Konnagar Murder Case

সমকামী সম্পর্কে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল ছেলে! কোন্নগর খুনে শিশুর মা এবং তাঁর বান্ধবীকে নিয়ে মিলল তথ্য

ছেলে মারা গিয়েছে আগের দিন সন্ধ্যায়। পর দিন সকালে পোষ্যকে বিস্কুট খাওয়াতে বসেন শান্তা শর্মা। যদিও পোষ্য সেই বিস্কুট ছোঁয়নি। কোন্নগরের শর্মাবাড়িতে ঠিক কী ঘটেছিল?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কোন্নগর শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৯:৪৭
Share:

(বাঁদিক থেকে) ছেলেকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার মা শান্তা শর্মা এবং মৃত ছেলে শ্রেয়াংশু শর্মা। —নিজস্ব চিত্র।

আট বছরের ছেলে খুন হয়েছে ১৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায়। এলাকায় শোরগোল। একমাত্র পুত্রকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বাবা। কিন্তু পরদিন অর্থাৎ, ১৭ ফেব্রুয়ারি সকালবেলা শান্ত ভাবে পোষ্যকে বিস্কুট খাওয়াতে যান শান্তা শর্মা। যদিও পোষ্য কুকুর সেই বিস্কুট খায়নি। হুগলির কোন্নগরে আট বছরের স্কুলছাত্র শ্রেয়াংশু শর্মা খুনের তদন্তে নেমে এটাই প্রথম খটকা ছিল তদন্তকারীদের কাছে। মঙ্গলবার যখন ছেলেকে খুনের অভিযোগে যখন স্ত্রীকে পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে, তখনও মাথা নেড়ে পঙ্কজ শর্মা বলেন, তিনি কিছুতেই মানতে পারছেন না এ সব।

Advertisement

কোন্নগর শিশু খুনের ঘটনায় গত চার দিন তদন্তের পর মঙ্গলবার গ্রেফতার করা হয় মৃতের মা শান্তা এবং শান্তার বান্ধবী ইফফাত পারভিনকে। বাড়িতেই ছিলেন শান্তা। তবে ইফফাতকে পুলিশ গ্রেফতার করে ওয়াটগঞ্জ থানার খিদিরপুর এলাকা থেকে। ওই ঘটনা নিয়ে শ্রীরামপুরের ডিসিপি অর্ণব বিশ্বাস উত্তরপাড়া থানায় সাংবাদিক বৈঠক করেন। তিনি জানান, দুই মহিলার গভীর বন্ধুত্ব ছিল। বিয়ের আগে থেকেই ওই বন্ধুত্ব। শান্তার বিয়ে হয় ২০১২ সালে। পারভিনের বিয়ে হয় ২০১৮ সালে। তবে মাসখানেকের মধ্যে স্বামীর ঘর ছেড়ে চলে আসেন পারভিন। এত বছরে দুই মহিলার বন্ধুত্বে চিড় ধরেনি। দু’জন দু’জনের বাড়িতে যাতায়াত করতেন। পরিবারও জানতেন তাঁরা ‘ভাল বন্ধু’। গভীর রাত পর্যন্ত ফোনে গল্প করতেন শান্তা এবং পারভিন। বান্ধবীর ছেলে খুনের পরদিনই কোন্নগরের আদর্শনগরে শান্তার বাড়িতে আসেন পারভিন। সমবেদনা জানান বান্ধবীকে। কিন্তু ছেলে খুনের অভিযোগে কেন গ্রেফতার হলেন মা?

ডিসিপি আরও জানান, ঘটনাস্থল থেকে যে সব তথ্যপ্রমাণ মিলেছে তার ভিত্তিতেই এই গ্রেফতারি। ফরেন্সিক তদন্তের রিপোর্ট এবং ফিঙ্গার প্রিন্ট রিপোর্ট খতিয়ে দেখা হয়। তা ছাড়াও এলাকার সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখা হয়। তার পর অভিযুক্তদের জেরা করে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে যে, খুনের পিছনে শিশুর মা এবং তাঁর বান্ধবীই রয়েছেন। ডিসিপি বলেন, ‘‘দু’জনকেই শ্রীরামপুর আদালতে তোলা হবে। রিমান্ডে নিয়ে তদন্ত এগোবে।’’ পুলিশ সূত্রে খবর, সমকামী সম্পর্কে হয়তো বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল শিশু। এই কারণেই তাকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন মা। তবে এ নিয়ে আরও জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন রয়েছে।

Advertisement

আট বছরের শ্রেয়াংশুকে মারা হয়েছিল বিভিন্ন জিনিস ব্যবহার করে। তদন্তে নেমে রড, ইট, রক্তাক্ত মূর্তি থেকে বাঁকানো অবস্থায় সব্জি কাটার ছুরি উদ্ধার হয়। শিশু খুনের নৃশংসতা তদন্তকারীদেরও চমকে দিয়েছে। একমাত্র সন্তানের মৃত্যুতে সিআইডি তদন্ত দাবি করেছিলেন বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত পঙ্কজ। স্ত্রীর গ্রেফতারির পর তিনি বলেন, ‘‘স্ত্রী এই ঘটনায় যুক্ত, বিশ্বাস করতে পারছি না।’’ আর কথা বলতে পারেননি তিনি। মৃত শিশুর মেসোমশাই গৌতম অধিকারী বলেন, ‘‘দু’জনের (শান্তা ও পারভিন) যে ‘সম্পর্ক’ ছিল, সেটা জানতাম না। অভিযুক্তদের কঠিন শাস্তি চাই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement