ফাইল চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণার পরে মাস ঘুরতে চলল। কিন্তু হুগলিতে ১০০ দিনের কাজের শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থান হল কই?
গত ডিসেম্বর থেকে ১০০ দিনের কাজে শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি এখনও মেলেনি। এ নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছে রাজ্য সরকার এবং তৃণমূল। চলতি অর্থবর্ষে এখনও শ্রম বাজেটও অনুমোদন হয়নি কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক থেকে। হুগলি-সহ রাজ্যের সর্বত্রই ১০০ দিনের কাজ কার্যত বন্ধ।
এই অবস্থায় শ্রমিকদের অর্থসঙ্কট দূর করতে গত মাসের মাঝামাঝি মুখ্যমন্ত্রী পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রশাসনিক বৈঠকে গিয়ে নির্দেস দিয়েছিলেন, রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতর তাদের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে ১০০ দিনের প্রকল্পের শ্রমিকদের কাজ নিশ্চিত করবে। তারাই বেতন দেবে। কিন্তু হুগলিতে সেই কাজের ব্যবস্থা এখনও হয়নি বলেই শ্রমিকদের অভিযোগ।
আরামবাগের বাতানল পঞ্চায়েতের শ্রমিক মনোরঞ্জন মালিকের অভিযোগ, “১০০ দিনের কাজ তো হচ্ছেই না, অন্য কোনও দফতরেও কাজে লাগানো হয়নি। ১০০ দিনের কাজের বেতন বাকি থাকলেও অনেকেই কাজ করতে চাই।” গোঘাটের বালি পঞ্চায়েতের শ্রমিক শঙ্কর দোলুইয়ের অভিযোগ, “আমাদের জন্য বিকল্প কাজের কথা বলা হলেও এলাকায় সেচ দফতরের বাঁধ সংস্কারের কাজ, পূর্ত দফতরের রাস্তার কাজে এখনও পর্যন্ত আমাদের ডাকা হয়নি।”
বিভিন্ন পঞ্চায়েত প্রধানরাও জানিয়েছেন, বিকল্প কাজের ব্যবস্থা এখনও হয়নি। একই কথা জানিয়েছেন অনেক বিডিও। অথচ, প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২০ মে বিজ্ঞপ্তি জারি করে রাজ্য সরকার সমস্ত জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেয় পূর্ত, স্বাস্থ্য, সেচ, কৃষি, মৎস্য ইত্যাদি দফতরের কাজগুলিতে জবকার্ডধারীদের নিযুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য। হুগলি জেলায় কাজ দেওয়ার জন্য ১৮টি দফতরের আধিকারিকদের চিঠি পাঠিয়ে তা কার্যকর করতে বলা হয়।
তারপরেও কাজ না-পাওয়ার অভিযোগ করছেন কেন শ্রমিকেরা?
জেলার উপ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) সন্দীপ দে বলেন, “এতদিন পঞ্চায়েত এলাকার কাজগুলিতে আমরা যাঁদের কাজে লাগিয়ে আসছি, তাঁরা অধিকাংশই জবকার্ডধারী। এখনও কোথাও কাজ শুরু হলে তাঁদের নেওয়া হবে।” জেলা সেচ দফতরের এগ্জ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার তপন পাল এবং জেলা পূর্ত দফতরের এগ্জ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার নিমাইচন্দ্র পাল জানিয়েছেন, বিষয়টি ঠিকাদরদের বলা হয়েছে। স্থানীয় স্তরে তাঁরাসংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত বা ব্লক প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে শ্রমিক নেওয়ারবিষয়টি নিশ্চিত করবেন। অন্যান্য দফতরের আধিকারিকরাও জানিয়েছেন, যেখানে যেমন উন্নয়নমূলক প্রকল্প থাকবে, সেখানে জবকার্ডধারীদের নেওয়া হবে।
হুগলিতে ১০০ দিনের কাজ অবশ্য এখনও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। তবে, গতবারের তুলনায় কাজের পরিমাণ অনেক কম। জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবর্ষের শুরু থেকে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত শ্রমিকের কাজ হয়েছে ৯ লক্ষ ১৩ হাজার ৮৯২টি। সেখানে গত বছর জুনের শেষ পর্যন্ত কাজ হয়েছিল ৬১ লক্ষ ৮৬ হাজার ৫১৩টি। অতিরিক্ত জেলাশাসক নকুলচন্দ্র মাহাতো জানান, যে সব শ্রমিক কাজ চাইছেন, প্রকল্পের আইন অনুযায়ী তাঁদের কাজ দেওয়া হচ্ছে।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।