সবুজদ্বীপে পড়ে রয়েছে কাটা গাছ। নিজস্ব চিত্র।
পর পর দু’বছর দুই ঘূর্ণিঝড় (আমপান-ইয়াস) হুগলির জেলার বহু সবুজ ধ্বংস করে দিয়েছে। তারপরেও এক শ্রেণির মানুষের হুঁশ ফেরেনি। জেলার নানা প্রান্তে দেদার কোপ পড়ছে বড় বড় গাছে। তালিকায় ইউক্যালিপটাস, মেহগনি, শিরীষ, বাবলা— কিছুই বাকি নেই। পাচার হয়ে যাচ্ছে কাঠ।
পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশকর্মীরা। তাঁরা মনে করছেন, লাগামহীন ভাবে সবুজ ধ্বংস হলে পরিবেশে ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। তাঁদের অভিযোগ, কোথাও কোথাও শাসক দল বা প্রশাসনের লোকই সেই বেনিয়মে জড়িত। কোথাও সব জেনেও পঞ্চায়েত, পুরসভা, প্রশাসন মুখ বুজে রয়েছে।
বছর দুয়েক আগে জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, বলাগড়ের সবুজদ্বীপকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এরপর ওই দ্বীপকে ঢেলে সাজা শুরু করে রাজ্যের পর্যটন দফতর। কয়েক বছর আগে সবুজদ্বীপের একাংশে একটি বেসরকারি সংস্থা একটি প্রকল্পের কাজে হাত দিলেও তা বন্ধ হয়ে যায়। সেটি নিয়ে মামলা চলছে। প্রায় ১০ একর দ্বীপের সেই অংশে ঘন জঙ্গলে প্রচুর আকাশমণি, বাবলা, সেগুন গাছ রয়েছে। ওই অংশে গাছ কাটা চলছে বলে অভিযোগ।
সংশ্লিষ্ট সোমরা-২ পঞ্চায়েতের এক বাসিন্দার অভিযোগ, ‘‘শাসক দলের এক মাথার নেতৃত্বেই এ সব হচ্ছে। ওঁর একটা ট্রলার আছে। ১০টা ট্রলার লাগিয়ে সবুজদ্বীপের গাছ কাটা হয়েছে কয়েক দিন আগে। কাটা গাছ নদিয়ার চাকদহ, হুগলির গুপ্তিপাড়া, খামারগাছির কাঠ-চেরাই কারখানায় চলে গিয়েছে। পুলিশ-প্রশাসন, পঞ্চায়েত সব জেনেও চুপ। আমরা নিরুপায়।’’ পর্যটনমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন বলেন, ‘‘বিষয়টি আমার কানেও এসেছে। দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব।’’
জাঙ্গিপাড়ার রাধানগরে পঞ্চায়েতের ঠিকাদারিতে যুক্ত এক ব্যাক্তি গাছ কাটার সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ। এক গ্রামবাসীর আক্ষেপ, ‘‘কোন সাহসে অভিযোগ করব? পঞ্চায়েত, ব্লক প্রশাসনের মাথাদের সঙ্গেই তো ওই ঠিকাদারের ওঠাবসা।’’ আরামবাগের গৌরহাটির এক বাসিন্দার অভিযোগ, ‘‘এখানে গাছ কাটা হয়েছে। গাছের যে সরকারি মূল্য হওয়া উচিত, তার অনেক কম টাকা জমা দেওয়া হয়েছে দফতরে। পঞ্চায়েত, বন দফতর বা প্রশাসনের মদত ছাড়া এই অনিয়ম হয়।’’
গত রবিবার গোঘাটের ফুলুইতে একদল গ্রামবাসী গোঘাট-২ পঞ্চায়েত সমিতির বন কর্মাধ্যক্ষ স্বপন সাহানার বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে গাছ কেটে বিক্রির অভিযোগ তুলেছিলেন। তাতে সায় দেন সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতের উপপ্রধান প্রসেনজিৎ ঘোষাল। স্বপন বলেছিলেন, “বেনিয়ম হয়নি। ঝড়ে পড়ে যাওয়া গাছ চুরির আশঙ্কায় কেটে রাখা হয়েছে। ১৮০টি গাছ কাটার জন্য বন দফতরের অনুমতি নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।” বুধবার অপর এক দল গ্রামবাসী উপপ্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন, গত ৩০ এপ্রিল ঝড়ে পড়া কয়েকশো গাছ তিনি বেআইনি ভাবে বিক্রি করেছেন। স্বপন বলেন, ‘‘অভিযোগ সত্যি। ব্লক প্রশাসন, বন দফতরে তদন্তের দাবি জানিয়েছি।” উপপ্রধানের দাবি, ‘‘নিজে ফেঁসে গিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করিয়েছেন বন কর্মাধ্যক্ষ।” বিডিও দেবাশিস মণ্ডল জানান, দু’পক্ষের অভিযোগ খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হবে।’ বন দফতরের আরামবাগ রেঞ্জ অফিসার শুভঙ্কর সিকদার জানান, একটি অভিযোগ (স্বপনের বিরুদ্ধে) পেয়েছেন। আইনানুযায়ী জরিমানা ধার্য করা হবে। অন্য অভিযোগটি পেলে তারও অনুসন্ধান করে পদক্ষেপ করা হবে।
তথ্য সহায়তা: পীযূষ নন্দী।