চণ্ডীতলার কলাছড়ায় এ ভাবেই কৃষি জমি থেকে মাটি কাটা হচ্ছে (বাঁ দিকে)। আদালতের পথে ধৃত শামসুদ্দিন (ডান দিকে)। ছবি: দীপঙ্কর দে
অবৈধ ভাবে মাটি কাটার অভিযোগ পেয়ে অভিযানে গিয়েছিল পুলিশ। সেখানে গিয়ে মাটি কারবারিদের হাতে তারা বেধড়ক মার খেল বলে অভিযোগ। তিন জন সাব ইনস্পেক্টর (এসআই)-সহ ছয় পুলিশকর্মী জখম হয়েছেন। সোমবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে হুগলির চণ্ডীতলার কলাছড়ার গোকুলপুর এলাকায়। পরে অবশ্য পুলিশ ১০ জনকে গ্রেফতার করে। মাটিবোঝাই চারটি ডাম্পার আটক করা হয়। পুলিশের অভিযোগ, ধৃতেরা প্রত্যেকে মাটি-কারবারের সঙ্গে যুক্ত। তারা অবৈধ ভাবে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল।
হুগলি গ্রামীণ জেলা পুলিশের আধিকারিকরা জানিয়েছেন,
ধৃতদের বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে মাটি কাটা, সরকারি কাজে বাধা, বন্দুক ছিনতাই প্রভৃতি ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। মঙ্গলবার শ্রীরামপুর আদালতে তোলা হলে ধৃতদের ১৪ দিন জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
অনেকেই বলছেন, যাদের ধরা হয়েছে, তারা চুনোপুঁটি। তাদের পিছনে ‘রাঘব বোয়াল’ রয়েছে। তবে, সেই সব মাথাদের গায়ে আঁচড় কাটার মতো লম্বা হাত আদৌ পুলিশ-প্রশাসনের আছে কি না, তাঁরা সন্দিহান। এই প্রশ্নে হুগলি গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক আধিকারিক অবশ্য বলেন, ‘‘অবৈধ ভাবে মাটি কাটার পিছনে কে বা কারা রয়েছে, তদন্ত করে সকলের বিরুদ্ধেই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ পুলিশ যাই বলুক, ঘটনা হচ্ছে, এই ব্লকে বেআইনি ভাবে মাটি কাটার অভিযোগ নতুন নয়। সাধারণ মানুষের একাংশের অভিযোগ, গোটা চণ্ডীতলা জুড়ে বিঘের পর বিঘে কৃষিজমির মাটি অবৈধ ভাবে কেটে বিক্রি করে দিচ্ছে মাটি-মাফিয়ারা।
পুলিশ সূত্রের খবর, কৃষিজমি থেকে অবৈধ ভাবে মাটি কাটার অভিযোগ পেয়ে সোমবার বিকেলে চণ্ডীতলা থানার পুলিশ যায়। ভগবতীপুর-কলাছড়া রাস্তায় মাটিবোঝাই চারটি ডাম্পার দাঁড় করিয়ে চালকের কাছ থেকে কাগজপত্র দেখাতে চায়। কিন্তু চালকেরা বৈধ কোনও নথি দেখাতে পারেননি। পুলিশের অভিযোগ, এর পরেই শেখ শামসুদ্দিন ওরফে সামু নামে এক যুবকের নেতৃত্বে ২৫-৩০ জন রড, লাঠি নিয়ে পুলিশকর্মীদের উপরে চড়াও হয়। এসআই আবদুল রহিমকে মাটিতে ফেলে মারধর করা হয়। পুলিশের জামা ছিঁড়ে দেওয়া হয়। এসআই অশোককুমার দে এবং শামসুদ্দিন রহমান গেলে তাঁরাও প্রহৃত হন। মার খান তিন কনস্টেবলও।
পরে পুলিশবাহিনী গিয়ে মূল অভিযুক্ত সামু-সহ ১০ জনকে গ্রেফতার করে। আহত পুলিশকর্মীদের প্রাথমিক চিকিৎসা করাতে হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, সামু এলাকায় তৃণমূল কর্মী হিসেবে পরিচিত।
অভিযোগ, সে এলাকার এক তৃণমূল নেতার ‘কাছের ছেলে’।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, কয়েক বছর ধরেই চণ্ডীতলা ১ ও ২ ব্লকে মাটি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। চণ্ডীতলা ১ ব্লকের বনমালীপুর, আঁইয়া পঞ্চায়েতের মুকুন্দপুর, ভগবতীপুর, কৃষ্ণরামপুর পঞ্চায়েতে অহল্যাবাই রোডে পাশে, চণ্ডীতলা ২ ব্লকের কলাছড়ায় এই বেআইনি কাজ চলে। বড় বড় যন্ত্র নামিয়ে রাতভর মাটি লুট করা হয়। নাম বলতে অনিচ্ছুক কলাছড়ার এক চাষির অভিযোগ, ‘‘শাসক দলের বড়-ছোট সব নেতার পকেটে টাকা যাচ্ছে। মাটি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য এত বেড়েছে, পুলিশকে মারতেও হাত কাঁপছে না।’’