Anganwadi

Anganwadi: বহু অঙ্গনওয়াড়ি বেহাল, বাড়ছে সাপের উপদ্রব

ধনেখালিতে কর্মরত অবস্থায় এক কেন্দ্রের সহায়িকাকে সাপে কাটার পর জেলা জুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়েছে কর্মী-সহায়িকাদের মধ্যে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আরামবাগ শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০২২ ০৬:৪৯
Share:

বেহাল অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। কুমুড়সা পঞ্চায়েতের মথুরা গ্রামে। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

আগাছা আর জঙ্গলের ঘেরাটোপে থাকা কোনও কেন্দ্রে সাপের উৎপাত বেড়েছে। কোথাও খাবারে ব্যাঙ লাফিয়ে পড়ে। কোথাও আবার কেন্দ্রের ছাউনি ফুটো হয়ে জল পড়ে। ছাতা মাথায় রান্না করতে হয়। হুগলির ভগ্নদশা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি সংস্কারের দাবি ছিলই। শুক্রবার ধনেখালিতে কর্মরত অবস্থায় এক কেন্দ্রের সহায়িকাকে সাপে কাটার পর জেলা জুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়েছে কর্মী-সহায়িকাদের মধ্যে।

Advertisement

শুক্রবার সকালে ধনেখালির গুড়বাড়ি-১ পঞ্চায়েতের খানপুর ৪২৫ নম্বর কেন্দ্রের সহায়িকা জয়ন্তী রায় মোট ৭০ জন উপভোক্তার জন্য রান্না চাপিয়ে জঙ্গলে ঘেরা চত্বরপার হয়ে পানীয় জল আনার পথে সাপের ছোবল খান। তাঁকে ধনেখালি গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। শনিবার দুপুরে তাঁকেছেড়ে দেওয়া হয়।

তবে, সাপের আতঙ্ক থেকে গিয়েছে। শনিবার ওই কেন্দ্রেরান্না হয়নি। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী কল্পনা দে নন্দীর অভিযোগ,“সাপের কারণেই রান্না বন্ধ রাখা হয়েছে। শিশু উপভোক্তাদের পরিবারের লোকেরাও আতঙ্কিত। অবিলম্বে জঙ্গল সাফাই-সহ যথাযথ পরিকাঠামোর জন্য প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে দরবার করা হয়েছে।”

Advertisement

ওই কেন্দ্রের নিজস্ব ঘর নেই। খানাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরের গুদামঘরের একটি জায়গায় রান্না হয়। এখন স্কুল বন্ধ থাকায় বাইরের চত্বর জঙ্গলে ভরে গিয়েছে। ধনেখালির সিডিপিও আলফায়েদ আনসারি বলেন, “জঙ্গল পরিষ্কার হয়ে যাবে। সহায়িকা ছিলেন না বলে এ দিন রান্না হয়নি। তিনি হাসপাতালথেকে ফিরেছেন। সোমবার যথারীতি রান্না হবে।’’

এ রকমই ভগ্নদশা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি প্রচুর অভিযোগ। খানাকুলের ঘোষপুর পঞ্চায়েতের ঘোষপুর কাজিপাড়া ১৮১ নম্বর কেন্দ্রটিরও নিজস্ব ঘর নেই। মসজিদের একটি অব্যবহৃত জায়গায় চলছে। ওই কেন্দ্রের কর্মী অষ্টরানি মাইতির অভিযোগ, “ছাউনির অনেকটা উড়ে গিয়েছে। বাকি টিন আলগা হয়ে দুলছে। দুর্ঘটনার আশঙ্কায় শিশুদের এখানে আসতে মানা করেছি। রান্নার মালপত্র রাখতে হয় লোকের বাড়িতে। সেখানে উপভোক্তা ১০৫ জন।

পঞ্চায়েত প্রধান শেখ হায়দার আলির অভিযোগ, “এলাকার ২৮টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের মধ্যে ১৩টির বেহাল দশা।”

এ রকমই, গোঘাটের মথুরা পূর্বপাড়ার ১৮১ নম্বর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র গ্রামের পরিত্যক্ত একটি ক্লাবে চলছে। ভাঙা টিনের ছাউনি। বর্ষায় বা বৃষ্টি হলে ছাতা আড়াল দিয়ে রান্না হয়। চতুর্দিকে বনবাদাড়। নিরাপত্তার আশঙ্কায় সেখানে শিশুদের পাঠানো হয় না বলে জানান পঞ্চায়েত সদস্য অশোক রায়। আরামবাগের বাতানল পঞ্চায়েতের উত্তর নারায়ণপুরের ১১৯ নম্বর কেন্দ্রের কর্মী মুনমুন মাহিন্দার দে’র অভিযোগ, “মেঝে-দেওয়াল সব ফাটা। মেঝের গর্তে থেকে সাপ বেরোয়। তটস্থ থাকতে হয় সব সময়।”

পশ্চিমবঙ্গ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী এবং সহায়িকা সংগঠনের হুগলি জেলা সম্পাদিকা রীতা মাইতির অভিযোগ, “ভগ্নদশা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছি আমরা। কর্মরত অবস্থায় মারা গেলে সরকারি কোনও সহায়তার ব্যবস্থা নেই। বিমাও নেই। আমাদের যথাযথ সুরক্ষা-সহ কর্মজীবনের যাবতীয় সুনিশ্চয়তার জন্য জেলা প্রশাসনে আবেদন করেছি।”

জেলার অনুমোদিত ৬৭০৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৩৪১টির নিজস্ব ঘর নেই জানিয়ে নারী ও শিশু উন্নয়ন ও সমাজকল্যাণ দফতরের এক কর্তা বলেন, “কর্মীদের আবেদনের ভিত্তিতে বনজঙ্গল সাফাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার পঞ্চায়েতগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। ছাউনি ইত্যাদি সংস্কারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আপতত ছাউনির জন্য ত্রিপলের ব্যবস্থা হয়েছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement