নির্বিচারে কেটে ফেলা হয়েছে গাছ। প্রতিবাদে কাটা গাছে পড়েছে পোস্টার।
মাস কয়েক আগে মানকুন্ডুতে প্রায় ৩০০ আমগাছ কাটা পড়েছিল। তা নিয়ে চর্চা কম হয়নি। পরিবেশকর্মীরা প্রশ্ন তুলেছিলেন। এ বার রাতের অন্ধকারে ১৩টি আমগাছ গোড়া থেকে কেটে দেওয়া হল চুঁচুড়ার কোদালিয়া ১ পঞ্চায়েতের উত্তর সিমলার একটি বাগান থেকে। বাগান-মালিক কেদারনাথ ঘোষের ক্ষোভ, ঘটনার পরে শনিবার তিনি পুলিশকে জানিয়েছিলেন। অভিযোগ, এখনও তদন্ত এগোয়নি। উল্টে দায় ঠেলাঠেলি করছে পুলিশ ও বন দফতর।
কেদারনাথ চন্দননগর হরিদ্রাডাঙার বাসিন্দা। উত্তর সিমলার ওই বাগানে তাঁর প্রায় দেড় বিঘা জমিতে নানা প্রজাতির ১৯টি আমগাছের মধ্যে ১৩টি কাটা পড়েছে শুক্রবার রাতে। স্থানীয় এক মহিলা জানান, ওই দিন রাত দেড়টা নাগাদ তিনি গাছ কাটার শব্দ পান। ভয়ে বাইরে বেরোতে পারেননি। কেদারের ফোন নম্বর না থাকায় যোগাযোগও করতে পারেননি।
ঘটনার প্রতিবাদে পথে নেমেছেন পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যেরা। সোমবার ঘটনাস্থলে গিয়ে পড়ে থাকা গাছগুলির গায়ে পোস্টার সাঁটেন তাঁরা। সংগঠনের ব্যান্ডেল-মগরা কেন্দ্রের সম্পাদক সন্দীপ সিংহ বলেন, “অবিলম্বে দোষীদের খুঁজে পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা নিক। নয়তো রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করব।” তাঁর খেদ, “আইন আছে অথচ গাছ কাটার ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হয় না!”
কী বলছে পুলিশ ও বন দফতর?
শনিবার সকালে চুঁচুড়া থানায় লিখিত অভিযোগ জমা দেন কেদার। তিনি জানান, বিকেল ৩টে নাগাদ এক অফিসার থানায় ডেকে পাঠিয়ে অভিযুক্তের নাম জানাতে বলেন। কিন্তু যে হেতু অভিযুক্তদের তিনি দেখেননি, তাই নামও বলতে পারেননি। কেদারের দাবি, অভিযোগ পত্রে কারও নাম না দিলে অভিযোগ নেওয়া যাবে না বলে জানিয়েছিলেন পুলিশের এক কর্তা। রাতে থানায় আইসি এলে ফের গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি।
চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন হয়েছে। কিন্তু বন দফতর থেকে অভিযোগ না পেলে কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না। ওই পুলিশকর্তার দাবি, এ ধরনের ঘটনায় গাছের মালিকের কথায় বন দফতর পুলিশে অভিযোগ করে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বারবার বলেও চুঁচুড়া বন দফতরের কোনও সাড়া মেলেনি।’’ চুঁচুড়ার রেঞ্জ অফিসার রাজেশ মুখোপাধ্যায় বলেন, “পুলিশের এক্তিয়ার আছে তদন্তে নেমে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার। আমাদের অভিযোগের প্রয়োজন কোথায় বুঝতে পারছি না।”
পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় জানান, গাছ কাটার অভিযোগ থানায় সরাসরি জানানো যায়। পুলিশ তদন্ত করতে পারে। বন দফতরের অভিযোগ জানানো আবশ্যিক নয়। তাঁর কথায়, “জেলা জুড়ে নির্বিচারে গাছ কাটা চলছে, আর সরকারি দফতর একে অন্যের দিকে দায় ঠেলছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক!”