প্রতীকী ছবি।
কোভিড রোগীদের জন্য অক্সিজেনের ঘাটতি মেটাতে হাওড়ার বালিটিকুরি ইএসআই হাসপাতালে এ বার বসছে প্লান্ট। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, এই অক্সিজেন প্লান্ট তৈরি করবেন রাজ্য সরকারের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের ইঞ্জিনিয়ারেরা। এর ফলে ওই ইএসআই হাসপাতালটিকে ৬০০ শয্যার কোভিড হাসপাতালে পরিণত করতে আর কোনও সমস্যা থাকবে না বলে মনে করছেন জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। এতে হাওড়ায় কোভিড শয্যার সঙ্কটও খানিকটা মিটবে।
বর্তমানে হাওড়ার সরকারি কোভিড হাসপাতাল বলতে রয়েছে বালিটিকুরি ইএসআই, সত্যবালা আইডি এবং টিএল জয়সওয়াল হাসপাতাল। বালিটিকুরি ইএসআই হাসপাতালকে ৬০০ শয্যার কোভিড হাসপাতাল করার পরিকল্পনা থাকলেও বর্তমানে সেখানে ৩০০ শয্যায় রোগী ভর্তি নেওয়া হচ্ছে। বাকি ৩০০ শয্যা চালু করা যাচ্ছে না পরিকাঠামোর অভাবে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত সব হাসপাতাল মিলিয়ে হাওড়ার ৮০০টি শয্যার মধ্যে সিসিইউ ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা রয়েছে মাত্র ২৬টিতে। সেগুলি সবই আছে বালিটিকুরি ইএসআই-এ। গোটা হাওড়ায় মাত্র ২৬টি ভেন্টিলেটর যে খুবই কম, মানছেন জেলা স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা। কম ভেন্টিলেটর থাকায় প্রতিদিন শুধু ওই হাসপাতালেই মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। যদিও ওই হাসপাতালে আরও ২৪টি ভেন্টিলেটর চালু করার সিদ্ধান্ত হয়ে আছে।
সেই সঙ্গে রয়েছে জেলা জুড়ে অক্সিজেনের ঘাটতি। তবে বালিটিকুরি ইএসআই হাসপাতালের ১০০টি শয্যার সঙ্গে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতির তুলনায় তা যথেষ্ট নয়। তাই মাল্টিস্পেশ্যালিটি হাসপাতাল বলে স্বীকৃত বালিটিকুরি ইএসআই-এ অক্সিজেন প্লান্ট বসানোর জন্য রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করে জেলা প্রশাসন। যার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য সরকার প্লান্ট বসানোর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর জানাচ্ছে, অক্সিজেন তৈরির এই প্লান্টকে বলে পাওয়ার সুইং অ্যাবসরবেন্ট প্লান্ট। বায়ু থেকে নেওয়া অক্সিজেন বিশুদ্ধ করে তরল অক্সিজেনে রূপান্তর করে পাইপলাইনের মাধ্যমে পাঠানো হবে হাসপাতালের ওয়ার্ডে রোগীর শয্যার পাশে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বুধবার বলেন, ‘‘হাওড়ায় অক্সিজেনের সমস্যা আছে। সব থেকে সমস্যা অক্সিজেন সিলিন্ডারের। এই শিল্পাঞ্চলে অনেকেই বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুত করে রাখায় সমস্যা প্রকট হচ্ছে। প্লান্টটি হয়ে গেলে অক্সিজেনের সঙ্কট কিছুটা মিটবে।’’ চিকিৎসকদের মতে, কোভিড রোগীদের অক্সিজেনের সরবরাহ অব্যাহত রাখতে পারলে মৃত্যুর হার কমবে। স্বাস্থ্য দফতরের ওই কর্তা জানাচ্ছেন, এক জন কোভিড রোগীর যখন দিনে ১৬ লিটারের বেশি অক্সিজেন লাগে, তখন তাঁকে ভেন্টিলেটরে দিতে হয়। কিন্তু বেশির ভাগ রোগীর ক্ষেত্রে ৫-৬ লিটার অক্সিজেন দিলেই সাড়া মেলে। অথচ সেইটুকু অক্সিজেনও মিলছে না।
মৃত্যুর হার ঠেকাতে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক চিকিৎসকের পরামর্শ, বাড়িতে আইসোলেশনে থাকা রোগীদের পাল্স অক্সিমিটারের সাহায্যে অক্সিজেন কয়েক ঘণ্টা অন্তর মাপতে হবে। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ৯৪-এর নীচে নেমে গেলেই তার ব্যবস্থা করতে হবে। ঠিক সময়ে হাসপাতালে নিয়ে গেলে অক্সিজেন দিয়ে রোগীকে বাঁচিয়ে তোলা সম্ভব। তাই হাসপাতালেও পর্যাপ্ত অক্সিজেনের সরবরাহ থাকা জরুরি। ওই চিকিৎসকের বক্তব্য, “কিন্তু অনেক করোনা রোগীরই অক্সিজেনের মাত্রা যখন ৮০-এর নীচে চলে যাচ্ছে, তখন তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হচ্ছে। তেমন ক্ষেত্রে অনেক রোগীকেই বাঁচানো যাচ্ছে না। সচেতনতার অভাবে এটা হচ্ছে।”