ভোগান্তি নিত্য যাত্রীদের। —নিজস্ব চিত্র।
রাত পোহালেই একুশে জুলাই। পঞ্চায়েত ভোটে বিপুল জয়ের (চূড়ান্ত ফল ঘোষণা যদিও আদালতের উপরে নির্ভরশীল) পরে এ বার কলকাতায় শহিদ সমাবেশে জমায়েত বাড়বে বলে তৃণমূল নেতৃত্বের ধারণা। কিন্তু, সেই ভিড়ে কি দেখা যাবে নির্দলদের, যাঁরা দলের নির্দেশ উড়িয়ে ভোটে লড়েছিলেন? এই প্রশ্নে দোটানায় হুগলি জেলা তৃণমূলের ওই ‘বিক্ষুব্ধ’রা। কেউ জানিয়েছেন, সমাবেশে যাবেন। কেউ গুটিয়ে নিয়েছেন নিজেকে।
সমাবেশে নির্দলদের নিয়ে তৃণমূল স্পষ্ট কোনও বার্তা দেয়নি। নেতাদের একাংশ অবশ্য এ কথা বলতে ভুলছেন না যে, সমর্থক হিসাবে যে কেউ যেতেই পারেন! এই পরিস্থিতিতে শহিদ তর্পণের দিন নির্দলরা দলের মূলস্রোতে কতটা ভিড়তে পারেন, তা নিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে আগ্রহ রয়েছে।
বলাগড়ের একতারপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান টোটন মণ্ডল নির্দল হিসাবে জিতেছেন। তিনি বলেন, ‘‘নির্দল হয়ে জিতলেও আমি মনেপ্রাণে তৃণমূলের কর্মী। অন্য বারের মতোই সমাবেশে যাব।’’ ওই ব্লকের আরও কয়েক জন নির্দলও সমাবেশের পথে পা বাড়াতে তৈরি।
গোঘাট-২ পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সভাপতি অণিমা কাটারি এ বার ছিলেন নির্দল। তাঁর বক্তব্য, ‘‘দল কোনও নির্দেশ দেয়নি। আমাকে বহিষ্কারও করেনি। আটকাবে কে? তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে ২১ জুলাই গিয়েছি। এ বারেও যাব। সাধারণ মানুষ বা সমর্থক হয়েই যাব।’’ দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে বহিষ্কৃত গোঘাটের পশ্চিমপাড়ার নেতা ফরিদ খান জানান, প্রতিবারের মতোই দলের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে বাসে সমাবেশে যাবেন। একুশের সমর্থনে সভাও করছেন। তাঁরও যুক্তি, ‘‘সমর্থক হয়ে যেতেই পারি।’’
আনুষ্ঠানিক ভাবে বহিষ্কার করা হয়নি, আরামবাগ মহকুমার এমন ২৫২ জন নির্দলের সিংহভাগই সমাবেশে যেতে ইচ্ছুক। তবে, যে ১৯ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে, তাঁদের অনেকে দ্বিধাগ্রস্ত। তাঁদের মধ্যে আরামবাগের আরান্ডি-২ পঞ্চায়েতের বিশ্বজিৎ রায়ের কথায়, ‘‘যাওয়ার ইচ্ছা রয়েছে। কিন্তু, টিটকিরি, বিদ্রুপ শুনতে হতে পারে।’’ পান্ডুয়ার সরাই-তিন্না পঞ্চায়েতের নির্দল মহম্মদ সেবগাতুল্লাহও যাওয়া নিয়ে ভাবছেন। সেবগাতুল্লাহ জানান, ডাক পেলে দলে ফিরতে প্রস্তুত। শ্রীরামপুর-উত্তরপাড়া ব্লকের পিয়ারাপুরে নির্দল হয়ে দাঁড়ানো অরুণকুমার গায়েন বলেন, ‘‘এ বার যাব না। তৃণমূল আমাকে বহিষ্কার করেছে, শুনেছি। যাওয়ার প্রশ্ন নেই।’’
তবে, পান্ডুয়া ব্লক তৃণমূল সভাপতি সঞ্জয় ঘোষের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশমতো তিনি ব্লকের ২৭-২৮ জন নির্দলকে বহিষ্কার করেছেন। ফলে, সমাবেশে ওই নির্দলদের যাওয়া অনুচিত বলে তিনি মনে করেন। দলের হুগলি-শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অরিন্দম গুঁইন অবশ্য জানান, পান্ডুয়ার কোনও নির্দলকে বহিষ্কারের নির্দেশ রাজ্য দেয়নি। ব্লক সভাপতি নিজের মতো ব্যাখ্যা করেছেন।
আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল সভাপতি রামেন্দু সিংহরায়ের বক্তব্য, ‘‘বহিষ্কৃতেরা যেতে পারবেন না। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, যাঁরা নির্দল হয়ে রয়ে গিয়েছিলেন, তাঁরা দলের কেউ নন।’’ পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘বহিষ্কৃতদের সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। জন-সমাবেশে তো দলের সমর্থক-সহ কত সাধারণ মানুষও যান। সেখানে কে যাবেন, না যাবেন, তা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই।’’