উল্লাস: বক্স বাজিয়ে উৎসব। নিজস্ব চিত্র
খোলা জায়গায় ডিজে বক্স বাজানোর নিষেধাজ্ঞা যে খাতায়-কলমে বন্দি, হুগলির বিভিন্ন প্রান্তে প্রায়ই তার প্রমাণ মেলে। নাগরিক আন্দোলনের চাপে পুলিশ কোথাও কোথাও ডিজে বন্ধ করতে সক্রিয় হয়। অনেক ক্ষেত্রেই অবশ্য পুলিশের হেলদোল থাকে না বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার এমনই অভিযোগ উঠল জাঙ্গিপাড়া এবং হরিপালে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিজ্ঞতা, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার মধ্যেই মাঝরাত পর্যন্ত চলল শব্দের তাণ্ডব। পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি। গত রবিবার জাঙ্গিপাড়াতেও একই পরিস্থিতি হয় বলে অভিযোগ।
হুগলি গ্রামীণ জেলা পুলিশ সুপার আমনদীপ বুধবার বলেন, ‘‘খোঁজনিয়ে দেখা হবে। অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
মঙ্গলবার হরিপালের শ্রীপতিপুরের প্যাচারপাড়ে শ্মশানকালী পুজো হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তারস্বরে ডিজে বাজানো হয়। অতিষ্ঠ হন আশপাশের লোকেরা। পরীক্ষার্থীদের নাজেহাল হতে হয়। স্থানীয় এক মহিলার প্রশ্ন, ‘‘উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার মাঝেও কোনও কিছুর তোয়াক্কা না করে এ ভাবে বক্স বাজানো যায়? থানা, ভিলেজ পুলিশ কারও কোনও দায়িত্ব নেই?’’
গত রবিবার দুপুরে জাঙ্গিপাড়ার আঁটপুরে কালীপুজো উপলক্ষে ডিজে বাজানোর তোড়জোড় চলছিল। পুলিশের দাবি, সেই খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে ডিজে বাজাতেনিষেধ করে দেন উদ্যোক্তাদের। এলাকাবাসীর অভিযোগ, পুলিশের নিষেধ কোনও কাজে আসেনি। সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত শব্দের দৌরাত্ম্য কার্যত অসহনীয় হয়ে উঠেছিল। বিষয়টি নিয়ে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে বাজি ও ডিজে বক্স বিরোধী মঞ্চের তরফে। থানা সূত্রের বক্তব্য, ওই জায়গায় গিয়ে বক্স বাজাতে নিষেধ করা হয়েছিল। পরে বেজেছে কি না, খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।
গত কয়েক বছরে হুগলি শিল্পাঞ্চলে এবং গ্রামীণ এলাকায় ডিজে-র তাণ্ডব রুখতে ধারাবাহিক ভাবে নাগরিক আন্দোলন চলছে। কোনও কোনও সময় পুলিশ সচেতনতা প্রচার করেছে। তাতে ফলও মিলেছে। অভিযোগ, পুলিশের এই প্রয়াস সব সময় থাকে না। অভিযোগ পেলে পুলিশ বক্স বন্ধ করেই ক্ষান্ত থাকে। নিষিদ্ধ বক্স বাজেয়াপ্ত বা ধরপাকড় করা হয় না। ভুক্তভোগী অনেকেই মনে করেন, আইন অনুযায়ী কড়া ব্যবস্থা নিলেই এই প্রবণতা বন্ধ হবে। পুলিশ তা না করায় তাঁরা বিস্ময় প্রকাশ করেন। প্রসঙ্গত, উচ্চ মাধ্যমিকের মধ্যেই দিন কয়েক আগে পাশের জেলা হাওড়ার একটি কলেজেও তারস্বরে ডিজে বাজে বলে অভিযোগ।
নাগরিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত এক ব্যক্তি বলেন, ‘‘মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক শুধু নয়, মানুষের অসুবিধা করে ডিজে যখনই বাজানো হোক, পুলিশ কড়া ব্যবস্থা নেবে নাকেন? পুলিশ শুধুমাত্র কঠোর ব্যবস্থা তখনই নেয়, যখন নিজেরা আক্রান্ত হয়। অথচ, শব্দের তাণ্ডবে শিশু থেকে বয়স্ক— সবাইকেই প্রতিনিয়ত আক্রান্ত হতে হচ্ছে।’’