মোশারফ হোসেন (বাঁ দিকে)। পরিবারের সঙ্গে জয়ন্ত লাহা। —নিজস্ব চিত্র।
ছোট থেকে পাড়া-পড়শির চোখের সামনে বড় হয়েছেন তিনি। তিনি ইসরোতে চাকরি করেন, জানা ছিল তাও। কিন্তু, জয়ন্ত লাহার প্রকৃত কর্মকাণ্ড হুগলির উত্তরপাড়ার বি কে স্ট্রিটে প্রতিবেশীদের অগোচরেই ছিল! চন্দ্রযান ৩-এর নেভিগেশন বা ক্যামেরা সিস্টেমের মুখ্য ভূমিকায় রয়েছেন জয়ন্ত, এই খবর শুনে তাঁরা যুগপৎ বিস্মৃত এবং আনন্দিত। খুশিতে ভাসছে ওই পরিবার। ছেলেকে হাতের সামনে না পেয়ে বাবা-মাকেই অভিনন্দন জানানোর ধুম পড়েছে।
স্ত্রী এবং দুই ছেলেকে নিয়ে বছর সাঁইত্রিশের জয়ন্ত বেঙ্গালুরুতে থাকেন। দুর্গাপুজোর সময় উত্তরপাড়ার বাড়িতে আসেন। জয়ন্তের বাবা প্রশান্ত লাহা কেন্দ্রীয় সরকারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী। মা চন্দনা গৃহবধূ। তিনি জানান, ছেলে ছোট থেকেই পড়াশোনায় ভাল ছিলেন। আঁকতে ভালবাসতেন। চন্দ্রযান চাঁদের মাটি ছোঁয়ার পরে ছেলের সঙ্গে কথা হয়নি। তবে, বৌমা ফোনে জানিয়েছেন, বুধবার রাত ৩টে নাগাদ জয়ন্ত বাড়ি ফেরেন। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় বেরিয়ে যান।
বাবার কথায়, ‘‘জয়ন্ত এমন মিশনে যুক্ত, সত্যিই খুব আনন্দ হচ্ছে। চাইব, আগামী মিশনেও সে যুক্ত থাকার সুযোগ পাবে, আরও সাফল্য পাবে।’’
বাড়ির লোকেরা জানান, উত্তরপাড়া গভর্নমেন্ট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০৫ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন জয়ন্ত। হাওড়ার শিবপুর বিই কলেজ থেকে বি-টেক পাশ করেন। ইসরোয় যোগ ২০০৯ সালে। চন্দ্রযান-২ কর্মকাণ্ডেও যুক্ত ছিলেন। কর্মরত অবস্থায় ২০১৮-’১৯ সালে খড়্গপুর আইআইটি থেকে এম-টেক পাশ করেন।
দেশের এই সাফল্যের পিছনে রয়েছেন তিরুঅনন্তপুরমে ইসরোর বিক্রম সারাভাই স্পেস সেন্টারে সিনিয়র প্রযুক্তিবিদ মোশারফ হোসেনও। মোশারফের বাড়ি আদতে বীরভূমের মুরারইয়ের বিলাসপুর গ্রামে। ছাত্রাবস্থায় কয়েক বছর তিনি হুগলির পান্ডুয়ায় ছিলেন। বৃহস্পতিবার ফোনে তিনি জানান, পান্ডুয়ায় দাদার শ্বশুরবাড়ির এলাকায় ঘরভাড়া নিয়ে থাকতেন। এখানে শশীভূষণ সাহা উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। ১৯৯২ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন এখান থেকেই। তার পরে সাঁইথিয়ার অভেদানন্দ কলেজ থেকে পদার্থবিদ্যায় অনার্স করে বিশ্বভারতী থেকে এমএসসি পাশ করেন। পরে দিল্লি আইআইটি থেকে এম-টেক এবং পিএইচডি। শশীভূষণ সাহা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মানসকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মোশারফ খুব ভাল ছাত্র ছিল। কৌতুহলী ছিল। ওর সাফল্যে শিক্ষক হিসেবে গর্ববোধ করছি।’’
চন্দ্রযান-৩ অবতরণ উপলক্ষে মোশারফকে বেঙ্গালুরুতে আসতে হয়েছে। তিনি এই অভিযানের প্রজেক্ট ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত। তাঁর দায়িত্বে আছে ল্যান্ডার বিক্রমের বেশ কয়েকটি পে-লোড। যারা আগামী কয়েক দিন ধরে চাঁদের বুক থেকে নানা বৈজ্ঞানিক তথ্য সংগ্রহ করবে। চন্দ্রযান-২-এও একই দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
বৃহস্পতিবারেও সকাল থেকে কাজে ব্যস্ত মোশারফ। ফোনে আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘দীর্ঘদিনের পরিশ্রমের ফসলের সাফল্যে আমরা সকলে খুশি।’’ তিরুঅনন্তপুরমেই স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে থাকেন মোশারফ। সেখান থেকে ফোনে স্ত্রী নুসরত বেগম বলেন, ‘‘চন্দ্রযান-২ ভেঙে পড়ায় খুব কষ্ট পেয়েছিল। চন্দ্রযান-৩ সফল হবে কি না তা নিয়েও চিন্তায় ছিল। সাফল্য মিলতেই আমরা সকলে আনন্দে
মেতে উঠেছিলাম। তবে এখনও ভীষণ চাপ আছে।’’
তথ্য সহায়তা: অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় ও সুশান্ত সরকার।