লক্ষ্মীপুজোর মণ্ডপের সামনে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ লেখা শ্লোগান। বাগনানের জোকা গ্রামে। নিজস্ব চিত্র।
ঝাঁ চকচকে মণ্ডপ। আলোর রোশনাইয়ে চোখ ধাঁধিয়ে যাওয়ার উপক্রম। মণ্ডপের সামনে করা হয়েছে প্রায় ছ’ফুট দৈর্ঘের কাপড়ের বেদি। তাতে ঝোলানো হয়েছে পোস্টার। সেখানে ছবি আছে এক যন্ত্রণাক্লিষ্ট নারীর মুখের। সেই পোস্টারে লেখা, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’। এ ভাবেই প্রতিবাদের মধ্যে লক্ষ্মীকে এ বছর বরণ করল জোকা।
এলকাটি মূলত কৃষিপ্রধান। দামোদরের ধারে অবস্থান। দামোদরের চরে ফসল ফলিয়ে এলাকার সিংহভাগ মানুষ জীবিকা নির্বাহ করেন। তাঁরাই আবার মেতে ওঠেন লক্ষ্মীপুজোর আনন্দে। এই গ্রামে তেইশটি পুজো হয়। পুজোর জাঁক হার মানায় দুর্গাপুজোকে। সে কারণেই খালনা ‘লক্ষ্মীর গ্রাম’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। গোটা গ্রাম সাজানো হয় আলোকমালায়। কোজাগরী পূর্ণিমার চাঁদের আলোকেও যেন ম্লান করে দেয় পুজো কমিটিগুলির আলোকসজ্জা। লক্ষাধিক দর্শনার্থী আসেন।
অন্য বারের সঙ্গে এ বারের পুজোর ফারাক গড়ে দিয়েছে একাধিক মণ্ডপে আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদী স্লোগান। শীতলামাতা সঙ্ঘের মণ্ডপে দেখা গেল, আর জি কর-কাণ্ডে প্রতিবাদের ছবি। পুজো উদ্যোক্তাদের বক্তব্য, ‘‘এই পুজো দেখতে আসেন হাজার হাজার মানুষ। তাঁদের বঞ্চিত করা যায় না। কিন্তু আর জি কর-কাণ্ডকেও এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই।’’ ক্লাব সম্পাদক সুদীপ সাঁতরা বলেন, ‘‘প্রতিবাদের বেদিতে প্রদীপ জ্বলবে। এ ভাবেই আমরা ওই মহিলা চিকিৎসকের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করব ও ন্যায় বিচার চাইব।’’
শুধু এই ক্লাব নয়, একাধিক পুজো মণ্ডপে দেখা গেল প্রতিবাদ ও ন্যায় বিচার চেয়ে স্লোগান দেওয়া ব্যানার। তাদের মধ্যে আছে ‘ক্লাব সৃষ্টি’-র পুজো। এই পুজোও জাঁকজমকপূর্ণ। থিম, আলোকসজ্জা ও প্রতিমা দেখার মতে। সেখানেও মণ্ডপের বাইরে ঝোলানো আছে কালো ব্যানার। সাদা রঙে লেখা আছে ‘উই ডিমান্ড জাস্টিস’ স্লোগান। ক্লাবের পক্ষে মলয় গুছাইত বলেন, ‘জোকার লক্ষ্মীপুজোর জাঁক একটা ধারাবাহিক ঐতিহ্য। সেই ঐতিহ্য রক্ষার দায় আমাদের যেমন আছে তেমনই সাম্প্রতিক ঘটনার অভিঘাত আমরা অগ্রাহ্য করতে পারি না। ফলে উৎসবের মধ্যেও নারী নির্যাতনে মধ্যেও আমাদের প্রতিবাদ থাকবে।’’