প্রতীকী ছবি।
বিদেশ যেতে ইচ্ছুক চাকরিপ্রার্থীদের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে সাধারণ মানুষদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে!
সম্প্রতি প্রতারিত এক যুবকের টাকা খোয়া যাওয়ার ঘটনার তদন্তে নেমে এমনটাই জানতে পেরেছে হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগ। ওই যুবকের খোয়া যাওয়া টাকা উদ্ধার করতে পারলেও প্রতারকদের পুলিশ ধরতে পারেনি। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, এর পিছনেও ঝাড়খণ্ডের জামতাড়া গ্যাং কাজ করছে।
বছর পঁচিশের ওই যুবকের বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের মাধবডিহিতে। কাজের সুবিধার জন্য তিনি উলুবেড়িয়ায় বন্ধুর বাড়িতে থাকেন। তবে, করোনা আবহে বেসরকারি সংস্থার চাকরি চলে যাওয়ায় তিনি অন্য সংস্থায় চাকরির চেষ্টা করছেন। বিভিন্ন ওয়েবসাইট ঘেঁটে তিনি একটি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারেন, তাঁকে হংকংয়ের একটি হোটেলে চাকরির ব্যবস্থা এবং ভিসা করে দেওয়া হবে। ‘সার্ভিস চার্জ’ হিসেবে দিতে হবে ৫৩ হাজার টাকা। যুবকটি তিন দফায় এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে ৫৩ হাজার টাকা সংস্থাকে দেন। কয়েকদিন পরে সংস্থার তরফে ক্যুরিয়র করে ওই যুবককে হংকংয়ের ভিসা এবং সেখানকার একটি হোটেলে চাকরির ‘অফার লেটার’ পাঠানো হয়। তার আগে ‘ভার্চুয়াল’ পদ্ধতিতে হোটেল কর্তৃপক্ষ তাঁর ইন্টারভিউ নেন বলেও যুবক জানান।
ওই সংস্থার তরফে যুবকটিকে একটি ওয়েবসাইটের কথা জানানো হয়েছিল। তাতে নিজের নাম দেখতে পান বলে যুবকটি জানান। কিন্তু ওয়েবসাইটটি দেখে সন্দেহ হওয়ায় তিনি ভারতীয় বিদেশ দফতরের নিজস্ব ওয়েবসাইটে ভিসাটি যাচাই করতে গিয়ে দেখেন, ভিসা-প্রাপকদের তালিকায় তাঁর নামই নেই। প্রতারিত হয়েছেন বুঝতে পেরে তিনি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
ওই যুবকের দাবি, সংস্থা সাফ জানিয়ে দেয়, তাদের যা করণীয় তা করে দেওয়া হয়েছে। তিনি তখন ভিসা বা চাকরির দরকার নেই জানিয়ে টাকা ফেরত চান। কিন্তু সংস্থাটি কোনও টাকা নেয়নি বলে পাল্টা দাবি করে। সংস্থার ফোনও বন্ধ হয়ে যায়। যোগাযোগ করতে না পেরে ওই যুবক গত ২৮ এপ্রিল উলুবেড়িয়া থানায় এফআইআর করেন। মামলাটি যায় গ্রামীণ জেলা পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগে।
তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, প্রতারকেরা ওই যুবককে একটি ফোন নম্বর দিয়ে ‘গুগল পে’-র মাধ্যমে টাকা পাঠাতে বলেছিল। ওই ফোন নম্বরের সূত্র ধরেই পুলিশ জানতে পারে, কলকাতার মেটিয়াবুরুজের এক বাসিন্দার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ওই টাকা জমা পড়েছে।
পুলিশ ওই ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করে। জেরায় তিনি পুলিশকে জানান, কী ভাবে তাঁর অ্যাকাউন্টে এত টাকা ঢুকল তার বিন্দুবিসর্গও জানেন না। প্রথমে ২০ হাজার টাকা ঢোকে। সঙ্গে সঙ্গে এক ব্যক্তি তাঁকে ফোন করে দাবি করে, তার টাকা ওই অ্যাকাউন্টে ভুল করে ঢুকে গিয়েছে। দ্রুত ফেরত না পাঠালে পুলিশে দেওয়া হবে।
ভয়ে মেটিয়াবুরুজের ওই বাসিন্দা টাকা ফেরত পাঠানোর উপায় জানতে চান। তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, ওই ফোন থেকে তাঁর ডেবিট কার্ডের নম্বর জেনে ‘ওটিপি’ পাঠানো হয়। সেই ‘ওটিপি’ জানালে তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে ২০ হাজার টাকা বেরিয়ে যায়। বিষয়টি তিনি ব্যাঙ্কে জানান। ব্যাঙ্ককর্মীদের নিষেধ শুনে এরপরে দু’বার একই ভাবে ফোন এলেও তিনি ‘ওটিপি’ জানাননি। তার মধ্যেই তাঁর অ্যাকাউন্টে আরও ৩৩ হাজার টাকা জমা হয়ে যায়। সেটাও তিনি ব্যাঙ্ককে জানান।
পুলিশ ওই ব্যাঙ্কের সঙ্গেও কথা বলে। পুলিশের মধ্যস্থতায় মেটিয়াবুরুজের ওই ব্যক্তি গত সোমবার ৫৩ হাজার টাকা যুবকের অ্যাকাউন্টে জমা করে দিয়েছেন। যার মধ্যে তাঁর নিজস্ব ২০ হাজার টাকাও রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘যেহেতু পুরো টাকা আমার অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছিল, তাই সব দায় আমার।’’
পুলিশ জানিয়েছে, প্রতারকেরা অন্যের অ্যাকাউন্ট নম্বর ও ফোন নম্বর ‘হ্যাক’ করে তাতে প্রতারিতদের টাকা জমা দিতে বলে। তারপরে ভয় দেখিয়ে সেই গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নেয়। ফলে, প্রতারিতদের কাছ থেকে প্রতারকরাই যে টাকা নিচ্ছে তার কোনও সরাসরি প্রমাণ থাকে না।
টাকা ফেরত পেয়ে যুবকটি খুশি হলেও ওই সংস্থাকে ক্যুরিয়ার করে দেওয়া তাঁর পাসপোর্টটি ফিরে পাননি। এ জন্যেও তিনি পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমার পাসপোর্টটি প্রতারক সংস্থার কাছে আছে। কিন্তু সংস্থার কোনও হদিশই পাচ্ছি না।’’