গাছ কেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল হরিপাল গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে। ফাইল চিত্র।
এক বছর পার। আমপানে হুগলিতে সরকারি জায়গায় মোট ক্ষতিগ্রস্ত গাছের সংখ্যা কত এখনও তা নির্ধারণই করতে উঠতে পারল না জেলা প্রশাসন এবং জেলা বন দফতর। ফলে, মুখ্যসচিব জানতে চাইলে জেলা প্রশাসন এবং জেলা বন দফতর কী উত্তর দেবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। এর পরে রয়েছে গাছ বিক্রির টাকার অঙ্ক নিয়েও প্রশ্নও।
আমপানের পরে জেলা বন দফতর প্রাথমিক ভাবে জানিয়েছিল, হুগলিতে অন্তত ৭০ হাজার গাছ পড়ে গিয়েছে। কিন্তু সেই হিসেব নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়। তৎকালীন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কানে বিষয়টি যায়। তিনি তদন্তের নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশের পর সরকারি জায়গায় পড়ে যাওয়া গাছের সংখ্যা নির্ধারণে সমীক্ষার কাজ শুরু করে বন দফতর। কিন্তু এখনও সেই সমীক্ষার ফল জানা গেল না।
এখন জেলার বনকর্তাদের সাফাই, ‘‘দফতরের প্রতিটি বিভাগে কর্মীর ব্যাপক অভাব রয়েছে। ফলে, সমীক্ষার কাজ কী অবস্থায় আছে বা কতটা এগিয়েছে, সেই বিষয়ে খোঁজ নিতে হবে।’’ জেলা প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘এখন বিষয়টি যতটা সহজে বলা যাচ্ছে, আমপানের পরে অন্তত তিন দিন পরিস্থিতি ততটা সহজ ছিল না। তখন হাসপাতাল, সরকারি অফিস, ব্লক অফিসে ঢোকাটাই মূল প্রতিবন্ধকতা ছিল। গাছ পড়ায় গ্রামের পর গ্রামে বিদ্যুৎ ছিল না। পানীয় জল, পরিবহণ সব বন্ধ। অনেকে সুযোগ বুঝে সরকারি গাছ কেটে নিয়ে স্রেফ বেচে দিয়েছেন। বাস্তব তখন বিরুদ্ধ হওয়ায় পদক্ষেপ করা সরকারি ভাবে সম্ভব হয়নি।’’
আমপানের পরে ভেঙে পড়া সরকারি গাছ বেআইনি ভাবে বিক্রি করা নিয়েও অভিযোগ কম ওঠেনি। বিধি বলছে, সরকারি জায়গার গাছের মূল্য আগে নির্ধারণ করবে বন দফতর। তারপরে টেন্ডার করে সেই গাছ বিক্রি করা হবে। কিন্তু ঝড়ের পরে বহু সাধারণ গ্রামবাসী গাছ কেটে নিয়ে চলে গিয়েছিলেন। এমনকি, পঞ্চায়েত স্তরেও বেআইনি ভাবে গাছ বিক্রির অভিযোগ উঠেছিল।
হরিপাল গ্রামীণ হাসপাতালে ঝড়ে পড়ে যাওয়া সরকারি গাছ নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এক স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান বেচে দেন বলে অভিযোগ তুলেছিলেন তৃণমূলেরই তৎকালীন জেলা পরিষদ সদস্যা শম্পা দাস এবং তাঁর স্বামী মনোজিৎ। সেই কারণে পরিবারটির চরম ভোগান্তি হয় বলে অভিযোগ। যা আজও মেটেনি। শম্পা এখন বিজেপিতে। বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকে তাঁর স্বামী ঘরছাড়া। তাঁদের বাড়ি ভাঙচুর হয়। সেই অভিযোগের আজও নিষ্পত্তি হয়নি।
জেলা বন দফতরের এক কর্তা জানান, গত বছর হুগলিতে একটি মাত্র ক্ষেত্রে সরকারি গাছ বিক্রির পর টাকা জমা দেওয়ার পদ্ধতি জানতে চাওয়া হয়েছিল তাঁদের কাছে। তাঁরা অনলাইনে সেই সময় টাকা ট্রেজারিতে জমা দেওয়ার পদ্ধতি জানিয়ে দিয়েছিলেন। আর কোনও ঘটনার
কথা তাঁদের জানা নেই বলে ওই বনকর্তার দাবি।