Raja Ram Mohan Roy

রামমোহনের জন্মস্থান অবহেলিত, আক্ষেপ

রাধানগর এবং রঘুনাথপুরে (এখানে রামমোহন আলাদা বাড়ি তৈরি করেছিলেন) তাঁর লাগানো আমবাগানকে কেন্দ্র করে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা তথা এলাকাকে ‘হেরিটেজ সাইট’-এর মর্যাদা দানের দাবি এলাকাবাসীর অনেক দিনের।

Advertisement

পীযূষ নন্দী

খানাকুল শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০২১ ০৫:৪৭
Share:

দূরত্ববিধি মেনে রাজা রামমোহন রায়ের বসতবাটীতে ২৫০তম জন্মদিন পালন করা হচ্ছে। রঘুনাথপুরে। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

অনেক আক্ষেপ আর অভিযোগ নিয়েই শনিবার খানাকুলের রাধানগরে রাজা রামমোহনের জন্মভিটেতে তাঁর ২৫০ তম জন্মদিবস পালিত হল।

Advertisement

ওই এলাকাকে ঘিরে রামমোহনের নামে কিছু স্মারক আছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পাঠাগার, ব্যবসা কেন্দ্র, হিমঘর এবং সমবায় সমিতিও আছে। কিন্তু রাধানগর এবং পাশের রঘুনাথপুরে (এখানে রামমোহন আলাদা বাড়ি তৈরি করেছিলেন) তাঁর হাতে লাগানো আমবাগানকে কেন্দ্র করে বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা তথা এলাকাকে ‘হেরিটেজ সাইট’-এর মর্যাদা দানের দাবি এলাকাবাসীর অনেক দিনের। কিন্তু তা মেটেনি। তাই এলাকাবাসীর আক্ষেপ, নিজের জন্মভূমিতে রামমোহন অবহেলিতই থেকে গিয়েছেন। ওই আমবাগানে অবশ্য রামমোহনের নামে একটি জাদুঘর তৈরির কাজ করছে জেলা পরিষদ।

‘রাধানগর রামমোহন মেমোরিয়াল অ্যান্ড কালচারাল কমিটি’র সভাপতি পরেশচন্দ্র দাস, সহ-সভাপতি বাসুদেব বসু, সম্পাদক দেবাশিস শেঠ প্রমুখ কোভিড-বিধি মেনে এ দিন রামমোহন মেমোরিয়াল হলে রাজার মূর্তিতে মালা দিয়ে জন্মদিন পালন করলেন। সারাদিন ধরে আরও বিভিন্ন সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিরাও দফায় দফায় মেমোরিয়াল হলে গিয়ে মাল্যদান করেন।

Advertisement

ওই কমিটির সম্পাদক দেবাশিসবাবুর আক্ষেপ, ‘‘আমাদের পুরনো দাবিগুলো মেটেনি। এখানে বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা তো দূরঅস্ত্‌, রামমোহন মেমোরিয়াল হলে এখনও বিদ্যুৎ সংযোগ হয়নি। শৌচাগারও নেই। তদারকির লোকও নিয়োগ হয়নি। মেটেনি রাধানগরে যাত্রী নিবাস এবং যুব আবাস স্থাপনের দাবিও।’’ একই সঙ্গে সারা বছর ধরে বিভিন্ন স্কুলে আলোচনাসভা, মৌলিক লেখা প্রকাশ-সহ রামমোহন চর্চার যে পরিকল্পনা তাঁরা করেছিলেন, কোভিড পরিস্থিতির কারণে তা থেকে সরতে হওয়ায় আফসোসও প্রকাশ করেন দেবাশিসবাবু।

কমিটির সহ-সভাপতি বাসুদেব বসু বলেন, ‘‘আমরা চাই খানাকুলে রাজা রামমোহনের নামে একটা বিশ্ববিদ্যালয় হোক। আরামবাগের মায়াপুর স্টেশন থেকে খানাকুলের রাধানগর পর্যন্ত রেল সংযোগও গড়ে উঠুক।”

এ দিন রামমোহনের মূর্তিতে মালা দিতে যান খানাকুলের বিজেপি বিধায়ক সুশান্ত ঘোষ। রামমোহনকে নিয়ে এলাকার সব দাবি ন্যায্য বলে মেনে নিয়ে তিনি বলেন, “আমি পুরাতত্ত্ব বিভাগ এবং কেন্দ্রীয় সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করব।”

১৯৬০ সালে সরকারি ভাবে রাজা রামমোহন রায়ের স্মৃতি সংরক্ষণে রাধানগর-নাঙ্গুলপাড়া ও রঘুনাথপুরে রামমোহনের পৈতৃক সম্পত্তির প্রায় ১৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ১৯৭২-এ কেন্দ্রীয় সরকার রামমোহন লাইব্রেরি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করে। ২০০২ সালে হুগলি জেলা পরিষদ ‘রামমোহন স্মৃতি ও স্বত্ত্ব সংরক্ষণ কমিটি’ গঠন করে রঘুনাথপুরে রামমোহনের বাসভূমি এলাকায় একটি পার্ক নির্মাণ করে তার সৌন্দর্যায়ন করে। রাধানগর স্মৃতিমন্দিরের দেওয়ালে রাজার জীবনের ঘটনাবলিও ছবিতে তুলে ধরা হয়।

১৮৩৩ সালে ব্রিস্টলে রামমোহনের মৃত্যু হয়েছিল। ১৮৫৯-এ পাদ্রি রেভারেন্ড জেমস্‌ লং রাধানগরে এসে রামমোহন রায়ের জন্মস্থান চিহ্নিত করে সেখানে একটি ছোট বেদি নির্মাণ করেছিলেন। ১৯১৬ সালে এলাকাবাসী এবং ব্রাহ্মসমাজের যৌথ উদ্যোগে রামমোহন স্মৃতি মন্দির গড়ার সিদ্ধান্ত হলে নকশা আঁকেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ঠাকুর পরিবারের বধূ হেমলতা দেবী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement