প্রচারে মেয়র রাম চক্রবর্তী (বাঁ দিকে)। প্লাস্টিকে ভর্তি নিকাশি নালা। বাগনানে। নিজস্ব চিত্র।
প্রচার চালানো হয়েছে আগেই। এ বার উলুবেড়িয়া এবং চন্দননগর শহরকে পুরোপুরি প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগমুক্ত করতে কড়া অবস্থান নিল দুই পুরসভা। উলুবেড়িয়ায় আগামী পয়লা জুলাই থেকে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ হচ্ছে। চন্দননগরে একই সিদ্ধান্ত বলবৎ হচ্ছে ১০জুন থেকে।
দুই পুরসভার কর্তারাই জানিয়েছেন, নিষেধাজ্ঞা না মেনে যাঁরা প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার করবেন, তাঁদের জরিমানা করা হবে। দুই পুরসভার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন পরিবেশকর্মীরা।
উলুবেড়িয়া পুরসভার চেয়ারম্যান অভয় দাস বলেন, ‘‘গত এক বছর ধরে সচেতনতামূলক প্রচারে অনেকটাই কাজ হয়েছে। মানুষ প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের ব্যবহার কমিয়েছেন। এ বার তা পুরোপুরি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। এখনও যাঁরা প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার করছেন, তাঁদের জন্যই জরিমানার নিদান। তা ছাড়া, কোনও কড়া সিদ্ধান্ত নিতে গেলে মানুষকে সচেতন করতে হয়। আমরা সেটাই করেছি।’’
চন্দননগরের মেয়র রাম চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পুর এলাকায় আমরা প্লাস্টিক ও থার্মোকলের ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করতে চাইছি। এ জন্য প্রচার অভিযান চালাচ্ছি নিয়মিত। প্রকৃতিকে রক্ষায় প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে নিকাশি এবং মাটির মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। আমরা প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে বদ্ধপরিকর।’’
আর পাঁচটা শহরের মতো উলুবেড়িয়া এ চন্দননগরেওও পাতলা প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ একটা বড় সমস্যা। মানুষ যত্রতত্র সেগুলি ফেলেন। তাতে যেমন শহর নোংরা হয়, তেমন পরিবেশও দূষিত হয়। পরিবেশবিদদের দাবি, বিশেষ করে ৭৫ মাইক্রনের কম পুরু প্লাস্টিক পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকর। কারণ, এগুলি নষ্ট হয় না। এর ক্ষতিকর উপকরণগুলি স্বাস্থ্যের পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায়। গবাদি পশুরা রাস্তায় পড়ে থাকা প্লাস্টিক খেয়ে ফেললে তাদেরও ক্ষতি হয়। শুধু তা-ই নয় ওই প্লাস্টিকে শহরের নিকাশি নালা বুজে গেলে শহরে জল জমে যায়।
গত বছর জুলাই মাস থেকে উলুবেড়িয়া পুরসভা প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহারের বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়াতে প্রচারে নামে। বাজার-হাট এবং জনবহুল জায়গায় প্রচার চলছিল। প্লাস্টিকের বদলে কাগজের বা চটের ব্যাগ ব্যবহার করার জন্যেও উৎসাহ দেওয়া হয়। কিন্তু তাতেও খুব একটা কাজ হয়নি। তারপরেই প্লাস্টিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয় বলে পুরকর্তারা জানিয়েছেন।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ৭৫ মাইক্রনের কম পুরু প্লাস্টিক একেবারে ব্যবহার করা যাবে না। এ ছাড়াও ব্যবহার করা যাবে না কোনও সংস্থার ছাপ মারা প্লাস্টিক ও থার্মোকলের থালাবাটি, গ্লাস এবং চায়ের কাপ। যদি কেউ এগুলি ব্যবহার করেন, তা হলে ৫০ থেকে ৫০০ টাকা জরিমানা করা হবে। পুরসভার স্বাস্থ্য এবং সাফাই বিভাগের কর্মীরা বাজার এবং জনবহুল জায়গায় নজরদারি চালাবেন এবং প্লাস্টিক ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।
এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে পরিবেশকর্মী জয়িতা কুন্ডু কুঁতি বলেন, ‘‘আমরা প্লাস্টিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করার দাবিতে একাধিকবার আন্দোলন করেছি। তবে দেখতে হবে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয় কি না।’’
চন্দননগরের পুরকর্তারাও জানিয়েছেন, ৭৫ মাইক্রনের কম পুরু প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ এবং থার্মোকলের ব্যবহার নিষিদ্ধ। সেই মর্মে প্রচারের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বিজ্ঞপ্তিও জারি করা হয়েছে। কোনও ব্যবসায়ী পুরসভার ওই নির্দেশিকা অমান্য করলে ৫০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হবে।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।