের প্রশ্ন, গোটা কারখানা জুড়ে যেখানে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে, সেখানে রাসায়নিক ভর্তি একটি ঘরে থাকা এসি-র প্যানেল বোর্ডে শর্ট সার্কিট কী ভাবে হয়?
বৃহস্পতিবার দিনভর এমনই নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খেল কারখানার কর্মীদের মধ্যে। মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগেও যে কারখানাটি ছিল কর্মমুখর, এ দিন বদলে গিয়েছে সেই ছবিটা। কর্মীরা এলেও বন্ধ ছিলউৎপাদন। সকালে কারখানার মূল লোহার গেট প্রথমে খোলা রেখে ভিতর থেকে বার করে আনা হচ্ছিল পুড়ে যাওয়া জিনিসপত্র। ওই সময়ে রাসায়নিকের গুঁড়ো উড়তে থাকায় এবং কটু গন্ধে এলাকা ভরে যাওয়ায় আশপাশের লোকজন প্রথমে ভেবেছিলেন, ফের কারখানায় আগুন লেগেছে। তাঁরা আতঙ্কিত হয়ে বেরিয়ে আসেন। এর পরে সকলে মিলে কারখানায় ঢুকে বিক্ষোভদেখাতে শুরু করেন। নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে তাঁদের হাতাহাতি বেধে যায়। খবর পেয়ে বিশালপুলিশবাহিনী সেখানে এসে এলাকার লোকজনকে সরিয়ে দেয়। এর পরে বন্ধ করে দেওয়া হয় ওই কারখানার মূল গেট।
এ দিন দুপুরেও কারখানার সামনে ভিড় করেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকে। মূল গেটের পাশে থাকা ছোট লোহার গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকে দেখা গেল, পুড়েযাওয়া অফিসঘর থেকে আর্বজনা বার করার কাজ চলছে। তদন্তে এসেছেন দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের অফিসারেরা। এ দিকে-ও দিকে কর্মীদের জটলা। চোখের সামনে সতীর্থদের অগ্নিদগ্ধ হতে দেখে সকলেরই মন ভারাক্রান্ত। পুলিশ জানিয়েছে, আগুনের উৎস খুঁজতে এ দিন ফরেন্সিক দলের আসার কথা থাকলেও তারা আসেনি।
কারখানার শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র নেতা লালমোহন রায় বলেন, ‘‘ঐতিহ্যশালী এই কারখানাটি আগামী বছর ১০০ পূর্ণ করবে। তার আগে এমন দুর্ঘটনা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। ভেবেই পাচ্ছি না, এসি-র প্যানেল বোর্ডে শর্ট সার্কিট হল কী করে?’’ কারখানার এক কর্মী রাজেশ কুমার বলেন, ‘‘কর্তৃপক্ষ যে ভাবে জখম কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তার জন্য তাঁদের প্রশংসা প্রাপ্য। কিন্তু সহকর্মীদের এত বড় ক্ষতি মন থেকে মেনে নিতে পারছি না।’’
ওই কারখানার পাশের আবাসনের বাসিন্দা মঞ্জু চৌধুরী বলেন, ‘‘বুধবার সারা রাত আমরা ছাদেই কাটিয়েছি। মাঝেমধ্যেই কারখানা থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। রাতে দমকল ফের এসেছিল। আবার আগুন লাগলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। আগুনের তাপে ওই কারখানার একটি উঁচু পাঁচিলে ফাটল ধরে গিয়েছে। তাই যে কোনও সময়ে সেটি আমাদের আবাসনের উপরে ভেঙে পড়তে পারে। সেই কারণে আমরা প্রবল আতঙ্কের মধ্যে আছি।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।