লতা মঙ্গেশকরের স্মৃতিচারণায় স্বামী সুবীরানন্দ। —ফাইল চিত্র।
সেটা ৯০-এর দশক। সাতসকালে বেলুড় মঠে এসে উপস্থিত হয়েছিলেন লতা মঙ্গেশকর। মঠের লনে তাঁকে গুনগুন করে গাইতে দেখেছিলেন অনেকেই। সেই স্মৃতির কথা তুলে ধরলেন বেলুড় মঠ এবং রামকৃষ্ণ মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুবীরানন্দ।
রবিবার প্রয়াত হয়েছেন শিল্পী। সেই খবর পাওয়ার পর সংবাদমাধ্যমের সামনে ৯০-এর দশকের শুরুর দিকে লতার বেলুড় মঠ সফরের স্মৃতিচারণা করেন স্বামী সুবীরানন্দ। সে দিনের কথা তুলে ধরে তিনি জানান, এক দিন ভোরবেলায় বেলুড় মঠের এক সন্ন্যাসী খেয়াল করেন এক মহিলা আটপৌরে শাড়ি পরে মূল মন্দিরের পূর্ব দিকে ঘুরে বেড়াচ্ছেন আর গুনগুনিয়ে গাইছেন। ওই সন্ন্যাসী সুরসম্রাজ্ঞীকে দেখে চিনতে পারেন। তার পর তাঁকে মন্দির পরিদর্শন করার জন্য আহ্বান জানান। তখন লতাজি তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মহারাজ স্বামী ভূতেশানন্দজির সঙ্গে দেখা করতে চান।
সে দিনের কথা বলতে গিয়ে স্বামী সুবীরানন্দ জানিয়েছেন, দু’জনের সাক্ষাতের সময় লতাজিকে চেয়ারে বসতে বলা হলেও তিনি মেঝের গালিচায় প্রেসিডেন্ট মহারাজের পদতলে বসেন এবং তাঁকে প্রণাম করেন। প্রেসিডেন্ট মহারাজ সেই সময় তাঁকে মানবসেবায় নিজেকে উৎসর্গ করার বার্তা দেন। তাঁর কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেন। স্বামী সুবীরানন্দের বক্তব্য, আপ্লুত লতাজি সেই সময় প্রেসিডেন্ট মহারাজকে গানও শোনাতে চান। কিন্তু মৃদু হেসে প্রেসিডেন্ট মহারাজ সে দিনের জন্য তাঁকে নিরস্ত করেন। স্বামী সুবীরানন্দের কথায়, লতাজি তখন তাঁকে প্রণাম করে জানান, তিনি পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুন প্রেসিডেন্ট মহারাজ গান শুনতে চাইলে তিনি সব ফেলে বেলুড় মঠে চলে আসবেন।
লতার স্মৃতিচারণা করেছেন সুরকার, গীতিকার এবং গায়ক দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায়ও। হাওড়ার লক্ষণ দাস লেনের বাসিন্দা দীপঙ্করের কথায়, ‘‘কলকাতায় একটি অনুষ্ঠানে এসেছিলেন লতা। সেই অনুষ্ঠানের রিহার্সালে গিয়ে আলাপ হয় তাঁর সঙ্গে। সেখানে ছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ভি বালসারার মতো ব্যক্তিত্বরা। সেই রিহার্সালে জনপ্রিয় ‘ম্যায়নে পেয়ার কিয়া’ ছায়াছবির একটি গান বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই গান কিছু ক্ষণের মধ্যেই রিহার্সালে এবং পরে মঞ্চেও গেয়েছিলেন লতাজি। তবে তা রেকর্ড করা হয়নি। তাই আজও সেই গান প্রকাশ্যে আসেনি।’’ দীপঙ্করের আক্ষেপ, ‘‘আমার লেখা গান এবং সুরে গলা মিলিয়েছেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এবং মান্না দের মতো শিল্পীরা। কিন্তু লতাজিকে দিয়ে গান গাওয়ানোর ইচ্ছা ছিল। তবে তা আর পূরণ হল না।’’