বোতলে দূষিত জল ভরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন মল্লিকপাড়া এলাকার বাসিন্দারা। বুধবার, হাওড়ায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
পুরসভার সরবরাহ করা পানীয় জল থেকে কখনও বেরোচ্ছে পোকামাকড়, কখনও আবার জলই আসছে কালো এবং দুর্গন্ধযুক্ত। সেই জল ব্যবহার করে ইতিমধ্যেই গত ১৫ দিনে অন্তত ৫০ জন বাসিন্দা আন্ত্রিক বা জন্ডিসে কাবু হয়েছেন। এখনও প্রতিদিন কেউ না কেউ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাওড়া পুরসভার ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা রীতিমতো আতঙ্কিত।
গত এপ্রিল মাসে গরমের শুরুতেও এই একই পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলেন হাওড়া পুরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। দু’মাসের ব্যবধানে ফের সেই অবস্থার পুনরাবৃত্তি হল ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের আচার্যপাড়া লেন, মল্লিকপাড়া লেন, নেপাল সাহা লেন-সহ মধ্য হাওড়ার বিভিন্ন এলাকায়। পুরসভার ধারণা, ওই এলাকায় কোথাও নর্দমা সংলগ্ন পুরসভার পাইপলাইন ফুটো হয়ে, দূষিত জল ঢুকে এই সমস্যার সৃষ্টি করেছে। সমস্ত পাইপলাইন পরীক্ষা করে দেখে তবেই এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানিয়েছে পুরসভা।
এলাকার বাসিন্দাদের অবশ্য অভিযোগ, গত ১৫ দিন ধরে এই অবস্থা চললেও পুরসভার তরফে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বুধবার পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে, এলাকার বাসিন্দারা একজোট হয়ে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এসে হাওড়া পুরসভার বিরুদ্ধে দফায় দফায় বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। এ দিন প্রথমে এলাকার মহিলারা ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের প্রাক্তন পুরপ্রতিনিধি তথা মেয়র পারিষদ শ্যামল মিত্রের বাড়িতে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। এর পরে দুপুরে পুরসভা থেকে স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা এলাকায় গিয়ে জলের নমুনা সংগ্রহ করতে গেলে তাঁদের ঘেরাও করে রাখেন বাসিন্দারা। খবর পেয়ে এলাকার প্রাক্তন পুরপ্রতিনিধি ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
শ্যামল বলেন, ‘‘এলাকায় পানীয় জলের দূষণ সম্পর্কে গত ১৬ তারিখ পুরসভার চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তীকে লিখিত ভাবে জানিয়েছি। কিন্তু তার পরেও এত দিন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আজ পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর থেকে জলের নমুনা নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’’
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন দুপুরে স্বাস্থ্য দফতরের কয়েক জন আধিকারিক ও কর্মী ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের মল্লিকপাড়ায় যান। এলাকায় পৌঁছতেই বাসিন্দারা উত্তেজিত হয়ে তাঁদের ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। দুপুরে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখা যায়, এলাকাবাসীরা পোকা ভর্তি পানীয় জলের বোতল নিয়ে পুর স্বাস্থ্যকর্মীদের ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে মহিলাদের সংখ্যাই বেশি। বিক্ষোভকারী ববিতা চক্রবর্তী, রীতু দলুই, প্রমা প্রধানেরা বলেন, ‘‘পুরসভার পানীয় জলে যে দূষণ হয়েছে, তা আমরা বুঝতে পারি অনেক দিন পরে। তত দিনে আমাদের অনেকের আন্ত্রিক বা জন্ডিস রোগ ধরা পড়েছে। কিন্তু পুরসভা সব জেনেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। আমরা আতঙ্কে রয়েছি।’’
এ নিয়ে পুরসভার চেয়ারপার্সন বলেন, ‘‘খবর আসার পরেই স্বাস্থ্য় দফতরের আধিকারিকদের ওই জায়গায় পাঠানো হয়েছিল। জলে দূষণ হয়েছে কি না, তা সঠিক ভাবে জানতে জলের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ঠিক কোথা থেকে জলে দূষণ ছড়াচ্ছে, তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।’’