শ্যামপুরের খাজনাবাহালা হাই মাদ্রাসা। নিজস্ব চিত্র।
আগামী ১৬ নভেম্বর থেকে স্কুল-কলেজের সঙ্গে দরজা খুলছে হাই মাদ্রাসাগুলি। কোভিড বিধি মেনে স্কুল পরিষ্কার করে পঠন-পাঠন শুরুর কথা বলা হয়েছে। এর জন্য স্কুলগুলিকে ১৬ হাজার টাকা করে অর্থ সাহায্য দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু হাই মাদ্রাসাগুলি এই সহায়তা থেকে বঞ্চিত। তাদের একটা পয়সাও দেওয়া হয়নি বলে বিভিন্ন মাদ্রাসার পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। তবে তাদের দাবি, টাকা না মিললেও মাদ্রাসা খোলার জন্য সব রকমের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
এখন হাই মাদ্রাসাগুলিতেও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ানো হয়। হাওড়া জেলায় যে ৩৫টি হাই মাদ্রাসা আছে, দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় সেগুলির শৌচাগার অপরিচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছে। এছাড়া শ্রেণিকক্ষগুলিও পরিষ্কার করে জীবাণুমুক্ত করার প্রয়োজন আছে। যে সব ছাত্র-ছাত্রী মাস্ক পরে আসবে না তাদের মাদ্রাসার তরফে মাস্ক বিলি করার কথাও জানিয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা দফতর।
কয়েকদিন আগে জেলার বিভিন্ন ব্লকের হাইস্কুল এবং হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকদের ডাকা হয়। সেখানে স্কুলগুলিকে টাকা দেওয়ার কথা জানিয়ে দেওয়া হলেও মাদ্রাসার ব্যাপারে মুখে কুলুপ আঁটেন ব্লক প্রশাসনের কর্তারা। এ বাপারে ক্ষুব্ধ মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকরা।
শ্যামপুরের খাজনাবাহালা হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তি করানোর সময়ে আমরা সরকার নির্ধারিত উন্নয়ন ফিজ়ের বাইরে একটি পয়সাও নিতে পারি না। এলাকার বহু গরিব পরিবারের সন্তান এখানে পড়ে। মানবিকতার খাতিরে
তাদের কাছ থেকে কোনও মাইনে নেওয়া হয় না। এই অবস্থায় আমাদের নিজস্ব তহবিল তলানিতে ঠেকেছে। কী ভাবে জীবাণুমুক্তকরণ বা মাস্ক কেনার টাকা জোগাড় করব তা নিয়ে
চিন্তায় আছি।’’
হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকদের একটা বড় অংশের আরও অভিযোগ, স্কুলগুলি বছরে ৭০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ‘বিশেষ আর্থিক সহায়তা’ পায়। কিন্তু হাই মাদ্রাসাগুলি সেই টাকাও পায় না। মনিরুল বলেন, ‘‘আমরা যদি ওই বিশেষ আর্থিক সহায়তা পেতাম তাহলে সেখান থেকে টাকা নিয়ে শ্রেণিকক্ষগুলিকে জীবাণুমুক্ত করা যেত।’’
শিক্ষকদের সংগঠন এবিটিএ-এর অভিযোগ, শুধু হাওড়া জেলা নয়। রাজ্য জুড়ে যে ৬০০ হাই মাদ্রাসা আছে সকলের প্রতিই সরকার এমন ‘বৈষম্যমূলক’ আচরণ করছে। সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক সুকুমার পাইন বলেন, ‘‘স্কুলগুলির মতো একইভাবে পঠন-পাঠন চলে হাই মাদ্রাসাগুলিতেও। অথচ স্কুলগুলিকে টাকা দেওয়া হল। হাই মাদ্রাসাগুলিকে তা দেওয়া হল না।’’ সংগঠনের
পক্ষ থেকে তাঁরা মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরকে এ বিষয়ে একাধিকবার চিঠি দিয়েছেন বলে সুকুমারবাবুও জানান।
মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের অধিকর্তা আবিদ হোসেন অবশ্য জানান, হাই মাদ্রাসাগুলিকেও জীবাণুমুক্ত করা এবং মাস্ক কেনার টাকা দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘‘এ বাবদ কত টাকা লাগবে তার বিস্তারিত হিসাব হাই মাদ্রাসাগুলিকে দিতে বলা হয়েছে। সেই ফাইল অর্থ দফতরে পাঠানো হবে।’’
‘বিশেষ আর্থিক সহায়তা’-র বিষয়ে অধিকর্তা জানান, স্কুলগুলিকে ‘রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযান’ প্রকল্পের খাতে কেন্দ্র প্রতি বছর এই টাকা দেয়। হাই মাদ্রাসাগুলি এই প্রকল্পের আওতায় নেই। তাই তারা এই টাকা পায় না। তবে তিনি বলেন, ‘‘হাই মাদ্রাসাগুলি আবার এমন অনেক বিষয়ে সহায়তা রাজ্য সরকারের কাছ থেকে পায় যেগুলি স্কুলগুলি পায় না।’’