আগাছায় ঢাকা মহসিনের সমাধিস্থল সংলগ্ন পার্ক। ছবি: তাপস ঘোষ।
বছর ছয়েক আগে ‘গ্রিন সিটি’ প্রকল্পে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা খরচ করে চুঁচুড়ায় হাজি মহম্মদ মহসিনের সমাধিস্থল সংলগ্ন পার্কটি গড়া হয়েছিল। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ইমামবাড়ার পাশে সেই পার্ক এখন বেহাল পড়ে। আগাছায় ভরেছে চত্ত্বর। বন্ধ খেলাধুলো। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এত টাকা খরচ করে পার্ক বানিয়ে লাভ হল না। খেলাধুলো বন্ধ হওয়ায় ক্ষুব্ধ এলাকার কিশোর-তরুণরাও।
গত বছর শীতের মরসুমে পার্কটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা হাজি মহম্মদ মহসিন ওয়াকফ স্টেটের তরফে এই পার্ক দেখভালের প্রতিশ্রুতি মিলেছিল। কিন্তু এ বারেও কাজ হল না। কমিটির সদস্য মির্জা সাজেদ আলি বলেন, “পার্ক পরিষ্কারের দায়িত্ব আমাদেরই। তবে, পার্কটি পাঁচিল দিয়ে ঘেরার কাজ এখনও বাকি রয়েছে। রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। বাকি কাজ সম্পূর্ণ হলে রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে জোর দেওয়া হবে।”
পুরপ্রধান অমিত রায় বলেন, “পার্ক পরিষ্কারের জন্য ইমামবাড়া কমিটির তরফে কোনও সাহায্যের আবেদন আমাদের কাছে আসেনি। এলে নিশ্চয়ই দেখা হবে।”
১৮১২ সালে প্রয়াত হন ‘দানবীর’ হাজি মহম্মদ মহসিন। ইমামবাড়া সদর হাসপাতাল, হুগলি মহসিন কলেজ, হুগলি মাদ্রাসা, ইমামবাড়া প্রভৃতি মহসিনের দানের জমিতেই তৈরি হয়েছে। মৃত্যুর পর ইমামবাড়ার কাছেই মহম্মদ মহসিনকে সমাধিস্থ করা হয়। প্রায় দেড় বিঘা জমি ঘিরে পাঁচিল ওঠে। গম্বুজ আকারে সমাধি তৈরি হয়। এলাকাটি ‘মহসিনের সমাধিস্থল’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
২০১৫ সালে তৃণমূলের পুরবোর্ড এলাকাটি সংরক্ষণে উদ্যোগী হয়। সমাধিস্থল সংলগ্ন ফাঁকা জায়গায় পার্কটি গড়ে ওঠে। প্রথম দিকে পর্যটকরা অনেকেই আসতেন। মঙ্গলবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড় থেকে পরিবার নিয়ে বেড়াতে এসেছিলেন মতিউর রহমান। পার্কে এসে তিনি বলেন, “বইয়ে মহসিনের কথা পড়েছি। ওঁর স্মৃতি বিজড়িত পার্কের এই হাল ভাবতেও পারিনি।”
স্থানীয় এক যুবক বলেন, “একটা সময় ওখানে খেলাধুলো করেছি। ওখানে পার্ক গড়ে তোলা হল, কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ হল না। চারদিকে আবর্জনা।” আরও এক যুবকের অভিযোগ, সন্ধ্যার পর পার্কের ভিতরে মদ-জুয়ার আসর বসে। বছরে একবার মহসিনের জন্মদিনে একটু পরিষ্কার হয়, তার পরে আবার একই হাল।”