‘লেজ়ার শো’-তে চলছে অঙ্গদান বিষয়ে সচেতনতার প্রচার। —নিজস্ব চিত্র।
যাঁরা অঙ্গদানের মাধ্যমে আর এক জনকে জীবন উপহার দিয়েছেন অথবা, অঙ্গদানে যাঁরা ইচ্ছুক তাঁদের উদ্দেশ্য বার্তা জগদ্ধাত্রী পুজোয়। চন্দননগরের মধ্যাঞ্চল সর্বজনীনের জগদ্ধাত্রী পুজোর ‘লেজ়ার শো’-এর মাধ্যমে অঙ্গদানের বার্তা বিশেষ নজর কাড়ছে দর্শনার্থীদের। তাই সন্ধ্যা থেকেই মধ্যাঞ্চল সর্বজনীনের পুজো মণ্ডপের পাশের জলাশয়ের ধারে উপচে পড়ছে ভিড়।
‘লেজ়ার শো’-এর কোথাও তুলে ধরা হয়েছে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র কর্তৃক জগদ্ধাত্রী পুজোর সূচনা এবং তার বন্ধু ফরাসি দেওয়ান চন্দননগরে ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী পুজোর সূচনার দৃশ্য। তাই দিয়ে শোয়ের সূচনা। তার পর উৎসবের দিনে হাসপাতালে ভর্তি মৃত্যুশয্যায় থাকা এক প্রৌঢ় এবং তাঁর মেয়ের কাহিনী তুলে ধরে অঙ্গদানের মাহাত্ম্য বোঝানো হচ্ছে। অঙ্গদান করলে অন্যের মধ্যে নিজের বেঁচে থাকার বার্তা আলোর মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে এই মণ্ডপের সামনে। আর তা দেখতে চন্দননগর স্টেশন রোডে মধ্যাঞ্চল সর্বজনীনের প্যান্ডেল লোকে লোকারণ্য। মধ্যাঞ্চলের পুজো কমিটির অন্যতম সদস্য চিকিৎসক শান্তনু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মানুষের মৃত্যু হলে তাঁর অঙ্গদানে বাধা থাকে না। বাধা হল, আমাদের ‘সচেতনতা।’ আমাদের চোখ, কিডনির মতো অঙ্গগুলো অপরকে দিলে মৃত্যুর পরেও আমরা বেঁচে থাকতে পারি। তার থেকেও বড় কথা, একজন মানুষ সেই অঙ্গ নিয়ে সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকতে পারেন।’’
থিমেও সেই কথাই বলছে মধ্যাঞ্চলের পুজো। থিমের নাম ‘মনে রেখো।’ সভ্যতার বিকাশে পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে। প্রকৃতির অনেক কিছুই আজ বিপন্ন। তাই পরিবেশের খেয়াল রাখা এবং অন্যের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিচ্ছে এই পুজো কমিটি।
অন্য দিকে, নবমীর রাতে জনতার সেই চেনা ঢল কিন্তু চোখে পড়েনি না চন্দননগরে। এখানকার জগদ্ধাত্রী পুজো মানে রাজপথে জনতার ঢল নামে। সপ্তমী থেকে দশমী চন্দননগরে লাখো লাখো মানুষের ভিড় জমে যায়। আলো থেকে মণ্ডপ এবং প্রতিমার টানে বিভিন্ন জেলা থেকে কাতারে কাতারে মানুষ এখানে ভিড় করেন। কিন্তু এ বার সেই ভিড় নেই, বলছেন পুজো উদ্যোক্তারা। আদি হালদারপাড়ার সদস্য অশোক সাহার কথায়, ‘‘অন্যান্য বার পুজোর দিনগুলোয় অসম্ভব ভিড় হত মণ্ডপে। ভিড় সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হত। আর নবমীতে দর্শনার্থী হয় সব চেয়ে বেশি। কারণ, দশমীর সকাল থেকে মণ্ডপ খোলার তোড়জোড় শুরু হয়। শোভাযাত্রায় বার হয়। কিন্তু এ বার তেমন ভিড় হল কই!’’ মানকুন্ডু নতুন পাড়ার সহ-সম্পাদক সুমন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘চন্দননগরের বারোয়ারি পুজোগুলোর লক্ষ্যই তো দর্শনার্থী টানা। লক্ষ লক্ষ টাকার বাজেট। এত খরচ, এত দিনের পরিশ্রম তখনই সফল হয়, যখন বহু মানুষ ভিড় জমান প্যান্ডেলে। দেখে বলেন, ‘বাহ্ দারুণ হয়েছে।’ কিন্তু এ বার দেখছি রাত বাড়তেই সব মণ্ডপ প্রায় ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।’’