আদালতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ধৃত পরিতোষ মাজিকে। ছবি: সুব্রত জানা
গত বছর দুর্গাপুজোর অষ্টমীর দিন বাড়ির কিছুটা দূরে গুলি করে খুন করা হয়েছিল বাগনানের বিজেপি নেতা কিঙ্কর মাজিকে। প্রায় আড়াই মাস বাদে ওই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত, কিঙ্করের পড়শি পরিতোষ মাজিকে গ্রেফতার করল পুলিশ।
মঙ্গলবার রাতে বাগনানের নুন্টিয়ায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে লুকিয়ে থাকা পরিতোষকে ধরা হয়। এতদিন সে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল বলে তদন্তকারীরা জানান। ধৃতকে বুধবার উলুবেড়িয়া মহকুমা আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তাকে ১৪ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। এই নিয়ে ওই খুনের ঘটনায় মোট তিন জনকে গ্রেফতার করা হল।
হাওড়া জেলা (গ্রামীণ) পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। খুনে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের চেষ্টা হচ্ছে। ওই ঘটনায় আরও কেউ জড়িত কিনা, তা-ও জানার চেষ্টা চলছে।’’
কিঙ্করের বাড়ি বেনাপুর মাজিপাড়ায়। তিনি বিজেপির বাগনান ৫ নম্বর মণ্ডলের সহ-সভাপতি ছিলেন। পেশায় ছিলেন ফুল ব্যবসায়ী। গত বছর অষ্টমীর রাতে ফুল বিক্রি করে তিনি বাড়ি ফিরছিলেন। বেনাপুর মাজিপাড়ায় তিন দুষ্কৃতী মোটরবাইকে চড়ে এসে তাঁর পথ আটকায়। কিঙ্করকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় তারা। গুলি কিঙ্করের পেটে লাগে। গুলির শব্দে স্থানীয় বাসিন্দারা বেরিয়ে পড়েন। ঘটনাস্থল থেকে ছোট্টু মাইতি নামে এক যুবককে ধরে ফেলেন তাঁরা। তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
জখম কিঙ্করকে প্রথমে উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় পরে তাঁকে কলকাতার একটি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানো হয়। গত ২৮ অক্টোবর সেখানেই তিনি মারা যান। পরে আরও একজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
তৃণমূলের লোকজনই কিঙ্করকে খুন করেছে, এই অভিযোগে এবং দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে বিজেপি আন্দোলনে নামে। বাগনানে ১২ ঘণ্টার বন্ধ ডাকা হয়। বিজেপির রাজ্য নেতারা বাগনান থানার সামনে বিক্ষোভ দেখান। প্রথম থেকেই অভিযোগ মানেনি তৃণমূল। পড়শির সঙ্গে বিবাদের জের ওই খুন বলে দাবি করেছিল তারা।
পরিতোষ গ্রেফতারের পরে বিজেপির রাজ্য নেতা অনুপম মল্লিক বলেন, ‘‘পুলিশ শাসক দলের চাপে পরিতোষকে গ্রেফতার করতে গড়িমসি করছিল। তৃণমূল কর্মী হওয়ায় তাকে আড়াল করার চেষ্টা করছিল। কিন্তু বিজেপির লাগাতার আন্দোলনের ফলে পুলিশ গ্রেফতার করতে বাধ্য হয়েছে।’’
পক্ষান্তরে, বাগনানের তৃণমূল বিধায়ক অরুণাভ সেনের দাবি, ‘‘ওই খুনের সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। পরিতোষ কোনও দিনই তৃণমূলের কর্মী ছিল না। ও দুষ্কৃতী। আমরা প্রথম থেকেই বলছিলাম, প্রশাসনের উপর আস্থা রাখতে। প্রশাসন তার কাজ করেছে। বিজেপি এটা নিয়ে রাজনীতি করছে।’’