চাঁপদানিতে নির্দলের সঙ্গে টক্কর তৃণমূলের। —নিজস্ব চিত্র।
নির্দল প্রার্থীদের দাপটে হুগলির চাঁপদানি পুরসভায় গরিষ্ঠতা পেল না তৃণমূল। সেখানে তৃণমূলের সঙ্গে জোর টক্কর হয়েছে নির্দল প্রার্থীদের। অন্য বিরোধীরা প্রায় গৌণ। চাঁপদানিতে পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, পুরবোর্ড গঠন করতে গেলে নির্দলদের সাহায্য নিতে হতে পারে। যদিও তৃণমূল থেকে ‘নির্দল’ হয়ে দাঁড়ানো প্রার্থীদের দলে ফেরানো নিয়ে আগেই ‘নিষেধাজ্ঞা’ জারি করেছে শাসকদল।
এই আবহে চাঁপদানিতে বুধবারেই বোর্ড গড়া সম্ভব হবে বলে ঘোষণা করেছেন হুগলির তৃণমূল নেতারা। যদিও এ নিয়ে ক্ষোভের পারদ চড়ছে জোড়াফুল শিবিরের একাংশে।
বুধবার পুরভোটের গণনা শুরু হতেই রাজ্য জুড়ে দেখা যায় সবুজ ঝড়। ১০৮টি পুরসভার মধ্যে বিকেল পর্যন্ত রাজ্যের শাসকদলের দখলে ১০২টি পুরসভা। তবে চাঁপদানি পুরসভার ছবিটা ব্যতিক্রম। ২২টি আসন বিশিষ্ট ওই পুরসভায় জোড়াফুল শিবিরের ঝুলিতে এসেছে ১১টি আসন। আবার নির্দল প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন ১০টি আসনে। বাকি ১টি আসন পেয়েছে কংগ্রেস।
চাঁপদানি পুরসভার ইতিহাস বলছে, সেখানে বরাবরই নির্দল প্রার্থীরা ভোটে গুরুত্ব পেয়ে এসেছেন। তবে এ বারের চিত্র খানিকটা অন্য রকম ছিল। চাঁপদানির তৃণমূল নেতৃত্বও বুঝতে পেরেছিলেন, এই পুরভোটে নির্দলরাই অন্যতম ‘গুরুত্বপূর্ণ’ হয়ে উঠতে চলেছেন। তবে এত জন নির্দল প্রার্থীর জয় চাঁপদানি পুরসভায় এই প্রথম।
চাঁপদানি পুরসভায় বোর্ড গড়তে ‘ম্যাজিক ফিগার’ ১২। অথচ তৃণমূলের হাতে রয়েছে ১১টি আসন। এই আবহে চাঁপদানিতে তৃণমূলের একার পক্ষে বোর্ড গড়া অসম্ভব বলেই মনে করছে দলের নেতাদের একাংশ। আবার দলের নির্দেশ অমান্য করে যাঁরা তৃণমূল থেকে নির্দল হয়ে দাঁড়িয়েছেন, তাঁরা জিতলেও দলে ফেরানোর বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পাশাপাশিই, চাঁপদানিতে কংগ্রেসের এক মাত্র জয়ী প্রার্থী দারোগা রাজভড় জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি বিরোধী হিসাবেই থাকবেন। তাঁর কথায়, ‘‘ওরাই বোর্ড গড়বে। তবে বিরোধী হিসাবে যা করার করব। আমি মানুষের কাজ করে যাব।’’ এই প্রেক্ষিতে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেছেন তৃণমূলের হুগলি জেলার প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ যাদব। আত্মবিশ্বাসী দিলীপের বক্তব্য, ‘‘চাঁপদানিতে বোর্ড হবে। বুধবারই হবে।’’
তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে বিক্ষুব্ধদের অনেকেই নির্দল হয়ে ভোটের ময়দানে নেমে পড়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে চাঁপদানির কয়েক জন দাপুটে তৃণমূল নেতাও ছিলেন। সেই সময় হুগলিতে মোট ১৪ জনকে বহিষ্কার করেছিল তৃণমূল। বুধবার ফল বেরোলে দেখা যায়, বহিষ্কৃতদের একাংশ জয়ী হয়েছে। যেমন নির্দল প্রার্থী হয়ে জিতেছেন শ্রীকান্ত মণ্ডল। সব মিলিয়ে গোটা হুগলি জেলায় মোট ২০ জন নির্দল প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। যাঁরা সকলেই তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে ভোটে লড়েছিলেন (এর মধ্যে চাঁপদানি পুরসভায় ১০ জন, বৈদ্যবাটি পুরসভায় ৩ জন, শ্রীরামপুর পুরসভায় ২ জন, ভদ্রেশ্বর পুরসভায় ১ জন, রিষড়া পুরসভায় ১ জন, কোন্নগর পুরসভায় ১ জন, ডানকুনি পুরসভায় ১ জন এবং উত্তরপাড়া পুরসভায় ১ জন)। এই পরিস্থিতিতে চাঁপদানিতে বোর্ড গড়ার জন্য কি জয়ী নির্দলদের সমর্থনই নেবে তৃণমূল?
এই প্রশ্ন উঠতেই ক্ষোভ ছড়িয়েছে হুগলির তৃণমূল সমর্থকদের একাংশের মধ্যে। জয়ী নির্দলদের দলে না-ফেরানোর দাবি তুলে বুধবার ফল ঘোষণার পরে পরেই বৈদ্যবাটিতে জিটি রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা। এখন দেখার, দলীয় নেতৃত্ব কী করে সবদিক সামাল দেন।