আরামবাগের দৌলতপুর যুবশক্তি নাট্য মন্দির গোষ্ঠীর পুজো। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ
মণ্ডপসজ্জায় প্লাস্টিক-থার্মোকল ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আগেও ছিল। তবে তা মানছিল না অনেক পুজো কমিটিই। গত জুলাই মাসে পাতলা প্লাস্টিক ব্যবহার নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কড়া নির্দেশের পর চলতি বছরের পুজোয় কিছুটা বিড়ম্বনায় দুই জেলার বহু পুজো কমিটি। অনেকে জানাচ্ছে, থার্মোকল আর প্লাস্টিক ছাড়া মণ্ডপ তৈরিতে খরচ বাড়ছে অনেকটাই। আবার অনেকের দাবি, একান্ত প্রয়োজনীয় কয়েকটি কাজ থার্মোকলে করা হচ্ছে। তাছাড়া ভরসা রাখা হচ্ছে পুট্টি, ফাইবার আর মাটিতে।
আরামবাগ শহরের নামী থিমের পুজোগুলোর অন্যতম ৩-এর পল্লি পুজো কমিটির সম্পাদক বিশ্বজিৎ মালিক বলেন, “আমাদের ৩ লক্ষ টাকা বাজেট। কেদারনাথ মন্দিরের আদলে মণ্ডপ হবে। এই বাজেটের মধ্যে থার্মোকল ছাড়া মণ্ডপ করা খরচসাপেক্ষ। তবু কিছু অংশে থার্মোকলের ব্যবহার করতেই হচ্ছে।’’ বাসুদেবপুর স্পোর্টস ক্লাবের পুজোর বাজেট প্রায় ৭ লক্ষ। পুরনো বুদ্ধ মন্দিরের আদলে মণ্ডপের খরচ ধরা হয়েছে সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা। পুজো কমিটির কোষাধ্যক্ষ সৌমিত্র রায় বলেন, “থার্মোকল ছাড়া মণ্ডপ করা যাচ্ছে না। তবে আগের তুলনায় এ বার থার্মোকল ব্যবহার প্রায় ৮৫ শতাংশ কমানো হয়েছে।’’ মানিক সঙ্ঘের পুজোর সাড়ে ৬ লক্ষ টাকা বাজেটের মধ্যে মণ্ডপ খাতে ধরা আছে ৪ লক্ষ টাকা। পুজো কমিটির সম্পাদক চন্দন সিংহরায় বলেন, “৬৫ ফুট উচ্চতার ‘আদিযোগী’(শিব মূর্তি) থিমের মণ্ডপ হচ্ছে আমাদের। আমাদের সিদ্ধান্ত থার্মোকল ব্যবহার না করা। থাকলেও খুব কম থাকবে।” এমনই ‘কম’ থার্মোকল ব্যবহারের কথা শোনা গেল শহরের ২-এর পল্লি, তালার পাড় মিলন সঙ্ঘ, গোঘাটের ভিকদাস পুজো কমিটির কর্মকর্তাদের মুখেও।
এক মণ্ডপ শিল্পী সংস্থার কর্মকর্তা কনিষ্ক মাইতি বলেন, “আমার বরাত পাওয়া মোট দশটি মণ্ডপের মধ্যে খালি তারকেশ্বর সারদা পল্লির একটি পুজো কমিটি প্লাস্টিক বা থার্মোকল ব্যবহার করছে না। বাকিদের কাজে থার্মোকলের কিছু না কিছু থাকছেই।” তিনি জানান, থার্মোকলের বিকল্প মাটি, ফাইবার বা কাঠ। মাটির ক্ষেত্রে খরচ তিন গুণ বাড়বে, ফাইবারে চার গুণ এবং কাঠে প্রায় পাঁচ গুণ খরচ বাড়বে।
এরই মধ্যে আরামবাগের দৌলতপুর যুবশক্তি নাট্য মন্দির গোষ্ঠীর পুজো কমিটির দাবি, তারা থার্মোকল ব্যবহার করছে না। পুজো কমিটির সম্পাদক সজল কর্মকার বলেন, “আমরা টানা চার বছর ধরে ‘বিশ্ববাংলা শারদ’ সম্মান পাচ্ছি। প্লাস্টিক আগেই বর্জন করা হয়েছে। এ বার থার্মোকলও ব্যবহার করা হচ্ছে না। মণ্ডপসজ্জা খাতে প্রায় ৩ গুণ খরচ বাড়িয়ে প্রায় ৬ লক্ষ টাকা করা হয়েছে। মাটি আর বাঁশ ব্যবহারে জোর দেওয়া হচ্ছে।’’
দৌলতপুর যুবশক্তি নাট্য মন্দির গোষ্ঠীর মণ্ডপ পরিকল্পনা এবং তার রূপায়ণের বরাত পাওয়া সংস্থার কর্মকর্তা তথা শিল্পী মানস গণ বলেন, “এখানে থার্মোকল ব্যবহার হচ্ছে না। সবটাই নির্ভর করে পুজো কমিটির সিদ্ধান্তের উপর। আসলে থার্মোকলে যত তাড়াতাড়ি থিমের বিভিন্ন কাজ ফুটিয়ে তোলা যায়, তা মাটিতে হয় না। মাটির ব্যবহার যেমন সময় সাপেক্ষ, তেমনি খরচ সাপেক্ষ। তাছাড়া মাটির কাজ বৃষ্টি হলে নষ্ট হওয়ারও সম্ভবনা থাকে।” তিনি জানান, থার্মোকল-প্লাস্টিক ব্যবহার নিয়ে পুজো কমিটিকে সচেতন করলেও, অনেকেই বাজেট অনুযায়ী তা পেরে ওঠে না। সে ক্ষেত্রে প্লাস্টিক, থার্মোকলের ব্যবহার কমানোর চেষ্টা হয়।
হাওড়া গ্রামীণের অধিকাংশ পুজো মণ্ডপগুলিতেও এ বার প্লাস্টিক ও থার্মোকল ব্যবহার করা হচ্ছে না বলেই দাবি কমিটিগুলির। তার বদলে জোর দেওয়া হচ্ছে প্লাইউড, চট, পুট্টির মতো উপকরণে। উলুবেড়িয়ার নোনা অ্যাথলেটিক ক্লাবের তরফে গৌতম বসু বলেন, ‘‘মণ্ডপ তৈরিতে পুট্টি, কাগজ, বাঁশ ব্যবহার করা হচ্ছে। তাতে রং করেই সাজানো চলছে। মণ্ডপ খাতে খরচ বাড়ানো হয়েছে।’’ আমতা পল্লিকল্যাণ সমিতির এ বারের থিম হল রাজস্থানের একটি মন্দির। সমিতির পক্ষে রাজীব সিংহ রায় জানান, চট আর বাঁশে সাজছে মণ্ডপ। যদুরবেড়িয়া কলতলা পুজো কমিটির তরফে ধনঞ্জয় গিরি বলেন, ‘‘রঙিন কাগজ, কাপড় দিয়ে মণ্ডপের সাজ হচ্ছে। পুট্টি আর খড় দিয়ে বিভিন্ন মডেল তৈরি চলছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘মণ্ডপ সাজাতে শোলাও ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে পরিবেশ দূষণের বিষয়টা মাথায় রেখেই সেগুলি পুজো শেষে খুলে রাখা হবে।’’
(তথ্য সহায়তা: পীযূষ নন্দী, নুরুল আবসার ও সুব্রত জানা)